শনিবার , ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

শেরপুরে পাড়া মহল্লায় বাঁশ বেঁধে স্বেচ্ছায় লকডাউনে স্থানীয়রা

প্রকাশিত হয়েছে -

শেরপুরে দুই রোগী করোনা সনাক্ত হওয়ায় সচেতন হয়ে উঠছে কিছু কিছু মহল্লার বাসিন্দারা । ইতিমধ্যে বেশ কিছু পাড়া মহল্লার প্রধান প্রধান সড়কে বাঁশ বেঁধে স্বেচ্ছায় লকডাউনে যাচ্ছে স্থানীয়রা । করোনা ইস্যু শুরু থেকেই জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন অক্লান্ত পরিশ্রম করেও শহরের পরিস্থিতি লকডাউনে নিয়ে আসতে পারলেও গ্রাম পর্যায়ে তা কোন ভাবেই হয়ে উঠতেছিলনা ।

মানবিক পুলিশের শ্লোগান নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে পুলিশ ততটা কঠোর না হয়ে সচেতনেতার দিকেই জোর দিয়েছিল এতদিন। তবে শেরপুরে ইতিমধ্যে করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ায় কঠোর অবস্থানে আইনশৃংখলা বাহীনি । সেই সাথে কিছুটা সচেতন হয়ে উঠেছে স্থানীয় জনতাও ।

গত রাত থেকেই বিভিন্ন এলাকার তরুন সেচ্ছাসেবকরা এলাকাবাসীর সম্মতিতে বন্ধ করে দিতে থাকে নিজ নিজ এলাকায় ঢোকার প্রবেশ পথ। শহরের নবীনগর, গৃদ্দানারায়নপুর, ঝিনাইগাতীর টেংরাখালীমোড়, ঝিনাইগাতীর কালীবাড়ী স্কুলের সামনে নকলার কয়েকটি এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এইধরনের সেচ্ছায় লকডাউন গড়ে তুলতে দেখা গেছে।

Advertisements

এব্যাপারে নবীনগর মহল্লার সোবহান উদ্দিন জিহান বলেন, আমরা সচেতন না বলেই আজ শেরপুরে করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে যেন এর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে না পড়ে তাতে আমরা এগিয়ে এসেছি । প্রয়োজনে আমাদের এলাকার দরিদ্রদের দায়িত্ব আমরা এলাকাবাসীই নিবো।

এদিকে এই সেচ্ছায় লকডাউনের ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই সাধুবাদ জানান এবং নিজ নিজ এলাকায় এধরণের উদ্যোগ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

এদিকে আমাদের প্রতিনিধি নাঈম জানান, “গ্রামটা আমাদের তাই দায়িত্বটাও আমাদের” শ্লোগানকে সামনে রেখে  গ্রাম করোনা মুক্ত রাখতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন শেরপুর সদরের কৃষ্ণপুরের মানুষ। বাঁশের খুঁটি দিয়ে গ্রামে বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি। যারা গ্রামে ঢুকছেন নেয়া হচ্ছে পরিচয়, জানতে চাওয়া হচ্ছে প্রবেশের কারণ।

গ্রাম করোনামুক্ত রাখতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন সদর উপজেলার ৮নং লছমনপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামের সবক’টি প্রবেশ পথই রয়েছে কড়া নজরদারি। প্রবেশের সময় দিতে হচ্ছে পরিচয় আর আগতদের জীবানুমুক্ত করতে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

রাজধানীতে অধ্যয়নরত কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা মোকাদ্দেস হোসেন জানান, ২৪ ঘন্টা পালাক্রমে নিজেদের সুরক্ষার জন্য এই দায়িত্ব পালন করছেন গ্রামবাসী। করোনার প্রকোপ না কমা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে। গ্রামে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে সচেতনতামূলক পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। আনিছুর রহমান, সোলাইমান কবির, শাহাদাত হোসেন শিপলু, সোহাগ সরকার ও মতিন সরকারসহ গ্রামের অন্যান্য তরুণ গ্রাম সুরক্ষায় বিভিন্নভাবে সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছে।

করোনার কারণে কর্মহীন অস্বচ্ছলদের তালিকা করে খাবার বিতরণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। নিজেদের সুরক্ষায় সবাই এমন উদ্যোগ নিলে করোনা রোধ সম্ভব বলে জানান উদ্যোক্তারা। করোনা মেকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবীদের এই উদ্যোগ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে মনে করেন গ্রামবাসীরা।

অন্যদিকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার  জাহিদুল হক মনির জানান , ঝিনাইগাতী উপজেলায় করোনার সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও জনগণের অপ্রয়োজনীয় চলাচল নিরুৎসাহিত করার জন্য এ উপজেলায় প্রবেশদ্বারের সড়ক গুলোতে অস্থায়ী বাঁশের ব্যারিকেড (প্রতিবন্ধক) দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার সকাল থেকে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগে উপজেলার পাঁচটি স্থানে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এ ব্যারিকেড দেওয়া হয়।

করোনা সংক্রমণ রোধে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে জনগণ। সরেজমিন দেখা গেছে, করোনা সংক্রমণ রোধে ঝিনাইগাতী-শেরপুর সড়কের কালিবাড়ি, নালিতাবাড়ি-ঝিনাইগাতী সড়কের টেংরাখালী, ঝিনাইগাতী-মধুটিলা ইকোর্পাক সড়কের হলদীগ্রাম, শ্রীবরদীÑঝিনাইগাতী সড়কের বটতলা, ঝিনাইগাতী- শ্রীবরদী সড়কের বালিজুড়ি এলাকায় বাঁশের অস্থায়ী ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে।

ব্যারিকেড গুলোতে পুলিশ ও গ্রামপুলিশের সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। অতীব জরুরী যানবাহন ছাড়া অন্য কোন যানবাহন প্রবেশ বা বাহির হতে দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ওষুধ ও কাঁচামাল ছাড়া সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সড়কে মোটরসাইকেল ছাড়া অন্যকোন গণপরিবহনের চলাচল দেখা যায়নি।

আমরা-১৮ বছর বয়স ঝিনাইগাতী শাখার আহŸায়ক ও কালিবাড়ী এলাকার বাসিন্দা তুষার আল নূর বলেন, ‘মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’

ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম মহোদয়ের প্রত্যক্ষ নির্দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আমরা উপজেলার সকল হাট-বাজারে টহল, মাইকিং, জীবাণুনাশক স্প্রে, ওষুধ ও কাঁচামালের দোকানে দোকানে বৃত্ত, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, কর্মহীন শ্রমজীবি অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলছে। সবার উচিত সরকারের নির্দেশনা মেনে চলা। কেউ তা অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাসেদুল হাসান বলেন, আমি ও ইউএনও মহোদয় প্রতিদিন উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজার মনিটরিং ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হচ্ছে। গতকাল রবিবার রাতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখাসহ সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় ১৮৬০ সালের দÐবিধি ২৬৯ আইনে পাঁচ জনকে ১১ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ বলেন, কিছু মানুষ অতি উৎসাহী হয়ে পথে বের হয়ে আসছে। তাই তাদের রুখতে কঠোর অবস্থানে মাঠে আছি। জনগণের অপ্রয়োজনীয় চলাচলকে নিরুৎসাহিত করতে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের উদ্যোগে ব্যারিকেড (প্রতিবন্ধক) দেওয়া হয়েছে। কর্মহীন শ্রমজীবি অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।