জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুরে প্রথমবারের মতো এসেই ‘নৌকা ও ট্রাকের ধাক্কায়’ জামানত হারালেন ভোটের মাঠে ১১ নতুন মুখ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের এক-অষ্টমাংশ ভোট না পাওয়ায় জামানত হারিয়েছেন এসব প্রার্থীরা।
শেরপুর-১ ও ৩ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও তাদের দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া অন্য প্রায় সব প্রার্থী আট শতাংশের কম ভোট পেয়েছেন।
আর ২ আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী বেগম মতিয়া চৌধুরীর সাথে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি অন্যান্য প্রার্থীদের। আর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টানা পাঁচবারের সংসদ সদস্য আতিউর রহমান আতিককে হারিয়ে জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানুয়ার হোসেন ছানুর বিজয় জেলার সবচেয়ে বড় চমক।
নির্বাচন কমিশনের আইন অনুসারে, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক প্রার্থীকে ২৫ হাজার টাকা জামানত হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। কোনো আসনে প্রাপ্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগের চেয়েও কম ভোট পেলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের জামানত হিসেবে রাখা টাকা বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার তথ্য অনুসারে, শেরপুর -১ (সদর) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতিউর রহমান আতিক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব ছানুয়ার হোসেন ছানু ছাড়া বাকি প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন। ছানুয়ার হোসেন ছানু ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯৩ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আতিউর রহমান আতিক নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৯৩ হাজার ৩৭ ভোট। ভোটের ব্যবধান হয়েছে ৪৩ হাজার ১০৩ ভোট।
সদরের এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২৩ হাজার ৬৬৪ জন। এদের মধ্যে ভোট প্রয়োগ করেছেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪১জন।
এ আসনে জামানত হারিয়েছেন জাতীয় পার্টির মাহমুদুল হক মনি। যিনি লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ২হাজার ৩০৭ ভোট। তৃণমূল বিএনপির ফারুক হোসেন, যিনি সোনালি আঁশ প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১৯২ টি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, যিনি নোঙ্গর প্রতীকে পেয়েছেন ১৭২ ভোট। বিএসপি’র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ, যিনি একতারা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭৪ ভোট। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বাউল শিল্পী বারেক বৈদেশী, যিনি গামছা প্রতীকে পেয়েছেন ২০৫ ভোট।
শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১১ হাজার ৬৯৫জন। এদের মধ্যে ভোট প্রয়োগ করেছেন ২লাখ ৩০হাজার ৬০জন। প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার ৫৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেগম মতিয়া চৌধুরী বিজয়ী হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ২ লাখ ২০ হাজার ১৪১ ভোট। প্রদত্ত ভোটের মধ্য মতিয়া চৌধুরী পেয়েছেন ৫৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। মতিয়া চৌধুরী ছাড়া বাকি সব প্রার্থীই জামানত হারিয়েছেন।
জামানত হারানো প্রার্থীরা হলেন জাসদ মনোনীত মশাল প্রতীকের প্রার্থী লাল মোহাম্মদ শাহজাহান লাল। যিনি মোট ভোট পেয়েছেন ৪হাজার ৫৭৬ ভোট, প্রদত্ত ভোটের মধ্য তিনি পেয়েছেন ১দশমিক ১২ শতাংশ। আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের সৈয়দ মুহাম্মদ সাঈদ আঙ্গুর। যিনি মোট ভোট পেয়েছেন ৫হাজার ৩৪২ভোট, প্রদত্ত ভোটের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ১দশমিক ২০ শতাংশ।
শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) সংসদীয় আসনে মোট প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। মোট ভোটার ৩লাখ ৮২ হাজার ৪শ জন। এদের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ১লাখ ৫২ হাজার ৮৯১ জন। যা মোট ভোটের ৪০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এডিএম শহিদুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব আব্দুল্লাহ-হেল-ওয়ারেজ নাঈম ছাড়া বাকি প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন। এডিএম শহিদুল ইসলাম নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ২হাজার ৪৪৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নাঈম ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ৪৬ হাজার ৭২৮ভোট। ভোটের ব্যবধান হয়েছে ৫৫ হাজার ৭২৮ ভোট।
এ আসনে জামানত হারিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল। যিনি ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ২হাজার ৫৮০ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান রাজা কেটলি প্রতীকে পেয়েছেন ৫২৭ ভোট। জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে সিরাজুল ইসলাম পেয়েছেন ৪৩৮ ভোট। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী সুন্দর আলী, গামছা প্রতীক নিয়ে ১৭২ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
এসকল প্রার্থীর জামানত হারানোর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সাধারণ ভোটাররা জানান, নতুন মানুষ ও নতুন নতুন দল সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। ঠিকমতো এসব প্রার্থীদের সাথে তাদের সম্পর্ক ও পরিচয় না থাকায় এমন ভরাডুবি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ বলেন, মতিয়া চৌধুরী দলের একজন হেভিওয়েট নেত্রী। তিনি নকলা নালিতাবাড়িতে ব্যপক উন্নয়ন করেছেন। তাই তার জনপ্রিয়তা এ অঞ্চলে ব্যপক জনপ্রিয়তা। এজন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা তেমন ভোট পায়নি।