জনপ্রিয় অভিনেত্রী আরিফা জামান মৌসুমী সম্প্রতি গণমাধ্যমে মৃত্যুর আগে জীবনের কিছু শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। যেটি দেশব্যাপি আলোচিত হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
এবার মৌসুমীর সেই ইচ্ছাগুলো বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র পরিচালক মালেক আফসারী। তিনি তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে প্রিয়দর্শিনীকে এ পরামর্শ দেন।
এ পরিচালক চিত্রনায়িকা শাবানার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আপনি হজে চলে যান। হজ থেকে এসে আপনাকে আমরা শাবানা ম্যাডামের মতো দেখতে চাই। আপনি আড়াল হয়ে যান। পাশাপাশি কিছু টাকা ইনভেস্ট করে ওই ছবিগুলো কপি রাইট কিনে নেন। পরে জীবিতাবস্তায় সেগুলো ধ্বংস করে দিন। এর মধ্য দিয়ে নতুন জীবন শুরু করেন। শাবানা ম্যাডামের মতো করে নিজেকে সরিয়ে ফেলেন। উপরওয়ালা আপনাকে আরও উন্নতি দেবেন।
শাবানা ম্যাডাম যেভাবে আড়াল হয়ে গেছে। আপনিও সেভাবে আড়াল হয়ে যান। পাশাপাশি ফিল্ম ক্লাবের সদস্য থেকে সরে যান।
এর আগে মৌসুমী তার জীবনের শেষ কিছু ইচ্ছা ও ভাবনার কথা জানিয়ে বলেছিলেন— আমি যদি মরে যাই, আমার সব ভুলের জন্য ক্ষমা চাই সবার কাছে। ক্ষমা করে দেবেন আমাকে। আমার কয়েকটি ইচ্ছে আছে। আমি মারা যাবার পর, আমার লাশ যেন কাউকে দেখতে দেওয়া না হয়। অবশ্যই খুব গোপনে যেন কবর দেওয়া হয়। জানাজা হবে, কিন্তু আমি চাই না কেউ আমাকে আর দেখুক। আর মারা যাওয়ার আগে বড় হজ করার ইচ্ছে রয়েছে। আপনারা দোয়া করবেন আমার জন্য। আমার নিজের চেষ্টা তো রয়েছেই, সবার দোয়াও কাজে লাগে।
এ ছাড়া মৌসুমী অনুরোধ করেন, মৃত্যুর পর তার ছবিগুলো যেন সবার মুঠোফোন থেকে মুছে দেওয়া হয়। এমনকি টিভি চ্যানেলেও যেন ‘ধুমধাড়াক্কা’ কোনো ছবি দেখানো না হয়।
তার ভাষ্য, ‘আমি মারা যাওয়ার পর টিভিতে ধুমধাড়াক্কা ছবি বা জনগণ-দর্শকের কাছে আমার অনেক ছবি রয়ে গেছে, সেগুলো আপনারা যার যার মোবাইল থেকে ডিলিট করে দেবেন। ছবি যদি সংরক্ষণ করতে হয়, তা হলে অবশ্যই মৌসুমী আর্কাইভে আলাদাভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ছবি থাকলে সেখানে সংরক্ষণের জন্য জমা দিয়ে দেবেন। যদি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমার কোনো কাজ মনে হয় যে আর্কাইভে রাখলে ভালো হবে, গবেষণার জন্য প্রয়োজন আছে, তা হলে সে উদ্দেশ্যেই ছবিগুলো সংরক্ষিত হবে। অবশ্যই বাছাই ছবিগুলো আর্কাইভে রাখা হবে, ভালো উদ্দেশ্যে। এ ছাড়া অন্যসব ছবি ডিলিট করে দিলে ভালো হয়।
এমন ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য পরিচালক মালেক আফসারী বলেছেন, মৌসুমী আমার পরিচালিত ‘আমি জেল থেকে বলছি’ সিনেমার নায়িকা ছিলেন।
এ পরিচালক মৌসুমীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি যে সিনেমাগুলো দর্শকদের ডিলিট করতে বললেন, আপনার সিনেমাগুলো যে চলছে ইউটিউবে সেগুলোর সঙ্গে অনেক পরিবারের রুজি জড়িত। আমি একটি সিনেমার কথা বলি— আমি জেল থেকে বলছি সেটি মিনিমাম একত্রে চালায় ২০ জন। কেউ কারও বিরুদ্ধে কপিরাইট দেয় না। এতে মাসে মিনিমাম দেড় লাখ টাকা করে আয় হয় তাদের। এ দিয়ে এদের সংসার চলে। তবে এ ছবিগুলো ডিলিট করে দিলে তাদের সংসার চলা বন্ধ হয়ে যাবে ম্যাডাম (মৌসুমী)। বুঝেন না কেন?
মৌসুমীর উদ্দেশে তিনি বলেন, তবে আপনাকে আমি একটা পরামর্শ দিই— আপনি তো অনেক কামাইছেন, সুপারহিট ছিলেন, যশখ্যাতিও পেয়েছেন। কোনো কিছুর আপনার অভাব নেই। এখান থেকে কিছু টাকা ইনভেস্ট করে ওই ছবিগুলোর কপি রাইট কিনে নেন। পরে সেগুলো ধ্বংস করে দেন। আপনি নিজেও জানেন, রিজিকের তাগিদে আপনি মারা যাওয়ার পর কেউ ডিলিট করবে না।
মৌসুমীর আরেকটি শেষ ইচ্ছা হজে যাওয়ার সেটিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এ পরিচালক। মাহির প্রসঙ্গ টেনে এ পরিচালক বলেন, মাহি দুবার ওমরাহ করতে গেছে। দুবারই দুটা বিপদ হয়েছে। সেটিও উদ্ধার করেছেন মহান আল্লাহ। আপনিও হজে যান আশা রাখি আপনিও রহমত পাবেন।
এ পরিচালক আরও বলেন, আপনি ৩০ বছরে অনেক দিয়েছেন শিল্পকে। আপনার এগুলো অবশ্যই গবেষণায় কাজে দেবে। আপনার সব থেকে প্রিয় ছিল ইন্ডাস্ট্রি। তবে আমি বলব— আপনার প্রিয় না। যেহেতু সব কিছু ডিলিট করতে চাচ্ছেন। এটা আপনার ধর্মের সঙ্গে যায় না বলে উপলব্ধি হয়েছে।
পরিচালক বলেন, আমি জেল থেকে বলছি সেখানে যে অভিনয় করেছেন, সেটি দেখে আমি কান্না করেছি। আপনি হজে চলে যান। আড়াল হয়ে যান। খুব ভালো লাগবে ব্যাপারটা। কিন্তু আড়াল না হয়ে মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত যদি চলচ্চিত্রে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন সেটি খারাপ হবে আপনার জন্য। মৃত্যুর আগের দিন মিডিয়াতে নাচ গান করলেন, পর দিন সব মুছার অনুরোধ করলেন এটি কি সম্ভব? তার চেয়ে বরং নিজেকে আড়াল করে ফেলেন।
ধর্মীয় পথে যান। যদি মনে করেন এ পথটা খারাপ ছিল, যেটি বুঝতে আপনার ৩০ বছর লাগছে। ৩০ বছর অভিজ্ঞতার পর বলছেন আমি সব কিছু মুছে ফেলব। এটা কেমনে সম্ভব? আমার খারাপ কাজগুলো বা ছবিগুলো সরিয়ে ফেলব আর ভালোটুকু রাখব। তা হলে আমাদের উচিত হবে, সারাজীবন ভালো কাজটুকুই করতে হবে।