নান্দনিক ও সুন্দর শেরপুর গড়তে এবং পর্যটন সমৃদ্ধ শেরপুরকে এগিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন শেরপুরের নবাগত জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম। পাহাড়, নদী, পর্যটন ও শস্যভান্ডার খ্যাত ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক শেরপুরের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। ওইসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।
যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলোকে চিহ্নিত করে সমস্যা নিরসনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ জন্য সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তিনি শেরপুরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।
আজ রাতে শেরপুর টাইমসের সাথে আলাপকালে শেরপুরকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন ভাবনার কথা জানিয়েছেন নবাগত জেলা প্রশাসক।
এ সময় তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, দায়িত্ব পালনকালে শেরপুরকে এখন নিজের জেলার মতোই ভাবছি। শেরপুরকে সামনের দিকে আরও এগিয়ে নিতে প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসেবে জনগণের সেবক হয়ে কাজ করতে চাই। জনসেবায় জেলা প্রশাসনের দৃশ্যমান অগ্রগতি সবাইকে দেখাতে চাই।
তিনি শেরপুরের উন্নয়নে তার সর্বাত্মক প্রচেষ্টার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, আমার প্রতিটি কার্যদিবস, প্রতিটি কর্মঘণ্টা শেরপুরের জন্য কাজে লাগাতে চাই। এজন্য শেরপুরবাসীকে সব সময় পাশে চাই।
এদিকে ২৪ জুলাই সোমবার বিকেলে বিদায়ী জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তারের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন তিনি। এরপর মঙ্গলবার সকালে জেলা কালেক্টরেট ভবন অঙ্গনে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণের মধ্য দিয়ে কর্মদিবস শুরু করেন তিনি। কর্মজীবনে তিনি একজন পরিচ্ছন্ন ও চৌকস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত।
আব্দুল্লাহ আল খায়রুম টাঙ্গাইল জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে এসএসসি ও এইচএসসিতে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ও প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর ২৫তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন।
কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট মাঠ পর্যায়ে রাজশাহী বিভাগে যোগদান করেন। পরে সহকারী কমিশনার (শিক্ষানবিশ) হিসেবে একই বছরের ২৪ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পঞ্চগড়ে চাকুরিজীবন শুরু করেন।
এরপর তিনি সহকারী কমিশনার হিসেবে গাইবান্ধা জেলায়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দিনাজপুরের বিরল উপজেলা এবং লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর এসাইনমেন্ট অফিসার এবং উপপরিচালক পদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে তিনি উপসচিব হিসেবে বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়ে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি চলতি বছরের ১০ জুলাই সরকারি আদেশে পদায়িত হয়ে ২৪ জুলাই শেরপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক থাকাকালীন তিনি প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত ঘর পরিদর্শনে শেরপুরে এসেছিলেন।
আব্দুল্লাহ আল খায়রুম দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তিনি দেশে বিসিএস প্রশাসন একাডেমি, শাহবাগ, ঢাকা হতে ৬৭তম আইন ও প্রশাসন কোর্স, বিপিএটিসি, সাভার হতে ৪৩তম বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্স, বিপিএটিসি, সাভার হতে ৬ষ্ঠ প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কোর্স ও মিলিটারি প্রশিক্ষণ অধিদপ্তর হতে ৫৭তম বিএমএ কোর্স সম্পন্ন করেছেন। তিনি বিদেশে ভারত থেকে ১৭তম মিড ক্যারিয়ার প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া তিনি সরকারি প্রয়োজনে চীন, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরব ভ্রমণ করেছেন।
কর্মজীবনে আব্দুল্লাহ আল খায়রুম দিনাজপুর জেলার শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পুরষ্কার অর্জন করেছিলেন। তিনি রংপুর বিভাগের শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন পোর্টাল নির্মাণের স্বীকৃতিস্বরূপ এটুআই থেকে পুরষ্কার অর্জন করেন। তিনি ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক কন্যা সন্তানের জনক। তার স্ত্রী তানজিমাতুন সাদিকা একজন গৃহিণী।