শেরপুরে এখনো প্রায় অর্ধেক জমির ধান কাটা বাকি। যেসব জমির ধান কাটা হয়েছে, তা-ও ঘরে তুলতে পারেননি অনেক কৃষক। এই অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে বৃষ্টি দেখা দিয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী আরও কয়েকদিন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এই অবস্থায় মাড়াইকরা এবং সিদ্ধ করা ধান শুকানো, খড় শুকানো নিয়ে বিপাকে পড়েছে এ অঞ্চলের কৃষকরা। ফসল নষ্টের শঙ্কায় রয়েছেন রবিচাষীরা।
জেলার সদর, শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, খেতে পাকা ধান থাকলেও শ্রমিক সংকটে পড়ে এখনো ধান কাটা হয়নি অনেকের। অনেকে আবার মাড়াই করা সিদ্ধ ধান নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। এসব সিদ্ধ ধান নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাদের কপালে। এভাবে বৃষ্টি চলমান থাকলে সিদ্ধ ধান নষ্ট হতে পারে। আবার অনেকের শুকনো খড়ের গাঁদা ভিজে গেছে। তাড়াতাড়ি শুকাতে না পাড়লে খড়গুলো পঁচে যাবে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গত মঙ্গলবার থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আর এতে কৃষকেরা শাক-সবজি ও রবি ফসলেরও ক্ষতির আশঙ্কাও করছেন।
সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের যোগিনীমুড়া গ্রামের কৃষক মেজবাউল ইসলাম বলেন, আমার প্রায় দুই একর জমির ধান কাটা হয়েছে। মাড়াইও করেছি। এখন বিপদে আছি সিদ্ধ ধান শুকানো নিয়ে আর খড়গুলো ভিজে গেছে, যদি খড় পঁচে যায় তাহলে গরু ত আর খাবে না।
শ্রীবরদী উপজেলার ঢনঢনিয়া ইউনিয়নের চরহাবর গ্রামের কৃষক আক্কাস উদ্দিন বলেন, আমার অর্ধেক জমির ধান কাটতে পেরেছি। শ্রমিক সংকটে পাকা ধান খেতে থাকলেও সব কাটা সম্ভব হয়নি। জন প্রতি ১ হাজার থেকে ১২ শ টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। আর হারভেষ্টার মেশিন আসছে, কিন্তু পানি খেতে মেশিন নামেনা। এখন শুনতেছি ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বেশ কয়েক দিন অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত থাকবে। তাই বাকি ধান কাটা নিয়ে চিন্তায় আছি। যদি ঝড় আসে, তাহলে ত সর্বনাশ হবে।
শ্রীবরদী সদর ইউনিয়নের কয়েকজন বাদামচাষী জানান, এভাবে টানা বৃষ্টি হলে খেতে পানি আটকে যাবে। এতে বাদামের ক্ষতি হবে।
ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের মাহমুদ আলি বলেন, ধান মাড়িয়ে রোদ দেখে সিদ্ধ করেছিলাম। সিদ্ধ করার পর থেকেই আকাশের অবস্থা খারাপ। এখন প্রায় ১৫ মণ ধান নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। রোদ না উঠলে এ ধানগুলোর চাউল গন্ধ করবে। ভাত খাওয়া যাবে না।
নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনার কৃষক শামসুল হক জানান, তার ধান মাড়ানো শেষ হলেও এখনো খড় শুকানো শেষ হয়নি। বৃষ্টিতে খড় নষ্ট হলে গরু আর সেগুলো খাবেনা। দুইটা দিন সময় পাইলেই তার কাজ শেষ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে জানান, অতিমাত্রায় বৃষ্টি না হলে রবি ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না। তবে বৃষ্টিপাত যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ফসলের ক্ষতি হতে পারে। এতে ধান মাড়াই ব্যাহত হবে এবং ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে।
আর রবি ফসলের জমিগুলোতে যেন দ্রুত পানি নেমে যেতে পারে এজন্য ছোট ছোট নালা করে পানি বের করে দেওয়ার পরামর্শ দেন কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা।