রবিবার , ২রা জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ২৪শে জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

প্রকৌশলে ঝুঁকছে কি বিদেশিরা?

প্রকাশিত হয়েছে -

পুঁজিবাজারের উত্থান-পতন এবং লেনদেনের গতির ক্ষেত্রে যে কয়েকটি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তার মধ্যে একটি প্রকৌশল খাত। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই খাতের কোম্পানির সংখ্যা ৩৬টি। এর মধ্যে ১০টিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ রয়েছে।

গত এক বছরে এই ১০টি কোম্পানির বাইরে প্রকৌশল খাতের অন্য কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করেনি। তবে চলতি বছরের মার্চে এসে বিদেশিদের প্রকৌশল খাতে সম্মিলিতভাবে শেয়ার ধারণের পরিমাণ বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে বিনিয়োগের পরিমাণও। মার্চ মাস শেষে বিদেশিদের বিনিয়োগ নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তৈরি করা প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মার্চে বিদেশিদের কাছে প্রকৌশল খাতের যে শেয়ার আছে তা ফেব্রুয়ারির তুলনায় ১২ লাখ ৩১ হাজারটির মতো বেশি। আর বর্তমান বাজার দরে এই খাতের কোম্পানিগুলোতে বিদেশিদের সম্মিলিত বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ১৪ কোটি ২ লাখ ৩ হাজার টাকা। সম্মিলিতভাবে প্রকৌশল খাতে বিদেশিদের বিনিয়োগ বাড়লেও মার্চে ৪টি কোম্পানিতে বিনিয়োগ কমেছে। বিপরীতে বিনিয়োগ বেড়েছে ১টি কোম্পানিতে। আর বাকি ৫টি কোম্পানিতে বিনিয়োগ অপরিবর্তিত রয়েছে। বিনিয়োগ কমা ৪টি কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- অ্যাপোল ইস্পাত, বিএসআরএম, মুন্নু জুট স্টাফলার ও সিঙ্গার বিডি। আর বিনিয়োগ বাড়ার তালিকায় রয়েছে ইফাদ অটোস। এছাড়া বিনিয়োগ অপরিবর্তিত থাকা ৫টি কোম্পানি হলো- বিবিএস, বিবিএস কেবলস, বিডি ল্যাম্প, বিডি থাই ও বিএসআরএম স্টিল।

Advertisements

প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মার্চ শেষে প্রকৌশল খাতের ১০টি কোম্পানির প্রায় ৭ কোটি ৭১ লাখ ৬৪ হাজার শেয়ার বিদেশিদের কাছে রয়েছে। এক মাস আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে বিদেশিদের কাছে প্রকৌশল কোম্পানিগুলোর শেয়ার ছিল প্রায় ৭ কোটি ৫৯ লাখ ৩৩ হাজার। বর্তমান বাজার দরে তালিকাভুক্ত ১০টি প্রকৌশল কোম্পানির শেয়ারে বিদেশিদের প্রায় ৮৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এ বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮৩৬ কোটি ৮১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।

মার্চে বিদেশিরা সব থেকে বেশি শেয়ার ছেড়ে দিয়েছে সিঙ্গার বিডির। এক মাসের ব্যবধানে বিদেশিরা কোম্পানিটির দশমিক ৩৭ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন। বিদেশিদের ছেড়ে দেয়া এই শেয়ারের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৮৪ হাজার। মার্চ শেষে সিঙ্গার বিডির ১০ দশমিক ২৩ শতাংশ শেয়ার বিদেশিদের কাছে আছে, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১০ দশমিক ৬০ শতাংশ। এছাড়া মুন্নু জুট স্টাফলারের দশমিক ২১ শতাংশ, বিএসআরএম’র দশমিক ১০ শতাংশ এবং অ্যাপোল ইস্পাতের দশমিক শূন্য ২ শতাংশ শেয়ার বিদেশিরা ছেড়ে দিয়েছেন। বিপরীতে ইফাদ অটোসের দশমকি ৮৫ শতাংশ শেয়ার বিদেশিরা নতুন করে কিনেছে। অর্থাৎ বিদেশিরা ইফাদ অটোসের প্রায় ২৩ লাখ শেয়ার নতুন করে কিনেছে।

 

বিদেশিদের প্রকৌশল কোম্পানির শেয়ার ধারণের চিত্র :

কোম্পানির নাম মার্চে শেয়ার ধারণ (মোট শেয়ারের শতকরা) ফেব্রুয়ারিতে শেয়ার ধারণ (মোট শেয়ারের শতকরা) মার্চে বিদেশিদের কাছে থাকা শেয়ার সংখ্যা ফেব্রুয়ারিতে বিদেশিদের কাছে থাকা শেয়ার সংখ্যা
অ্যাপোল ইস্পাত ০.৮১ ০.৮৩ ৩১ লাখ ৫৬ হাজার ৩২ লাখ ৩৪ হাজার
বিবিএস ০.১৩ ০.১৩ ১ লাখ ৬৭ হাজার ১ লাখ ৬৭ হাজার
বিবিএস কেবলস ০.০৫ ০.০৫ ৬৯ হাজার ৬৯ হাজার
বিডি ল্যাম্প ০.০৩ ০.০৩ ৩ হাজার ৩ হাজার
বিডি থাই ১.১৭ ১.১৭ ১৩ লাখ ৫০ হাজার ১৩ লাখ ৫০ হাজার
বিএসআরএম ২৫.৮০ ২৫.৯৫ ৫ কোটি ৫৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫ কোটি ৫৬ লাখ ৯১ হাজার
বিএসআরএম স্টিল ০.২২ ০.২২ ৭ লাখ ৫২ হাজার ৭ লাখ ৫২ হাজার
ইফাদ অটোস ৩.৭৫ ২.৯০ ৮৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬৫ লাখ ৩৮ হাজার
মুন্নু জুট স্টাফলার ০.০৩ ০.২৫ ১৩৮টি ১ হাজার
সিঙ্গার বিডি ১০.২৩ ১০.৬০ ৭৮ লাখ ৪৬ হাজার ৮১ লাখ ৩০ হাজার

 তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিদেশিদের সব থেকে বেশি বিনিয়োগ রয়েছে বিএসআরএম’র শেয়ারে। কোম্পানিটিতে বিদেশিদের প্রায় ৬০১ কোটি ৩০ লাখ ৪৪ হাজার টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিঙ্গার বিডি। এই প্রতিষ্ঠানটিতে বিদেশিদের প্রায় ১৩৪ কোটি ৯৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। তৃতীয় স্থানে থাকা ইফাদ অটোসে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে ১০০ কোটি ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকার মতো।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানিগুলোতে বিদেশিদের যে বিনিয়োগ আছে তার ৯৮ শতাংশই আছে তিনটি কোম্পানিতে। এর মধ্যে শুধু বিএসআরএমেই আছে ৭১ শতাংশ। বাকি কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিএসআরএম স্টিলে ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৭০ হাজার, অ্যাপোল ইস্পাতে ৪ কোটি ৩৫ লাখ ৫১ হাজার, বিডি থাইতে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৫৪ হাজার, বিবিএস কেবলস-এ ৫২ লাখ ৩৭ হাজার, বিবিএস-এ ৫০ লাখ ৩৪ হাজার, বিডি ল্যাম্পে ৫ লাখ ৯ হাজার এবং মুন্নু জুট স্টাফলারে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকার মতো বিনিয়োগ আছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, প্রকৌশল খাতের ৩৬টি কোম্পানির মধ্যে ১০টি কোম্পানিতে কি কারণে বিদেশিদের বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ রয়েছে তা বলা মুশকিল। তবে আমি যেটা বুঝি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির সার্বিক তথ্য পর্যালোচনা করে বিনিয়োগ করেন।

বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমি শেয়ারবাজারে বেশি বিদেশি বিনিয়োগের পক্ষে না। আমি মনে করি, শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কম থাকা উচিত। কারণ আমি বিএসইসি’র দায়িত্বে থাকা অবস্থায় দেখেছি, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ানোর কারণে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার স্টক এক্সচেঞ্জে অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি থেকে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এমন তথ্য উল্লেখ করা হলে তিনি বলেন, এতে খুব একটা লাভ হবে না, বরং এখন বিদেশিদের বিনিয়োগ যেমন সীমিত আকারে আছে সেটাই ভালো। কারণ বিদেশি বিনিয়োগ বেশি হলে বাজারে দ্রুত পেনিক সৃষ্টি হবে। আবার দেখা যাবে বিদেশিরা ঊর্ধ্বমুখী বাজারে একযোগে শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছে। এতে বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হবে।