শেরপুরে কলেজ ছাত্রী গৃহবধূ আশরাফুন্নাহার লোপাকে নির্যাতনকারী স্বামী পুলিশের এসআই শাহীনুল ইসলাম সুজন এবার হঠাৎ করেই শ্বশুরবাড়িতে উপস্থিত হয়েছেন। তাঁকে দেখে লোপাসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন হতবাক হয়ে যায়।
পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে শাহীনুলকে নিয়ে যায়। শাহীনুল বলেছেন, মূলত লোপার কাছে ক্ষমা চাইতেই তিনি শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলেন।
লোপার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে তিন সহযোগীকে নিয়ে দুটি মোটরসাইকেলে চড়ে শেরপুর শহরের দমদমা মহল্লায় শ্বশুর আমিনুল ইসলামের বাড়িতে হাজির হয়ে এসআই শাহীনুল ইসলাম সুজন সরাসরি স্ত্রী লোপার ঘরে ঢোকেন। এ সময় লোপা তাঁকে দেখে ডাকচিৎকার শুরু করলে তাঁর মা-বাবাসহ পরিবারের লোকজন ছুটে এসে শাহীন ও তাঁর এক সহযোগীকে জাপটে ধরে। অপর দুজন মোটরসাইকেলে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করেন। এ সময় লোপার পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি পুলিশ সুপার মো. রফিকুল হাসান গণিকে মোবাইল ফোনে জানানো হয়। পরে এসআই শাহীনের বিরুদ্ধে শ্রীবরদী থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. আক্তারুজ্জামান ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে হাজির হলে তাদের হাতে শাহীনকে তুলে দেওয়া হয়। এ সময় শাহীন তদন্ত কর্মকর্তাকে জানান, তিনি হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়ে স্ত্রীর জামাকাপড় দেওয়ার জন্য শেরপুর এসেছেন। পরে তদন্ত কর্মকর্তা সেখান থেকে তাঁদের থানায় নিয়ে যান।
এ বিষয়ে আশরাফুন্নাহার লোপার মা সেলিনা আক্তার লাকী বলেন, ‘শাহীনকে আমাদের বাড়িতে দেখে হতবাক হয়ে গেছি। মামলা করায় সে আমার মেয়েকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে আরো তিন সহযোগীকে নিয়ে এসেছিল। ক্ষমা প্রার্থনা কিংবা কাপড়চোপড় দিতে আসার বিষয়টি তার সাজানো নাটক। ’ তিনি অবিলম্বে শাহীনসহ মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীবরদী থানার উপপরিদর্শক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘ভিকটিমের বাড়িতে মামলার আসামি এসআই শাহীনুল ইসলাম সুজনের উপস্থিতির বিষয়টি জানতে পেরে তাত্ক্ষণিক ঘটনাস্থলে যাই। পরে এসআই শাহীনকে সেখান থেকে আনার পর তিনি হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের কাগজ দেখানোর পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি এসআই শাহীনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, মূলত স্ত্রীর জামাকাপড় দেওয়ার জন্য শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন।
লোপার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় গত ১৪ জুন বুধবার তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে শেরপুর শহরের দমদমা এলাকার বাবার বাড়িতে নেওয়া হয়। বাবার বাড়িতেই এখন তিনি চিকিৎসাধীন।
উল্লেখ্য, অভিযোগ রয়েছে, ২০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবি পূরণ না হওয়ায় স্ত্রী লোপাকে গত ২২ মে রাতে মারধর করে গুরুতর জখম করেন তাঁর স্বামী শাহীনুল। শাহীনুলসহ তাঁর পরিবারের ছয়জনের বিরুদ্ধে শ্রীবরদী থানায় গত ৫ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের হয়। শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা ইউনিয়নের ঘোনাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শাহীনুল ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে উপপরিদর্শক পদে কর্মরত।
সুত্র:-কালের কন্ঠ/১৬জুন/২০১৭