শনিবার , ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

” ইতিহাস এড়িয়ে যাওয়া নয়, জানতে হবে, চর্চা করতে হবে “

প্রকাশিত হয়েছে -

আমি দেখেছি আমাদের মধ্যে গত একদশক ধরে একটি স্বাভাবিক প্রবনতা বিরাজ করছে, রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে আমরা এড়িয়ে যায় বা রাজনৈতিক আলাপচারিতা থেকে আমরা দূরে থাকতে চাই ।

এর কিছু যৌক্তিক কারনও আছে, তন্মধ্যে অন্যতম একটি আমাদের এই অঙ্গনটি অনেকটাই কাদা ছুড়াছুড়িতে লিপ্ত , নীতিহীন এবং সংঘাতপূর্ন ৷

এজন্য অনেকেই ভেবে থাকেন, ঝামেলার মধ্যে গিয়ে লাভ কি, কি বলতে কি হয়ে যাবে! দূরেই থাকি, নিরাপদে থাকি । এই ধারনার বিপরীত যুক্তিও দেখানো যাবে, আমার উদ্দেশ্য সেদিকে আলোকপাত করা নয় ।

Advertisements

রাজনীতি সবাই করবে এমন না । কিন্তু এটার সাথে আরেকটি প্রবনতা দিন দিন বেড়েই চলছে, তা হচ্ছে ইতিহাস নিয়ে আমরা কথাও বলতে চাই না ।

আমাদের দেশ, উপমহাদেশে কি ঘটে গেছে, ইতিহাসের মহানায়করা কারা ছিলেন, বেঈমান কারা ছিলো মোটকথা কার অবদান কি ছিলো এবং কোন কোন ঘটনাচক্রে আজকে আমরা এই ভূখন্ডে দাড়িয়ে এসব নিয়ে আমরা কথা বলি না । কেউ বলতে চাইলেও আমরা পছন্দ করি না কিংবা এড়িয়ে যাই ।

আমি এই প্রবনতার ঘোর বিরোধী । আমার কথায় বা লিখায় অনেকেই প্রশ্ন করেন, ভাইয়া আপনি ইতিহাসের ছাত্র কি না! আমি পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র এবং সাবজেক্টের বাইরে আমি ইতিহাসের ছাত্র । ইতিহাস পড়তে আমার ভালো লাগে ।

কাদের আত্মত্যাগে আজ আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারছি, এটা আমি জানবো না! এটা নিয়ে কথা বলবো না! কারা এই মাটির সাথে যুগে যুগে বেঈমানী করে এসেছে! আমি তাদের চিনে রাখবো না! আমি তাদের কথা বলবো না!

ইতিহাসবিমুখতা ইতিহাসবিকৃতির পথ খুলে দেয়। বলবো, বলতে হবে । ইতিহাস নিয়ে কথা না বললে, ইতিহাসের সত্যকে নিয়ে ঘাটাঘাটি না করলে বুঝবো কিভাবে কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা!

জার্মানির প্রথম চ্যান্সেলর অটোভন বিসমার্কের একটি উক্তি উল্লেখ করা যেতে পারে – ” We learn from history is that no one learns from history “

যদি ইতিহাস নিয়ে কথা না বলা হয়, ইতিহাসকে চেপে রাখা হয়, ইতিহাসের শিক্ষাটা পাবো কিভাবে!

আজ যেকোন একটি বিষয় নিয়ে আমার খুব প্রিয় একজন মানুষের সাথে আমার কথা হয়েছে৷ ডিবেট আমার ভীষন ভালো লাগে, জানতে পারি, জানাতে পারি । তবে, এটাও সত্য অনেকের কাছে অপ্রিয়ও হয়ে যায় ।

আমি মাওলানা ভাসানীকে নিয়ে কথা বলেছিলাম । আমাদের দেশের ইতিহাসে মাওলানা ভাসানী গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিত্ব, তাকে ” মজলুম জননেতা” খেতাব দেয়া হয়েছিলো ।

কিন্তু ৭১ পূর্ব ভাসানী এবং ৭১ পরবর্তী ভাসানীর মধ্যে রয়েছে আকাশ পাতাল ব্যবধান, যেটা আমরা অনেকেই জানতে চাই না । গ্রহন করতে চাই না । কিন্তু ইতিহাস বদলানো যায় না, কৃতকর্ম থেকেই যায় ।

কেউ তার সম্মানের জায়গা থেকে হয়ত বলতে পারে, নেতারা ভুল করলেই তাদের অপমান করতে হবে! দেখুন, নেতা কখনো পুরো বিশ্বের অথবা একটি দেশের বা একটি জাতির সবার হয় না । প্রতিটি নেতার ই সমর্থক রয়েছে, আবার বিরোধীও রয়েছে । আপনাকে দেখতে হবে আপনি তার কোন কাজগুলোকে সমর্থন করবেন, আর কোন কাজগুলোর বিরোধীতা করবেন ।

হিটলারের গোপন বাহিনী ছিলো “গেস্টাপো”, দল ছিলো নাৎসী পার্টি । হিটলারেরও সমর্থক ছিলো, জনপ্রিয়তা ছিলো হোক সেটা কোন গোষ্ঠী বা দলের মাঝে কিন্তু হিটলারকে আমরা কি হিসেবে জানি! ইতিহাস তাকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে ।

নেতাকে নিয়ে কথা বলা না গেলে নুরেমবার্গ বিচার হতো না, ইতিহাসে নায়ক খলনায়ক আলাদা হতো না । অতএব যদি কেউ অন্যায় কৃতকর্ম করে থাকে ইতিহাস তাকে সেভাবেই মনে রাখবে এবং আমরাও সেভাবেই জানবো, পরবর্তী প্রজন্মকে জানাবো ।

কাউকে নিয়ে কথা বলা যাবে না, এটা ইতিহাসের শিক্ষা না । ইতিহাসের বইগুলো ঘাটতে হবে, একটা না, একশটা, একহাজারটা, সত্য উদঘাটন করে সেটা আবার পরবর্তী প্রজন্মের কাছে রেখে যেতে হবে । ইতিহাসবিমুখতা বা এড়িয়ে যাওয়া নয় বরং ইতিহাসের ছাত্র হতে হবে ।

শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন
শিক্ষার্থী
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়