২৫ হাজার টাকার জন্য ব্যর্থ হবে শেরপুরের রমজানের স্বপ্ন?
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কুরুয়া নিমতলী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে রমজান আলী এবার নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও মাত্র ২৫ হাজার টাকার জন্য ভর্তি হতে পারছেন না। আগামী ৪ ডিসেম্বর ভর্তির শেষ দিন। এর মধে৵ ভর্তির টাকা জোগাড় করতে না পারলে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে তাঁর জীবনের সব স্বপ্ন আর এত দিনের পরিশ্রম। রমজান এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
রমজানের পৈতৃক বাড়ি শেরপুর পৌর শহরের তাতালপুর এলাকায় হলেও সেখানে কোনো জমিজমা নেই। তাই ছোটবেলা থেকেই শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহনীয়া ইউনিয়নের কুরুয়া নিমতলী গ্রামে নানা বাড়িতে থাকছেন। তাঁর বাবা রফিকুল ইসলাম গাজীপুর মহানগরীতে ফুটপাতে সবজি বিক্রি করেন। মা রওশন আরা ও ছোট বোন রোকসানা গাজীপুরের পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ২০১১ সালে অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা দিয়ে পেটের তাগিদে রমজানও গাজীপুরের পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ নিয়েছিলেন। এ সময় রমজানের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়।
অভাবের তাড়নায় লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী রমজানের পোশাক কারখানায় চাকরি নেওয়ার খবরটি জানতে পারেন ঝিনাইগাতী উপজেলার কালীবাড়ি এলাকার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অসহায় ও দরিদ্র শিক্ষার্থী উন্নয়ন সংস্থার’ (ডপ্স) প্রতিষ্ঠাতা শাহিন মিয়া। তিনি রমজানকে লেখাপড়ায় ফিরিয়ে আনেন। পরে ডপ্সের সহযোগিতায় ২০১২ সালে রমজানকে শ্রীবরদীর ভটপুর এইচইউ উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি এ সময় রমজান দরজির কাজ করে জীবন যাপন করেন।
রমজান ২০১৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু অর্থের অভাবে আবারও গাজীপুরে ফিরে যান। এবারও ডপ্স তাঁকে ফিরিয়ে এনে ময়মনসিংহ শহরের অ্যাডভান্স রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে ভর্তি করে দেয়। সেখানে তাঁকে বিনা পয়সায় লেখাপড়া করার সুযোগ করে দেওয়া হয়। রমজান ডাচ্-বাংলা ব্যাংক থেকেও একটি বৃত্তি পান। এ কলেজ থেকে ২০১৬ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন তিনি।
রমজান এ বছরের ১৩ মার্চ চট্টগ্রাম মেরিন ফিশারিজ একাডেমিতে ভর্তির সুযোগ পান। কিন্তু এখানে ভর্তির জন্য প্রয়োজন ছিল ৮৬ হাজার টাকা। দরিদ্র পরিবারের সন্তান রমজান এ টাকা জোগাড় করতে না পেরে আর সেখানে ভর্তি হতে পারেননি। কিন্তু এতে দমে যাননি তিনি। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন তিনি। এখানে ভর্তির জন্য তাঁর প্রয়োজন মাত্র ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু এবারও আগের মতোই শঙ্কায় রয়েছেন রমজান। আগামী ৪ ডিসেম্বর ভর্তির শেষ দিন। কিন্তু দরিদ্র বাবার পক্ষে রমজানের ভর্তির এ টাকা দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না। তাই রমজান সমাজের সহৃদয় ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভর্তির এই টাকাটা জোগাড় করতে। মেধাবী রমজান এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হতে পারলে তাঁর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সব স্বপ্ন ব্যর্থ হয়ে যাবে।
গত শুক্রবার রমজান কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার খুব ইচ্ছে পড়াশুনা করে দেশ ও জাতির সেবা করব। সেই সঙ্গে ভালো চাকরি করে সংসারের অভাব দূর করব। আমার মতো দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করব। কিন্তু শুধু টাকার জন্য আমার স্বপ্ন চূড়ান্ত পর্বে এসে আবারও আটকে গেল। এবার আমাকে যদি সমাজের সহৃদয় ব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ করে দেন, তাহলে চিরঋণী থাকব সবার কাছে।’ রমজানের সঙ্গে যোগাযোগের মুঠোফোন নম্বর: ০১৯২৮৫২৮২৪৩।