সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় সম্পাদকদের মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। আজ বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসমূহের সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এ পরামর্শ দেন।
গত শনিবার বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়। এতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। এ প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যে সমস্ত সাংবাদিক হামলা-নির্যাতন-নির্মমতার শিকার হয়েছে, যদি আইনগত ব্যবস্থা নিতে হয় সংশ্লিষ্ট হাউজ থেকে মামলা করতে হবে। পাশাপাশি কোনো হাউজ যদি চায় আহত সাংবাদিকদের তালিকা দিলে কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে আমরা চিকিৎসার জন্য সহায়তা করব।’
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘সেদিন সাপ পিটিয়ে মারার চেয়েও জঘন্যভাবে একজন পুলিশ কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ইসরাইলি বাহিনীর কায়দায় পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়ে অ্যাম্বুলেন্সসহ ১৯টি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডেমরায় ট্রাক ও বাসের সঙ্গে ঘুমন্ত চালকের সহকারীকেও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর পরে হরতাল-অবরোধ ডেকেও তারা যানবাহন ও মানুষের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা পরিচালনা করেছে, দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনীতির নামে এই সন্ত্রাস কোনোভাবেই কাম্য নয়। সাংবাদিক, সম্পাদক, গণমাধ্যম মানুষের ধ্যান-ধারণা তৈরি করে। বিএনপির হামলায় ৩০ জনের বেশি সাংবাদিক আহত হয়েছে এবং তাদের ওপর হামলার ভয়াবহতা, নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা কী রকম ছিল সেটি সারা দেশের জনগণ জানে না। এটা জানানোর দায়িত্ব আপনাদের। এর ওপর প্রত্যেকটি পত্রিকায় রিপোর্টিং হওয়া দরকার যে, এতজন সাংবাদিক এই ভাবে নির্যাতিত হয়েছে। পুরো পরিস্থিতির ভয়াবহতার মধ্যে এটা হারিয়ে গেছে। সে কারণে এই রিপোটিংটা ধারাবাহিকভাবে হওয়া দরকার।’
এ সময় সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে সম্পাদকদের প্রতি আহ্বান জানান তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘দেশে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টা চলছে। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকা শহরে বিএনপির সমাবেশের নামে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে এবং কার্যত রাষ্ট্রের ওপর হামলা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা, হাসপাতালে, জাজেস কমপ্লেক্সে হামলা আগে কখনো ঘটেনি। রাষ্ট্রের ওপর এই হামলাকারীরা চিহ্নিত, তারা বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী। এটাকে নিছক রাজনীতি বলে এর দায় আমরা এড়াতে পারব না, ঐতিহাসিকভাবে ভুল হবে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গত কয়েক দশকেও পৃথিবীর কোথাও রাজনীতির নামে মানুষ পোড়ানো হয়নি। অথচ আপনারা টেলিভিশনে দেখেছেন একজন গাড়ির মালিক বিলাপ করে করে বলছেন যে, “বৌ আমার গাড়িটা জ্বালাইয়া দিছে”। বিএনপির যে দুস্কৃতিকারি গাড়িটা পুড়িয়ে দিয়েছে, তার বুকের বেল্টে “প্রেস” লেখাছিল। এভাবে সাংবাদিকদের মানহানি বা এবিউজ করা হয়েছে। এটার বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে হবে। এবং জনমত তৈরি করতে হলে এগুলো লিখতে, বলতে হবে। বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিবৃতি দিয়েছে, সবারই দেওয়া প্রয়োজন।’
সম্পাদকদের উদ্দেশে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশ্চর্য হয়েছি যে, কথায় কথায় যারা মানবাধিকারের কথা বলে, সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয়, কারও গালে একটা ঘুষি পড়ল সেজন্য বিবৃতি দেয়, এখন তাদের কোনো বিবৃতি দেখি নাই। তারা যে এখন নিশ্চুপ আছে সেজন্য আপনাদের বিবৃতি দিয়ে মনে করিয়ে দিতে হবে ‘‘হোয়াই আর ইউ সাইলেন্ট’’। আপনাদের সম্মিলিতভাবে চিঠি লেখা দরকার, তোমরা এখন নিশ্চুপ কেন। সেই চিঠি আবার গণমাধ্যমে প্রকাশ করা দরকার।’
দি ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘২৮ তারিখে অনেক সাংবাদিক আহত হয়েছে, গণমাধ্যমের যানবাহনও ভাঙচুর হয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আক্রমণ, পুলিশকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা, হাসপাতালে হামলা সেগুলো নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণকে আমরা মনে করি সংবাদপত্রের এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপরে আক্রমণ। ভীতিপ্রদ পরিবেশ সৃষ্টি করে সুস্থ সাংবাদিকতা হতে পারে না।’
সভায় ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, কালের কন্ঠের সম্পাদক শাহেদ মোহম্মদ আলী, ডেইলি সানের প্রধান সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।