সরকারের কোন ধরণের অনুমোদন ছাড়াই শেরপুরের নকলায় চলছে ‘সিবিজি গ্যাস ফিলিং সেন্টার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ঢাকা শেরপুর মহাসড়কের পাশে অনুমোদনপত্র ছাড়া অরক্ষিতভাবে স্থাপিত এই গ্যাস ফিলিং সেন্টারে প্রশিক্ষিত কোন জনবল না থাকায় আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী। যদিও কর্তৃপক্ষের দাবী, এই ফিলিং সেন্টারের ব্যাপারে কোন নীতিমালা না থাকায় এটা চালানো হচ্ছে, এই প্রতিষ্ঠান চালাতে আদালতের অনুমতি আছে। আর জেলা প্রশাসন বলছে, সকল কাগজপত্র পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা যায়, ঢাকার ব্যবসায়ী মোঃ ওবায়দুল রহমান নকলা উপজেলার পাইস্কা গ্রামে শেরপুর-ঢাকা মহাসড়কের পার্শ্বে জমি ভাড়া নিয়ে গড়ে তুলেছে ‘সিবিজি গ্যাস সেন্টার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি অরক্ষিত, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের আবাসিক এলাকায় ব্যবসা চালিয়ে আসছে। সূত্র জানায়, তরল জ্বালানী গ্যাস বিক্রি ও সরবরাহ করার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হলে সরকারি ১১টি অনুমোদনের প্রয়োজন আছে এবং তা ব্যবসা করার পূর্বেই নিতে হবে।
যার মধ্যে জেলা প্রশাসকের অনাপত্তিপত্র, ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র, বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস লিমিটেড এর অনুমতি পত্র, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশনের লাইসেন্স, রোডস এন্ড হাই ওয়ের ইজারা পত্র, ট্রেড লাইসেন্স, তিতাস গ্যাস অফিসের সম্মতি পত্র, ট্রেড লাইসেন্স, তিতাস গ্যাস অফিসের সম্মতিপত্র, সিলিন্ডার টেষ্টিং রিপোর্ট, পৌরসভা অথবা ইউপি’র সম্মতি পত্র। কিন্তু কাগজপত্রাদি ছাড়াই একটি কাভার্ড ভ্যানে অনেকগুলো গ্যাস সিলিন্ডার রেখে প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। সম্প্রতি সময়ে গ্যাস লাইন লিকেজ হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। এতে এলাকাবাসী আতংকিত হলে তারা উপজেলা প্রশাসন বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। কিন্তু বন্ধের কিছুদিন পরেই আবারও এর কার্যক্রম শুরু করে কর্তৃপক্ষ। এতে করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে স্থানীয়রা। তাদের ধারণা যেকোন মূহুর্তে ঘটতে পারে বড় ধরণের দূর্ঘটনা।
স্থানীয়রা বলেন, আমরা খুব আতঙ্কে আছি। শুনেছি ইএনও সাহেব বন্ধ করে দিয়েছিলো। কিন্তু এখন আবার চলতেছে। পাশেই থাকা আরেকজন বলেন, কহন যে কি হয়; আল্লাহ যানে! আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।
সিবিজি গ্যাস ফিলিং সেন্টারের ব্যবস্থাপক মোঃ আবু সাঈদ মিয়া জানান, এটা সিএনজি গ্যাস নয় হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার গোকুলপুরে উৎপাদিত বায়োগ্যাস এবং এ বিষয়ে হাইকোর্ট রিট পিটিশন করা হয়েছে, যার রিট নং- ১৪৭১৩/২০১৭। আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতেই আমরা আমাদের কার্যক্রম চালাচ্ছি।
এদিকে শেরপুর শহরের এক সিএনজি ষ্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. উমর ফারুক গত ২ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক বরাবর দেয়া এক অভিযোগে জানান, যেকোন তরল জ্বালানী বিক্রি করতে হলে নিয়ম মাফিক কাগজপত্র থাকতে হবে এবং বৈধ কাগজপত্র ছাড়া গ্যাস এবং জ্বালানি বিক্রি করা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনী এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও অতিরিক্ত মূল্যে সিএনজি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে যা অন্যায়। তাই দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন সেই অভিযোগকারী।
ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে চাইলে নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, বিষয়টি অবগত হয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সব ধরণের অনুমতি নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে বলেছি। তারা আদালতের অনুমতি রয়েছে বলে জানিয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে খোঁজ-খবর নিচ্ছি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ বি এম এহছানুল মামুন বলেন, কি কাগজ মূলে সিবিজি গ্যাস সেন্টার নামে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসা চালিয়ে আসছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে ২০১৭ সালে হাইকোর্টের একটি রিট পিটিশন নিয়ে সিবিজি গ্যাস সেন্টারের মালিক ব্যবসা করে আসছে বলে শুনেছি। সরকারী অনুমোদন না নিয়ে যদি ওই সিবিজি গ্যাস সেন্টারে ব্যবসা চালিয়ে যান তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।