শেরপুরে উচ্চ মজুরিতেও মিলছে না বোরো ধান কাটার শ্রমিক। শ্রমিকের চাহিদা অনুযায়ী উচ্চ মজুরী প্রদানের শর্তেও পাওয়া যাচ্ছে না শ্রমিক। তাই শ্রমিক সংকটে বিপাকে পড়েছে এই মৌসুমে বোরো আবাদ করা শেরপুরের কৃষকরা। জেলা সদর, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলাতে বোরো আবাদ করা কৃষকরা এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
অনুকূল আবহাওয়া এবং পর্যাপ্ত পরিচর্যার কারণে এ মৌসুমে জেলায় বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ফলনের শেষ মুহূর্তে বোরো ২৬ জাতের ধানে ছত্রাক জাতীয় ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে দুশ্চিন্তায় পড়ে কৃষক। সময়মত কীটনাশক প্রয়োগ ও পরিচর্যায় শেষ রক্ষা হলেও অনেকে বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তবুও পুরো জেলাতে এবার বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর জেলায় ৯১,৬৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অনুকূল পরিবেশ থাকায় অর্জিত হয়েছে ৯২,৬১০ হেক্টর জমিতে বোরোধান। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি। তবে শেষ মুহূর্তে এসে শ্রমিক সংকটের কারণে সময়মত ধান ঘরে তোলার দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
কয়েকদিনের টানা বর্ষণের কারণে কৃষকদের মনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভারী বর্ষণে ক্ষতির আগেই ধান কাটার ইচ্ছা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না শ্রমিক সংকটের কারণে। এক মণ ধানের দাম মজুরি বাবদ দিয়েও মিলছে না একজন শ্রমিক। শ্রমিক মিললেও জনপ্রতি মজুরি দিতে হচ্ছে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা। সঙ্গে থাকছে আবার এক/দুই বেলা খাবার। এর ফলে কৃষকের শুধু ধান কাটতেই খরচ পড়ছে মণ প্রতি প্রায় ৮০০ টাকা।
অন্যান্য খরচ (জমি চাষ, সেচ, চারা, সার, কীটনাশক, রোপা শ্রমিক খরচ) তো আছেই। চলতি বোরো মৌসুমে ঝড়, বৃষ্টি, পোকা-মাকড়, রোগ-বালাই নিয়ে কৃষকরা বিপাকে ছিলেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলাতে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৬২০ থেকে ৬৫০ টাকায়।
কৃষকরা জানান, কমবেশি সব এলাকায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। তাই শ্রমিকদের চাহিদা বেশি। এ বছর শ্রমিকের মূল্য বেশি থাকায় স্কুল-কলেজের অনেক শিক্ষার্থী ধান কাটার কাজে লেগে পড়েছে।
কৃষক জয়নাল জানান, তিনি এবার ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। বাজারে ধানের চাহিদা ও বাজার মূল্য অনেক কম থাকায় তাকে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
তবে অনেকেই এবার ধান সংরক্ষণের চিন্তাও করছেন। কৃষক চাঁন মিয়া বলেন, এবার বোরো ধানের দাম কম থাকায় তারা ধান ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। যাতে সংরক্ষিত ধান পরে বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়া যায়।