রবিবার , ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

কৃষকদের চোখে স্বপ্ন, মনে শঙ্কা

প্রকাশিত হয়েছে -

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার দু-একটি এলাকায় বিছিন্ন ভাবে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। গত বছর দু’দফা অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে তলিয়ে গেয়েছিল এ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের কৃষকদের সিংহ ভাগ বোরো ও আমন ধান। এছাড়া ব্লাস্ট ও নেক ব্লাস্ট রোগেও অনেক ক্ষতি হয়েছিল ফসলের। এতে কৃষকদের অর্থনৈতিক মেরুদ- ভেঙ্গে যাওয়ার পাশাপাশি গো-খাদ্যের সংকটে পড়া কৃষকরা এবার বোরো চাষ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আগাম কাল বৈশাখী ঝড় ও ঝড়ের সাথে শিলাবৃষ্টিতে এবারও বুঝি স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলতে পারবে কিনা এমন শঙ্কা দেখা দিয়েছে কৃষকদের মনে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে এ বছর বুকভরা আশা নিয়ে বোরো ধানে স্বপ্ন বুনেছেন কৃষকরা। বোরো ক্ষেতে ধানেরচারা রোপণের পর থেকে সঠিক পরিচর্যার কারণে ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। ফসলের মাঠ জুড়ে যেন সবুজের সমারোহ। কোন কোন কৃষক তার রোপণকৃত ধানের ভেতরে চাল হয়েছে কিনা তা দেখতে ছিল। আবার অনেক কৃষককে ধান ক্ষেতে ইঁদুর নিধনের কীটনাশক প্রয়োগ করছে। এদিকে কিছু এলাকার কৃষকরা শুরু করেছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় গত বছর এপ্রিলে অতিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৮ হাজার কৃষকের ২ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমির বোরো ধান আক্রান্ত হয়। অন্যদিকে সেপ্টেম্বরে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এতে ৫ হাজার কৃষকের ১ হাজার ১০ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে বোরো ও আমন মৌসুমে কৃষকের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৫ কোটি ৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এবার বোরো মৌসুমে ১৪ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬২ হাজার ৪২৪ মেট্রিক টন।

Advertisements

উপজেলার বনগাঁও চতল গ্রামের কৃষক মো. সোবাহান (৩২) বলেন,‘কৃষি কাজ কইরে সংসার চালাই। গেছে (গত) বছর ১০ কাঠা (৫০ শতাংশ) জমি বর্গা নিয়ে বোরো আবাদ করছিলাম। সব ধান পানির নিচে তলাইয়ে গেছিল। তহন জমির মালিকও কিছু পায় নাই আমিও কিছু পাই নাই। এবার ফের আবাদ করছি, ধানের লক্ষণে কয় ফলনও ভাল হবো। কিন্তু কয়দিন আগে যে হিল (শিলা বৃষ্টি) পড়ছে আর রাইত হইলেই আকাশ গড় গড় করে ডাহে (ডাকে)। মনে হয় এবারও গতবারের মতই হয়। এবারও যদি ধান তুলবার না পাই তাহলে না খাইয়া থাহন লাগবো।’
সুড়িহাড়া গ্রামের কৃষক মো. আবু হাশেম (৩৫) বলেন, ‘গত বছর ঝিনাইগাতী কৃষি ব্যাংক থাইক্যা (থেকে) ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়া সাড়ে ৪ একর জমিতে বোরো আবাদ করছিলাম। ভাবছিলাম ভালো ধান পামু, আর সহজেই দেনা শোধ করমু। কিন্তু উজানের ঢলের পানিতে সব ধান নষ্ট হইয়া গেছিল। ব্যাংকের দেনা (টাকা) শোধ করবার পাই নাই। এবারও জমি আবাদ করতে গিয়ে ঋণ করতে হয়েছে। তবে ভালোয় ভালোয় ধান তুলতে পারলে সব ধারদেনা শোধ করা যাবে।’
এছাড়া গত সপ্তাহের দু’দফা শিলাবৃষ্টি কৃষকদের মনে এবারও ধান হারানোর শঙ্কা জাগিয়ে তুলেছে। এবার যদি বোরো ধান ঘরে তুলতে না পারে তাহলে তাদের পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না বলে জানিয়েছেন অনেক কৃষক।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল আওয়াল শেরপুর টাইমসকে বলেন, এ উপজেলায় গত ২৯ ও ৩০মার্চ শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে বিছিন্ন ভাবে দু-একটি এলাকায় ধান কাটতে শুরু করেছে কৃষকরা। তবে পুরোদমে ধান কাটার কাজ শুরু হতে প্রায় তিন সপ্তাহ লাগবে। বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে বাম্পার ফলনের আশা করছি।