শেরপুরের প্রান্তিক মানুষকে সচেতন করতে ও খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে দেশে প্রথমবারের মত কাজ করছে জেলা পুলিশের স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম। করোনা প্রতিরোধে ও সচেতনতা তৈরীতে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে জেলার ৫৮টি ইউনিটে কাজ করছে এই সংগঠনটির সদস্যরা।
এছাড়া প্রান্তিক মানুষের ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিতে শেরপুরের ১৪টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে পুলিশ সুপারের তত্বাবধানে গঠন করা হয়েছে করোনা ইমার্জিন্সি রেসপন্স টিম। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জেলার প্রত্যন্ত এলাকার খেটে খাওয়া মানুষকে একদিকে তারা করোনা সম্পর্কে সচেতন করছে, অন্যদিকে খাদ্যসামগ্রী হাতে দিয়ে ঘরে থাকারও নির্দেশনা দিচ্ছে। জেলা পুলিশের সহায়তা নিয়ে এখন পর্যন্ত আট হাজার পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করেছে তারা। এরই মধ্যে এই কার্যক্রম শেরপুরে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। দিনমজুরদের ঘরে রাখার এই মডেল অন্য জেলায় কার্যকর করার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের। এতে দেশের অধিকাংশ জেলায় লকডাউন পরিস্থিতির নিয়মাবলি শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব।
স্থানীয়দের মাঝে করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরী করতে স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া কোনভাবেই করোনা প্রতিরোধ সম্ভব নয়। তাই বিভিন্ন কলেনজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে এই ফোরাম গঠন করা হয়। যারা নিজেরা সচেতন হওয়ার পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও বাজারে সচেতনতা সৃষ্টি ও মানুষকে ঘরে পাঠানোর চেষ্টা করছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। শেরপুরের ১৪টির মতো সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন একসাথে কাজ করছে। এসব সংগঠন একত্রিত হয়ে করোনা পরিস্থিতিতে কাজ করতে একটি বিশেষ টিম করেছে। পুরো জেলায় তাদের অনেক সদস্য রয়েছেন। যাদের ঘরে খাবার সমস্যা সেই তালিকা তৈরি করছে ওই টিম। এরপর সেখানে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে তারাই। ঘরে খাবার না থাকলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বের হওয়ার চেষ্টা করবে। তাই তাদের ঘরে খাবার নিশ্চিত করা সবচেয়ে জরুরি।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, দুস্থদের মধ্যে খাবার সরবরাহ করতে ভ্রাম্যমাণ টিমও রয়েছে। দেখা গেল রাস্তায় কোনো রিকশাওয়ালা রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন। এরপর তাকে ডেকে তার পরিবারের সদস্য সংখ্যার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। পরিবারের সদস্যদের সাত দিনের খাবার দিয়ে তাকে ঘরে পাঠানো হচ্ছে। এমনকি জেলায় অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য পৃথক তালিকা করে খাবার সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, জেলে, সুইপার, কামার, হিজড়াদের তালিকা করে তাদের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ যারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন, এমন সচেতন শিক্ষার্থীদের নিয়ে দেশে প্রথমবারের মত স্টুুডেন্ট কমিউনিট পুলিশিং ফোরাম নামে একটি সংগঠন করেছে জেলা পুলিশ।
তথ্যমতে, শেরপুরে এখন পর্যন্ত পাঁচজন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। যেসব এলাকায় তাদের বসবাস সেই এলাকা এরই মধ্যে লকডাউন করেছে পুলিশ। তাদের পরিবারের সদস্যদের আইসোলেশনে রাখা হয়। এরপর করোনা আক্রান্তদের পরিবার যাতে খাবার, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো জিনিসপত্রের জন্য বেগ পেতে না হয়, সেই লক্ষ্যে তাদের বাসায় বাসায় গিয়ে পুলিশ মোবাইল নম্বর দিয়ে এসেছে। কোনো কিছুর দরকার হলে ওই নম্বর ফোন করছেন তারা।
শেরপুরের করোনা ইমার্জিন্সি রেসপন্স টিমের সমন্বয়ক শাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ চৌধুরী জানান, একশ’র বেশি স্বেচ্ছাসেবী করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। জেলা পুলিশের সহায়তায় কয়েক হাজার মানুষকে খাবার দেওয়া হয়েছে। একজন মানুষের হাতে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে যখন ঘরে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, তখন তিনি অনুভব করতে পারছেন ঘরে থাকাটা কত জরুরি। এমন কার্যক্রমের সফলতা দেখে একটি বেসরকারি সংস্থাও এগিয়ে এসেছে। তারাও একই প্ল্যাটফর্মে থেকে দুস্থদের সহায়তা করতে চাচ্ছে।