ময়মনসিংহে শেরপুর সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় বেশিরভাগ সময় হাতির বিচরণ থাকে। ফলে ধান বা অন্যান্য ফসলে হানা দেয় হাতির দল। কিন্তু হাতির উপদ্রব থেকে বাঁচতে কাঁটা জাতীয় ‘বল সুন্দরী কুল ও কাশ্মেরি আপেল’ চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা। ইতোমধ্যে এসব চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন সেখানকার চাষিরা। আর এসব চাষ করতে পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিভাগ ও পরিবেশবাদীরা।
শ্রীবরদীর গারো পাহাড়ের কর্ণঝোড়া বাবলাকোনা গ্রামের কৃষক শামীম মোল্লা। পেশায় একজন সার বিক্রেতা। পাহাড়ি এলাকায় তার জমি আছে। সেই জমিতে ধান চাষাবাদ শুরু করেন তিনি। কিন্তু হাতির উপদ্রবে প্রতি বছর সেই ধান হাতির দল খেয়ে ও মাড়িয়ে নষ্ট করে। তাই তিনি শখের বশে ওই জমিতে জেলায় প্রথমবারের মতো চাষ শুরু করে বল সুন্দরী ও কাশ্মেরি আপেল কুল। অন্য সময়ে সাফল্য দিয়েছে ধরা। তার বাগানে এখন ঝুলে আছে কুল ও আপেল। ইতোমধ্যে বিক্রিও শুরু করেছেন তিনি।
শামীম মোল্লা জানান, গারো পাহাড়ে সব ধরনের ফসল নষ্ট করে বন্য হাতির দল। তবে বরই গাছ কাঁটাযুক্ত হওয়ায় হাতি দেখে ভয় পায়। তাই বরই চাষের পরামর্শ নিয়ে এক একর ২৫ শতাংশ জমিতে চাষ করি কাশ্মেরি আপেল ও বল সুন্দরী কুল। বল সুন্দরী কুল দেখতে ঠিক আপেলের মতো। ওপরের অংশে হালকা সিঁদুর রং, খেতে সুস্বাদু। ফলটি রসালো ও সু-মিষ্ট। বাউকুল ও আপেল কুলের সংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবিত এই কুল। স্থানীয়ভাবে বল সুন্দরী কুল বলা হলেও এটির প্রকৃত নাম বাউ-৩। তবে অনেকে বারমী কুল নামে এটিকে চেনে। অপরদিকে কাশ্মেরি আপেল কুলের রঙও ঠিক যেন আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের ওপর লাল, খেতে খুব মিষ্টি। দেখতে ঠিক ছোট সাইজের আপেলের মতো। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে এ গাছে ফুল আসে। ফল পরিপক্ব হয়ে থাকে জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে।
তিনি আরও বলেন, এই বাগানে ৪ শতাধিক কুলের চারা লাগিয়ে আমার দেড় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। আমি ইতোমধ্যে কুল বিক্রি শুরু করেছি। আমি আশা করছি কমপক্ষে সাড়ে ৩/৪ লাখ টাকার কুল বিক্রি করতে পারবো। আমার বাগান দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও এ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
তার বাগানে কর্মরত শ্রমিক ফজলুর রহমান বলেন, কুলের খেতে কাজ করতে আমার খুব ভালো লাগে। আর আমি তো আগে সারাবছর কাজ পাইনি। এখন সারাবছরই কাজ করছি।
প্রতিবেশী কৃষক মিখাইন বিশ্বাস বলেন, শামীম ভাইয়ের বাগান দেখতে খুব ভালো লাগছে। এই বাগানে হাতি আসে না, ফলও নষ্ট করে না। তাই আমি চিন্তা করছি আমার যতটুকু জমি আছে সবটুকুতে এই বাগান করবো। শামীম ভাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছি।
শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হুমায়ুন দিলদার বলেন, জেলায় এবারই প্রথম বল সুন্দরী চাষ গারো পাহাড়েই হয়েছে। অন্য কুলের চেয়ে এ দুই জাতের কুল চাষ করলে কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন। আমরা সব সময় কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের নানাভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। নতুন জাতের এ কুল চাষ করলে গারো পাহাড়ের কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। আর হাতির আক্রমণে ফসল নষ্টের আশঙ্কাও থাকবে না।