রবিবার , ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

জগৎপুর গণহত্যা ॥ ৪৮ বছরেও হয়নি গণকবরের স্মৃতিচিহৃ

প্রকাশিত হয়েছে -

৩০ এপ্রিল ১৯৭১ সাল। এই দিনে শেরপুরের ঝিনাইগাতীর জগৎপুর গ্রামে পাকবাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে ৪৫ জন নিরিহ গ্রামবাসীকে। আহত হয়েছিল অর্ধশত মানুষ, জ্বালিয়ে দিয়েছিল জগৎপুর গ্রাম। এতে ২০০ বেশী বাড়ী-ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হলেও এই গ্রামে শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতিসৌধ। অযতœ আর অবহেলায় পড়ে আছে শহীদদের গণকবর।

শেরপুর শহর থেকে প্রায ১৪ কিলোমিটার দুরে ঝিনাইগাতী উপজেলার জগৎপুর গ্রাম। ৭১ এই দিনে পাক বাহিনী আর দেশীও দোসররা গ্রামটিকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেললে গ্রামের মানুষ প্রাণ ভয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাশেই রঙ্গবিলে। সেদিনের বর্বোরোচিত হামলায় ৪৫ জনের প্রাণ গেলেও সেদিনের ভয়াল স্মৃতি বুকে নিয়ে আজো বেঁচে আছেন অনেকেই।

সেদিনের সেই ভায়ল স্মৃতি বুকে নিয়ে নিরিহ গ্রামবাসী জানায়, সেদিন ছিল বাংলা ১৬ বৈশাখ, ৩০ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ৮ টা। জগৎপুরের সামনের সংকর ঘোষ গ্রাম থেকে স্থানীয় রাজাকার মজিবর, বেলায়েত, নজর ও কালামের সহযোগীতায় পাক বাহিনী জগৎপুরের তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। পাক বাহিনীর তিন টি দল গ্রামের তিন দিকে গিয়ে অবস্থান নিয়ে নির্বিচারে গুলি করতে থাকে। এসময গ্রামবাসী কোন কিছু না বুঝেই জীবন বাঁচাতে গ্রামের পেছনের দিকের রঙ্গবিলের দিকে দৌড়ে পালাতে থাকে। কিন্তু বিলের মাঝখানে পানি থাকায় কেউ সাঁতরিয়ে আবার কেউ বিলের দুই পাড় ঘেষে পালাতে যায়। এসময় শুকনো জায়গা দিয়ে পালাতে গিয়ে পাক সেনাদের গুলিতে শহীদ হন ৪৫ জন গ্রামবাসী। শুধু গুলি করে গ্রামবাসীকে হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি পাক সেনারা। তারা শূণ্য গ্রামের বাড়ী-ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ঘটনার প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘন্টা পর পাক সেনারা চলে গেলে কিছু কিছু গ্রামবাসী ফিরে এসে দেখে তাদের বাড়ী-ঘরের স্থলে পোড়া গন্ধ আর ছাঁই ছড়া আর কিছুই নেই। এ অবস্থা দেখে অনেকেই চলে যায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে। আবার অনেকেই নারীর টানে পড়ে থাকে গ্রামেই।

Advertisements

এদিকে হিন্দু-মুসলিম অনেকেই তাদের আত্মিয়দের লাশ গ্রামের একটি জঙ্গলের কাছে গণকবর দেয়। ওই গণ কবরের পাশেই বর্তমানে হিন্দুদের শ্মশান ঘাট রয়েছে। কিন্তু ওই গণ কবরের স্থানটি আজো স্মৃতিচিহৃ না করার জন্য ক্ষোভ রয়েছে গ্রামবাসীর। শুধু গণকবর আর স্মৃতি সৌধই নয়, সেদিনের হত্যকান্ডে কতজন প্রাণ দিয়েছিলেন এর সঠিক তালিকা নির্ণয় করে অবহেলিত পরিবার গুলোকে সঠিক মূল্যায়নের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।