রবিবার , ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শেরপুরে মৃৎ শিল্পীদের ব্যস্ততা বেড়েছে যে কারণে

প্রকাশিত হয়েছে -

বৈশাখ এলেই যেন বাঙালী প্রাণের স্পন্দন ফিরে পায়। বৈশাখ বা নববর্ষকে সাঁজাতে এবং উৎসবকে ঘিরে নানা আয়োজনের মধ্যে শুধু পান্তা ইলিশই নয়, ঘরে ঘরে চলে পোলাও-কোরমা রান্না, কেনা-কাটা ও আত্বিয়স্বজনদের দাওয়াত করে খাওনোর নানা প্রস্তুতি। এছাড়া গ্রামে গঞ্জের বিভিন্ন মেলায় দোকানী এবং গ্রামীণ খেলাধূলার নানা প্রস্তুতি যেন মনে করিয়ে দেয় এইতো বৈশাখ এসে গেলো।

বৈশাখ উপলক্ষে জেলায় প্রায় শতাধিক গ্রামের মাঠে বসবে গ্রামীণ মেলা। আর এ মেলা উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছে জেলার বিভিন্ন এলাকার মৃৎ শিল্পীরা। বিশেষ করে জেলার সব চেয়ে বড় পাল পাড়ায় এখন দিন রাত খেটে প্রস্তুত করছে শিশুদের খেলনাসহ নানা আসবাবপত্র ও মাটি’র নানা হাড়ি-পাতিল।

জানাগেছে, পহেলা বৈশাখ এবং বাংলা নব বর্ষের বর্ষ বরণ ও বিভিন্ন স্থানে মেলা উপলক্ষে শেরপুরের পাল পাড়ায় চলছে ব্যস্ত সময়। নব বর্ষের বর্ষ বরণ এবং বিভিন্ন স্থানের মেলায় মাটির পাত্র, বিভিন্ন খেলনা যেমন বাঘ, হরিণ, গরু, ঘোড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন পশু-পাখি, ফুলের টব, রকমারী পুতুল তৈরী করতে বিরামহীন কাজ করছে পালেরা। তারা জানায়, বংশানুক্রমের নিয়মানুযায়ী তারা পুরো বৈশাখ মাস কেউ কোন কাজ করবে না। ফলে ফাল্গুন-চৈত্র এই দুই মাস কাজের চাপ বেশী থাকে।

Advertisements

এসময়ের মধ্যে রাত জেগে হলেও ৩০ চৈত্রের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করবে। নববর্ষের প্রথম দিন বা পহেলা বৈশাখে জেলার সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাল পড়ায় বিভিন্ন মাটির আসবাব পত্র অর্ডার দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এসব আসবাবপত্র তৈরী করে মওজুদ করা হয়েছে।

সময়মত এসব মালামাল ডেলিভারি করা হবে বলে জানালেন তারা। সারা বছর মাটির বিভিন্ন পাত্র তৈরী করা হলেও বর্তমানে বৈশাখ ও মেলা উপলক্ষে আসবাবপত্র, খেলনা ও শো পিছ তৈরী করে কেউ কেউ শুকিয়ে পোড়ার কাজ করছে আবার কেউ কেউ পেড়ানো শেষ করে রঙ এর কাজ করছে। রঙ শুকিয়ে গেলেই বাজারের পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হবে। পরবর্তিতে পাইকাররা পহেল বৈশাখ থেকে শুরু করে পুরো বৈশাখ জুড়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত মেলায় নিয়ে তা বিক্রি করবে।

শেরপুর শহরের পাল পাড়ার মৃৎশিল্পী জয়দেব পাল জানায়, এক সময় আমরা রাতে ঘুমানোর সময় পেতাম না। রাত জেগে কাজ করতে হোতো। কিন্তু সম্প্রতি এসব মাটির আসবাবপত্র এবং খেলনা সামগ্রী’র চাহিদা যেন কমে আসছে। এর কারণ হিসেবে তিনি জানায়, দেশে প্লাষ্টিক সামগ্রীর আসবাপত্র ও খেলনা সামগ্রী বাজারে আসায় মাটির তৈরী খেলনা ও আসবাবপত্রের কদর কমে যাচ্ছে। তারপরও সারা বছরের চেয়ে এই চৈত্র বৈশাখে আমাদের কাজের চাপ অনেক বেশী থাকে।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ততথ্যে জানাযায়, জেলায় প্রতি বছর প্রায় অর্ধ শত গ্রামের মাঠে এ বৈশাখী মেলা অনুষ্টিত হয়। এসব মেলার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো, সদর উপজেলার পাকুরিয়া ও কামারিয়া ইউনিয়নের ঘূষের মাঠে, তিরসা, বাকের কান্দা, তিলকান্দি, গাজির খামার, নকলা উপজেলার গনপদ্দি, বানেশ্বর্দী, টালকি, চন্দ্রকোনা, রিহিলা, নালিতাবাড়ি উপজেলার কুশল নগর, খলচান্দা, সমশ্চুড়া, গারোকোনা, তন্তর, ঝিনাইগাতি উপজেলার তিনআনী বাজার, ধানশাইল, গান্ধিগাঁও এবং শ্রীবর্দী উপজেলার ঝগড়ার চর ও রানীশিমূল গ্রামে বৈশাখি মেলা ইত্যাদি।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার জানায়, বরাবরের মতো সরকারী ভাবে জেলায় প্রত্যেক উপজেলা সদরে বাংলা নব বর্ষ বরণের নানা আয়োজন করা হয়েছে। বিশেষ করে পহেলা বৈশাখে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হবে। এসময় গ্রামীণ ঐতিহ্যের নানা উপকরণ যেমন মহিষ ও গরুর গাড়ি, লাঙল, কাস্তেসহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে শোভাযাত্রায় সর্বস্তরের শত শতম মানুষ শতস্ফুর্ত ভাবে অংশ নিবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এছাড়া জেলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্পের সামগ্রীর মেলাও বসবে জেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে।