রবিবার , ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

নজরুলের জাতীয়তাবোধ বাঙালি জাতির অনন্ত প্রেরণার উৎস

প্রকাশিত হয়েছে -

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে কবি সংঘ বাংলাদেশ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখনি আমাদের উজ্জীবিত করেছে। শোষণ-বঞ্চনা, অত্যাচার, কুসংস্কার ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে তার লেখনি ছিল সোচ্চার। তিনি বাঙালির জাগরণের কথা বলেছেন, স্বাধীনতার বাণী শুনিয়েছেন, ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মন্ত্র দিয়েছেন। কবিতা ও গানে নজরুলের জাতীয়তাবোধ বাঙালির অনন্ত প্রেরণার উৎস।

‘বল বীর, উন্নত মম শির’ বিদ্রোহের এ অমর উচ্চারণকে ধারণ করে ২৫ মে শুক্রবার সন্ধ্যায় শেরপুর শহরের বটতলাস্থ শ্যামলবাংলা২৪ডটকম অফিসে আলোচনা সভা ও কবিতা পাঠের আসরে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আইনজীবী সমিতি ও প্রেসক্লাব সভাপতি, বিশিষ্ট কবি রফিকুল ইসলাম আধার। ওইসময় তিনি বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের গতিপথ পাল্টে বিদ্রোহ, প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ধারা তৈরি করেন।

তিনি উন্নত কণ্ঠে উচ্চারণ করেন সাম্য আর মানবতা। তিনি ছিলেন ধ্যান-জ্ঞান, নিঃশ্বাস-বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনায় সম্প্রীতির কবি, অসাম্প্রদায়িক মেরুদ-। বাংলা সাহিত্যাকাশে তার আবির্ভাবকে বলা যায় অগ্নিবীণা হাতে ধুমকেতুর মত প্রকাশ। তিনি বাংলা সাহিত্যের সকল শাখা-প্রশাখায় অনন্যসাধারণ সৃজনশীল অবদান রেখেছেন। বিশ্বসাহিত্য দরবারে তিনি বাংলা সাহিত্যকে প্রতিষ্ঠা করে বাঙালি জাতিকে গর্বিত করেছেন।

Advertisements

কবি সংঘ বাংলাদেশ’র সভাপতি, বিশিষ্ট কবি সাংবাদিক ও কলামিস্ট তালাত মাহমুদের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব বাংলা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি কবি, ঔপন্যাসিক অধ্যক্ষ রিক্তার হোসেন ও প্রবীণ শিক্ষাবিদ আইনজীবী মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান। মূখ্য আলোচক ছিলেন কবি সংঘ বাংলাদেশ’র সাধারণ সম্পাদক, অধ্যাপক ড. আবদুল আলীম তালুকদার। অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন কবি আরিফ হাসান, কবি ও প্রভাষক আইয়ুব আকন্দ বিদ্যুৎ, কবি মহিউদ্দিন বিন্ জুবায়েদ ও কবি কোহিনুর রুমা।

সভাপতির বক্তব্যে কবি তালাত মাহমুদ বলেন, নজরুলের সাহিত্য কর্মে প্রাধান্য পেয়ে ভালোবাসা, মুক্তি ও বিদ্রোহ। ধর্মীয় ভেদাভেদের প্রাচীর ভাঙার ঘোষণা দেন তিনি। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। তবে বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন- ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল। নজরুল প্রায় ৩ হাজার গান রচনা ও সুর করেছেন- যা নজরুল সঙ্গীত হিসেবে পরিচিত।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, ১৯৭২ সালে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি নজরুলকে স্ব-পরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরে তাকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়। দেওয়া হয় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ও একুশে পদক।

অপর বিশেষ অতিথি রিক্তার হোসেন বলেন, নজরুল সময়ের প্রয়োজনে এখনও সমান প্রাসঙ্গিক। বৈষম্যের দেয়ালে বিভক্ত বিশ্ব সম্প্রদায়ের মুক্তির বার্তা রয়েছে তার সৃষ্টি কর্মে। তাই অনুবাদের মাধ্যমে নজরুলের সৃষ্টি সম্ভার বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে।
স্বরচিত কবিতা পাঠে অংশগ্রহণ করেন কবি আইরীন আহমেদ লিজা, নুরুল ইসলাম মনি, শহিদুল ইসলাম, এডভোকেট মোঃ সুরুজ্জামান, আবু বক্কর সিদ্দিক, মোস্তাফিজুল হক, মোহাম্মদ জুবায়ের রহমান, রবিউল আলম টুকু, রাবিউল ইসলাম, মাসুদুল আলম, কামরুজ্জামান বাদল, কালাম বিন আব্দুর রশিদ, শাহিন খান, হুইসেল হোসেন, ব্রিজেট বেবী, সাগর আহমেদ, তারেক হাসান, জান্নাতুল রিকসনা, রাজিয়া শিলা, মকবুল হোসেন, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে প্রায় অর্ধশতাধিক কবি-সাহিত্যিক অংশ নেন। অনুষ্ঠানে কবিসংঘের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত শাহ আলম বাবুল ও কবি সাইফুল্লাহ স্যান্ডোর স্মরণে এক মিনিট দাড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।