শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্দা ইউনিয়নের হাতিবান্দা গ্রামে ‘মালিঝি নদীর’ উপর স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও নির্মিত হয়নি সেতু। ওইখানে বিধ্বস্ত সুইচ গেইটের পাশ দিয়ে নির্মিত সংযোগ সেতুর সাথে কাঠ ও বাঁশের সংমিশ্রণে নির্মিত সাঁকোটিও নড়বড়ে ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে এ পথে যাতায়াতকারী ৬ গ্রামের মানুষের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যেই ঘটে দূর্ঘটনা। ৬ গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবী মালিঝি নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের। এ দাবী এখন গ্রামবাসীদের প্রাণের দাবীতে পরিণত হয়েছে।
গ্রামবাসীরা জানায়, মালিঝি নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের কাছে বহুবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু আজো এ নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয়নি। ১৯৮৬ সালে মালিঝি নদীর উপর একটি সুইচ গেইট নির্মাণ করা হয়। সুইচ গেইটের পাশ দিয়ে নির্মাণ করা হয় সংযোগ সেতু। গ্রামের লোকজন বছর খানেক সময় ধরে এ সেতুর উপর দিয়ে পারাপার হলেও এক বছর যেতে না যেতেই পাহাড়ী ঢলে সুইচ গেইট ও সংযোগ সেতুটি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। পরে গ্রামবাসীরা ওই সংযোগ সেতুটি জোড়াতালি দিয়ে কোন রকমে যাতায়াত ব্যবস্থা চালু রাখেন।
দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ভাবে সাঁকোটির কোনো সংস্কার না হওয়ায় সেটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ কারণে মিরপাড়া, ধারারপাড়, হাতিবান্দা চকপাড়া ও প্রধানপাড়া গ্রামের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষ ওই ভাঙা ও নড়বড়ে সাঁকোর ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
এছাড়া এ সেতুর উপর দিয়ে কৃষিপণ্য, গবাদি পশু, রিক্সা, ভ্যান বা মোটর সাইকেল যাতায়াত করতে পারে না। যেকোনো সময় সাঁকোটি ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হলে এলাকার মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রেও উন্নয়ন সাধিত হবে।
হাতিবান্দা গ্রামের মুদি দোকানদার নজরুল ইসলাম (৪৫) আক্ষেপ করে বলেন, নির্বাচন এলে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা এ নদীর উপর সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে তাদের কাছে ভোট নেন। কিন্তু নির্বাচনের পর কোন জনপ্রতিনিধিরা তাদের আর খোঁজ-খবর নেন না। সাঁকোটির স্থলে একটি পাকা সেতু তৈরি করে দেওয়া হলে গ্রামবাসীর চলাচলে দূর্ভোগের অবসান হবে।
ওই গ্রামের রিক্সা চালক আব্দুর রহিম (৩২) বলেন, এখানে সেতু না থাকায় তার বাড়িতে রিক্সা রাতে নিয়ে যেতে পারে না। ফলে প্রতি মাসে ৪শ টাকা খরচে তার রিক্সা রাতে রাখার জন্য ভাড়া দিতে হয়।
হাতিবান্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সেলিম মিয়া (১০) বলেন, বর্ষা মৌসুম বা পাহাড়ী ঢলের সময় এ নদীটিতে প্রবল স্রোত থাকে। তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের সাঁকোটি পার হতে হয়।
হাতিবান্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নুরজাহান বেগম বলেন, প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে সাঁকোটি ভেঙে পড়ে। তখন আমার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত সংখ্যা কমে যায়।
হাতিবান্দা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন দোলা বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পরেই গ্রামবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নিকট আবেদন জানিয়েছি। গ্রামবাসীর কষ্ট দূর করতে এখানে জরুরী ভিত্তিতে একটি পাকা সেতু নির্মাণ দরকার।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী ফজলুল হক বলেন, মালিঝি নদীর ওপর পাকা সেতু নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে সেখানে সেতু নির্মাণ করা হবে।