সোমবার , ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১১ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

বাঙালির মেলা, বাংলাদেশের মেলা…

প্রকাশিত হয়েছে -

 বাঙালি জীবনের সঙ্গে মেলার যোগ দীর্ঘকালের। বাংলাদেশের মেলার ঐতিহ্য বহুকালের। কিন্তু তা কত পুরনো, কবে এবং কিভাবে এর সৃষ্টি সেসব তথ্য অজ্ঞাত। তবে এটি যে আবহমান বাংলার এক প্রাচীণ ঐতিহ্য এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।
মেলার আদিবৃত্তান্ত না জানা গেলেও ধারণা করা হয়, ধর্মীয় উপলক্ষেই এ দেশে মেলার জন্ম। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় ভিন্ন ভিন্ন উপলক্ষ। কেউ কেউ মনে করেন, গ্রামীণ মেলা ছিল জমিদারদের উদ্ভাবিত ও পরিকল্পিত। কেননা, এর সাহায্যে তাঁরা রোজগার বাড়াতেন। জমিদারদের পাশাপাশি লৌকিক উদ্যোগের কথাও স্মরণ করতে হয়। মেলার এই সমাবেশ ও বিকিকিনির প্রাথমিক ধারণা সম্ভবত গ্রামীণ হাট থেকেই এসেছিল। সেই অর্থে হাটই মেলার আদি রূপ।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ মেলাই ধর্মীয় উপলক্ষে প্রবর্তিত। হিন্দু সম্প্রদায়ের রথযাত্রা, দোলযাত্রা, অষ্টমী ও বারুনী স্নানযাত্রা, দুর্গাপূজা, কালীপূজা, জন্মাষ্টমী, পৌষ সংক্রান্তি, চৈত্র সংক্রান্তি, পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষে, শিবরাত্রি, সাধু-সন্তের জন্ম-মৃত্যুর স্মারক দিবস ইত্যাদি উপলক্ষে মেলা বসে।
সারাবছরই দেশের কোনো না কোনো স্থানে মেলা বসে ভিন্ন ভিন্ন উপলক্ষে। তবে বাংলা সনের ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাস মেলার মওসুম হিসেবেই ধরা হয়। কারণ এ মাসগুলোতেই ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসব পালন হয়। যেমন মুসলিম ধর্মীয়দের বিভিন্ন মাজার এর উরশ এবং হিন্দু ধর্মীয়দের ¯œান ও বিশেষ পূজো হয় এ সময়ে। এক দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত থাকে এসব মেলা। মেলার স্থান নির্বাচনে প্রাধান্য পায় নদীর তীর, গ্রামের বট বা বড় কোন বৃক্ষ, হিন্দুদের মঠ-মন্দিরসংলগ্ন প্রাঙ্গণ, সাধু-সন্যাসি-ফকির-দরবেশের সাধনপীঠ বা মাজার, প্রসিদ্ধ পুণ্য ‘স্থান’ বা তীর্থ স্থান। কখনো স্কুল-কলেজ চত্বর বা খেলার মাঠেও বসে মেলা।
মেলা মানে উৎসব, বিনোদন, বিকিকিনি আর সামাজিক মেলামেশার এক উদার ক্ষেত্র। মেলা উপলক্ষে এখনও গ্রামে গঞ্জে অনেক বাড়িতে আত্মিয়দের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসা হয়। নতুন জামাইরাও শুশুর বাড়িতে এবং মেয়েরা বাপের বাড়িতে বেড়াতে আসে এ মেলা উপলক্ষে। বাংলাদেশের এমন কোন জেলা বা উপজেলা নেই যেখানে মেলার আয়োজন করা হয় না। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করর্পোরেশন (বিসিক) গ্রামীণ মেলার ওপর দেশজুড়ে এক জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। ওই জরিপে প্রায় ১ হাজার ৫টি মেলার সন্ধান পাওয়া যায়। তবে জরিপ কার্যক্রমটি আরও পঞ্চাশ থেকে একশ বছর আগে পরিচালিত হলে মেলার সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হতো বলে বয়োবৃদ্ধাদের ধারনা। বিসিকের প্রাপ্ত সংখ্যার নব্বইভাগ মেলাই গ্রামীণ।
মেলা সামনে রেখে চারু, কারু ও অন্যান্য কুটির শিল্পীরা দীর্ঘ সময় নিয়ে প্রস্তুতি নেয়। কামার, কুমার, ও বাঁশ-বেতের শিল্পীরা নিপুণ হাতে তৈরি করে বিভিন্ন সামগ্রী। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষের আকর্ষণ থাকে মেলায়। গ্রাম-বাংলার অনেকে মেলা থেকেই পুরো বছরের ঘর গেরস্থালির তৈজসপত্র কিনে থাকেন। ফলে মেলা উপলক্ষে গ্রাহকদেরও প্রস্তুতি থাকে। অভাব-অনটন যতই থাকুক, মেলার জন্য সকলেরই ছোটখাটো বাজেট থাকে। আগের দিনে মেলার আগে বড়রা শিশুদের নগদ টাকা বকশিশ দিতো। অঞ্চল বিশেষে এ ধরনের উপহারকে বলা হয় ‘মেলার পড়বি’। কিন্তু এখন আর মেলার পড়বি চোখে পড়ে না।
মেলায় বাহারি পণ্যের পসরার মধ্যে শিশুদের আনন্দ-বিনোদনের জন্য পাওয়া যায় মাটির পুতুল, পালকি, ঘোড়া, ষাঁড়, হরিণ, হরেক রকমের ঘুড়ি, টমটম, লাটিম, গাড়ি, বল, বেলুন, বাঁশিসহ নানান রকমের খেলনা। গাঁয়ের বধূ ও কিশোরীরা মেলা থেকে কিনে নেন আলতা, স্নো, পাউডার, কাঁচের চুড়ি, নাকের নোলক, কানের দুল, চুলের ফিতা, খোপা, ক্লিপসহ দেহাবরণের জিনিসপত্র।
এ ছাড়া গেরস্থালির জিনিসপত্র যেমন দা, কাঁচি, কুড়াল, খুন্তি, রান্না-বান্নার সরঞ্জাম, পাখা, চালনি, জলচৌকি, পিঁড়ি থেকে শুরু করে বৃদ্ধদের ছড়িও পাওয়া যায় মেলায়। থাকে রসনা তৃপ্তির জিনিসপত্রও। বিশেষ করে মেলা থেকে কেনা জিলাপি, গজা, রসগোল্লা, কদমা, বাতাসা, বিন্নি ধানের খৈ ও দই-চিড়ার স্বাদই যেন আলাদা। কাপড়, মনোহারি, প্লাস্টিক পণ্য, পূজার জিনিসপত্র, ধর্মীয় পোস্টার, ছবি, বাঁশ-বেতের সামগ্রী, তামা-কাঁসা-পিতলের বাসনপত্র প্রভৃতির দোকানও বসে মেলায়।
কোন কোন মেলায় দর্শকদের তাৎক্ষণিক মনোরঞ্জনের জন্যও থাকে নানান আয়োজন। নাগরদোলা, লাঠিখেলা, কুস্তিখেলা, পুতুল নাচ, যাত্রাগান, কবিগান, বাউল গান, ঘেটু গান, জারি গান, গাজীর গান, পীর-ফকিরদের গান, বায়স্কোপ, সং, সার্কাস, লটারি, কীর্ত্তন, নৌকা বাইচ, ষাঁড়ের লড়াই প্রভৃতি আয়োজন দর্শকদের বাড়তি আনন্দের খোরাক যোগায়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমান আধূনিক যুগে মেলার নামে অনেক জায়গায় জুয়া-হাউজি-অশ্লীল নৃত্যসহ কিছু অপ-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড হয়। এগুলো মেলার মূল সংস্কৃতি নয়। মূলত এর পেছনে থাকে বানিজ্য বা অর্থের লোভ। মেলায় হাজারো মানুষের ভীরকে পূঁজি করে এক শ্রেণির অর্থলোভি মানুষ এ ধরনের বেআইনি উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার চেষ্টা করে। এতে মেলার পরিবেশ শ্রীহীন হয়। তবে সর্বসাধারণ কখনও এ বিষয়গুলোকে মেলার আঙ্গিক হিসাবে মনে করেন না।
বাংলাদেশ ‘মেলার দেশ’ খ্যাত হলেও গ্রামীণ মেলার সেই জৌলুস দিন দিন কমে আসছে। কমছে মেলার সংখ্যাও। আগে গ্রামাঞ্চলে বা বিভিন্ন তীর্থস্থানে আয়োজক কমিটির ব্যবস্থাপনায় যেভাবে মেলার আয়োজন হতো এখন তা অনেক ক্ষেত্রেই আর দেখা যায় না।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলার চিত্র-চরিত্রেও পরিবর্তন এসেছে। গ্রামীণ মেলা রূপে ও মেজাজে অনেকখানিই বদলে গেছে। বিশেষ করে বিভিন্ন মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় এ ধরনের আয়োজনগুলো হয় সাধারণত শহরাঞ্চলে। যেমন মোবাইল মেলা, কম্পিউটার মেলা, আইটি মেলা, আবাসন মেলা ইত্যাদি। আবার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় উন্নয়ন মেলা, তথ্য ও প্রযুক্তি মেলা, চাকুরি মেলা, বিজ্ঞান মেলা, বাণিজ্য মেলা, শিল্প মেলা, বই মেলা, কৃষি মেলা, স্বাধীনতা মেলা, বিজয় মেলা প্রভৃতি মেলার আয়োজন করা হয়। আয়োজন যারাই করুক আর যেভাবেই হোক, মেলা যুগ যুগ ধরে মানুষের মাঝে মেলবন্ধন তৈরি করে। নানান ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়ের মধ্যে রচনা করে সেতুবন্ধন। শুধু তাই নয়, মেলা নিয়ে রয়েছে মজার মজার কবিতা ও গান, যেমন- ‘আমি মেলা থেকে তাল পাতার এক বাঁশি কিনে…’, ‘মেলায় যাইরে, মেলায় যাইরে…’ ইত্যাদি। তাই মেলা যেন বাঙালির এবং বাংলাদেশের জনগনের জীবনচিত্রের সাথে অতোপ্রোতো ভাবে জড়িত।
শেরপুর জেলায় যেসব স্থানে মেলা বসে :
জেলায় সব চেয়ে বেশী গ্রামীণ মেলা বসে বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে। এছাড়া পৌষ ও চৈত্র সংক্রান্তিতে এবং হিন্দু ধর্মীয় বিভিন্ন পূজা ও মুসলিম ধর্মীয় বিভিন্ন মাজারের উরশকে কেন্দ্র করেও বসে মেলা। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, হিন্দু ধর্মীয় কৃঞ্চ পক্ষের ত্রয়োদশ দিনে বারুনী ¯œান এবং অষ্টমী ¯œান উপলক্ষে জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার গড় জরিপা ইউনিয়নের কালিদাহ সাগর পাড়ে এবং বসন্তকালের অষ্টমী তিথিতে অষ্টমী ¯œান উপলক্ষে শ্রীবর্দী উপজেলার রানীশিমূল ইউনিয়নের টেঙ্গর পাড়া গ্রামে মেলা বসে। টেঙ্গর পাড়া গ্রামে এক সময় পাহাড়ি পাগলা নদীর তীরে ¯œান এবং সেখানেই মেলা বসলেও বর্তমানে ওই পাগলা নদী তার গতিপথ বদললিয়ে অন্যত্র অনেক দুরে সরে যাওয়ায় ওই গ্রামের একটি পুকুরেই অষ্টমী ¯œান হয়।
নকলা উপজেলার নারায়নখোলা সিকদার পাড়া ও কেজাইকাটা গ্রামে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও দশানী নদীর তীরে অষ্টমী ¯œানের পাশাপাশি ছোট পরিসরে মেলা বসে। এছাড়া গৌড়দ্বার ইউনিয়নের রুনীগাঁও গ্রামের অলৌকিত মসজিদ হিসেবে পরিচিত গাজির দরগা বাজারে দীর্ঘদিন থেকে প্রতি বছর আরবি মাসের ১ মহরম থেকে ১০ মহরম পর্যন্ত উরশ উদযাপন করা হয়। এসময় ওই অলৌকিত মসজিদের ধ্বংসাবশেষের কাছে অসংখ্য ভক্তরা এসে মানত ও সিন্নি বিতরণ করেন। উরশের শেষ দিন অর্থাৎ ১০ মহরম ওই বাজার ও বাজারের আশপাশে বসে গ্রামীণ মেলা। একই উপজেলার চর অষ্টাধর ইউনিয়নের নারায়নখোলা দরবার চর গ্রামে ঐতিহ্যবাহী বিশাল আকৃতি’র বেড় শিমূল গাছ এলাকায় বৈশাখ মাসের প্রথম দিন থেকে ৩ দিনের জন্য মেলা বসে।
নালিতাবাড়ি উপজেলা সদরের ভোগাই নদীর কাচারিপাড়া ঘাটে অষ্টমী ¯œান হয়। কিন্তু এক সময় এখানে মেলা বসলেও এখন বসে না। এছাড়া একই উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের চাটকীয়া গ্রামে এবং বাঘবেড় ইউনিয়নের খইলশা কূড়া গ্রামে এবং শেরপুর সদর উপজেলার বলাইচর ইউনিয়নে চরখার চর গ্রামে চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে চরক পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
ঝিনাইগাতি উপজেলা কাংশা ইউনিয়নের কৃঞ্চপুর গ্রামে প্রতি বছর হিন্দু ধর্মমতে শুক্ল পক্ষের প্রথম মঙ্গলবার (বাংলা মাসের চৈত্র বা বৈশাখ মাসে অনুষ্ঠিত) কালি পূজা ও পাঠা বলি করা হয়। এ উপলক্ষে এক দিন এক রাত্রী’র জমজমাট মেলাও বসে। শত বছরের পুরোনো এ পূজা উপলক্ষে এক সময় এখানে দেশের বাইরে ভারত থেকেও লোকজন আসতো এ মেলায়। এছাড়া নলকূড়া ইউনিয়নের রাংটিয়া সীমান্ত এলাকায় শাহ সেকান্দার আলী (র:) মাজারের উরশ উপলক্ষে প্রতি বাংলা সনের মাঘ মাসের ১৫ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত ৬ দিন ব্যাপী মেলা বসে এবং একই ইউনিয়নের পাশ্ববার্তী সীমান্ত এলাকার কালি তলায় সনাতনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী কোচদের বাৎসরিক কালিপূজা উপলক্ষে বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহে এক দিনের জন্য বসে গ্রামীণ মেলা। এছাড়া ঝিনাইগাতি সদর ইউনিয়নের পাইকুড়া হাই স্কুল মাঠে অষ্টমী ¯œান উপলক্ষে জমজমাট মেলা বসে।
শেরপুর শহরের অষ্টমীতলা নামক স্থানে এক সময় প্রায় শত বছর পূর্বে যখন পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদটি বর্তমান মৃগি নদীর কাছ দিয়ে প্রবাহিত হতো তখন অষ্টমী ¯œান ও মেলা বসতো এখানে। কিন্তু কালের করাল গ্রাসে ব্রহ্মপুত্র নদটি জামালপুরের দিকে সরে যাওয়ায় এখানে আর ¯œান হয় না। তবে ওই সময় থেকেই স্থানটি’র নাম করণ হয় অষ্টমীতলা। সেসময়ের কোন স্মৃতি না থাকলেও আজো নামকরণ হিসেবেই সাক্ষি হয়ে আছে ‘অষ্টমীতলা’।
এছাড়া জেলার সদর উপজেলার গাজির খামার ইউনিয়নের শেরআলি গাজি’র সমাধি স্থলে “গাজি”র মাজার এর উরশ উপলক্ষে ফাল্গুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ৭দিন ব্যাপী, কামারের চর ইউনিয়নের ডুবার চর গ্রামে ‘বুচা পাগলা’ মাজারে ফাল্গুন মাসের ১০ তারিখ থেকে ১৩ দিন ব্যাপী উরশ ও মেলা, পৌর এলাকার নবীনগর মহল্লার ‘ছাওয়াল পীর’র উরশ উপলক্ষে ফাল্গুন মাসের শেষ সপ্তাহে ৭দিন ব্যাপী মেলা এবং চৈত্র মাসের প্রথম দিন থেকে শহরের কসবা এলাকায় ‘হযরত শাহ কামাল’ (রা:) মাজারের উরশ উপলক্ষে মাস ব্যাপী চলে উরশ ও মেলা। এছাড়া শহরের নবী নগর মহল্লায় এবং ভাতশালা ইউনিয়নের বয়ড়া গ্রামে পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে এক দিনের জম্পেশ মেলা বসে প্রতি বছর।
হিন্দু ও মুসলিম ধর্মীয় বিভিন্ন উপলক্ষ ছাড়াও আদিবাসী গারো সম্প্রদায় ও খ্রীষ্ট ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশপাশি জম্পেশ মেলা বসে জেলার পাহাড়ি এলাকায়। প্রতি ইংরেজী বছরের অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবার জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের বারোমারি খ্রীষ্টান মিশনে ফাতেমা রাণী তীর্থৎসব উপলক্ষে মিশনের পাশের মাঠে দুই দিনের জন্য বসে আদিবাসী মেলা। এছাড়া ছোট আকারে হলেও ২৫ ডিসেম্বর খ্রীষ্টান ধর্মীয় বড় দিন উপলক্ষে এবং গারো সম্প্রদায়ের ফসল কর্তন বা ওয়ানগালা উৎসব উপলক্ষে ২৬ নভেম্বর ঝিনাইগাতি উপজেলার মরিয়মনগর মিশনের পাশে বসে মেলা।
তবে জেলার সর্বত্র বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের আনাচে-কানাচে সবচেয়ে বেশী মেলা বসে বৈশাখ মাসে । স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ততথ্যে জানাযায়, জেলায় প্রতি বছর প্রায় অর্ধ শত স্থানে বা গ্রামে এ বৈশাখী মেলা অনুষ্টিত হয়। এসব মেলার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো, সদর উপজেলার পাকুরিয়া ও কামারিয়া ইউনিয়নের ঘূষের মাঠে, তিরসা, বাকের কান্দা, তিলকান্দি, গাজির খামার, নকলা উপজেলার গনপদ্দি, বানেশ্বর্দী, টালকি, চন্দ্রকোনা, রিহিলা, নালিতাবাড়ি উপজেলার কুশল নগর, খলচান্দা, সমশ্চুড়া, গারোকোনা, তন্তর, ঝিনাইগাতি উপজেলার তিনআনী বাজার, ধানশাইল, গান্ধিগাঁও এবং শ্রীবর্দী উপজেলার ঝগড়ার চর ও রানীশিমূল গ্রামে বৈশাখি মেলা।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, আলোকিত শেরপুর ডটকম এবং উপদেষ্ঠা সম্পাদক শেরপুর টাইমস ডটকম।