সোমবার , ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ২৬শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

লাগামহীন বাড়ছে ইট, বালি রড সিমেন্টের দাম

প্রকাশিত হয়েছে -

পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নির্মাণশিল্পের কাঁচামাল রড,  সিমেন্ট, বালু, ইট ও পাথরের দাম। ফলে সম্ভাবনাময় আবাসন শিল্পখাতে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। লফিয়ে লাফিয়ে মূল্যবৃদ্ধির এ ঘটনাকে অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিক বলে দাবি করছেন নির্মাণশিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়িয়েছেন বলেও অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা । তবে ইস্পাত শিল্পসংশ্লিষ্টদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে লোহার মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে দেশের রডের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন তারা। পাথর বালু, ইট ও সিমেন্টের ক্ষেত্রেও মূল্যসমন্বয় করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে কথা বলে জানা যায়, উল্লেখযোগ্য কোনো কারণ ছাড়াই রডের দাম বেড়েছে দুই দফায় টন প্রতি ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। ৫১ হাজার টাকার রড ৭০ থেকে ৭২ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। সিন্টের দাম বস্তাপ্রতি ৮০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে এখন ৫০০ টাকা থেকে কোথাও কোথাও ৫১০ টাকায়

Advertisements

অন্যদিকে প্রতি হাজার ইটের দাম এক লাফে এক হাজার টাকা বেড়ে ৮৫০০ থেকে ৯৫০০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে ইটভাটাতে । তার পরও সময়মত ইট পাওয়া যাচ্ছেনা বলে অভিযোগ বাড়ীর কাজে যারা হাত দিয়েছেন তাদের ।

১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরের পাথরের দাম কয়েক দফায় বেড়ে এখন ২০০ থেকে ২২০ টাকায় ঠেকেছে। প্রতি ট্রাক সিলেকশন বালুর দাম ৯ হাজার থেকে বেড়ে ১২ হাজার হয়েছে। এতে করে পুরো নির্মাণশিল্পে এক ধরনের অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগিরা।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্সট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মুনীর উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, বড় উৎপাদকেরা সিন্ডিকেট করে রডের দাম বাড়াচ্ছেন। গত বছরের বাজেটের আগে ভ্যাট-ট্যাক্সের অজুহাতে এক ধাক্কায় রডের দাম টনপ্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বাড়ানো হয়। কিন্তু বাজেটে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হলেও পরে আর দাম কমানো হয়নি। এ নিয়ে অনেক দেন-দরবার করেও লাভ হয়নি। এখন আবার আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ ও পরিবহন খরচ বাড়ার যুক্তি দেখিয়ে ওই সিন্ডিকেটই রডের দাম বাড়াচ্ছে।

তিনি বলেন, বর্ধিত খরচ যোগ করে দেখা গেছে, রডের দাম ৩ থেকে ৫ শতাংশ বাড়ানো যৌক্তিক। কিন্তু সেখানে ৩০ শতাংশের মতো দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে, পাশাপাশি স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব সরকারকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত, নইলে এ সিন্ডিকেট দাম বাড়াতে থাকবেই।

এদিকে রড-সিমেন্টসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিকে অযৌক্তিক বলে দাবি করেছেন আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) নেতারা। তাঁরা বলছেন, হঠাৎ করে নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক আবাসন ব্যবসায়ী নির্মাণকাজ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে চাইছেন। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তর অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। দুর্ভোগে পড়বেন ক্রেতারা। সংকট উত্তরণের পথে থাকা আবাসন খাত আবারও বড় ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করেন নেতারা।

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে গত মঙ্গলবার নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিহ্যাব নেতারা। এতে যৌথভাবে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, পরিচালক কামাল মাহমুদ, শাকিল কামাল চৌধুরী প্রমুখ।