শেরপুরের প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও ভাষাসংগ্রামী সৈয়দ আব্দুল হান্নান (৮৬) আর নেই। তিনি মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারী) ভোর রাতে ঢাকার সিটি হাসপাতালে বার্ধক্য জনিত কারণে ইন্তেকাল করেন (ইন্না নিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহে রাজিউন)। মৃত্যকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও তিন মেয়েসহ অসংখ্য আত্মিয়স্বজন-গুনাগ্রাহী রেখে গেছেন।
মঙ্গলবার বাদ আসর শহরের শহীদ দারোগ আলী পৌর পার্ক মাঠে নামাজে জানাযা শেষে যথাযোগ্য মর্যদায় পৌর শহরের মধ্যশেরী এলাকার পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
এদিকে প্রবীণ এ শিক্ষাবিদের মৃত্যুতে শেরপুর ১ আসনের এমপি মো. আতিউর রহমান আতিক , পৌর মেয়র গোলাম কিবরিয়া লিটন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. আনিসুর রহমান, শেরপুর টাইমস সম্পাদক শাহরিয়ার মিল্টন, শেরপুর প্রেসক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক এস এ টিভি ও দৈনিক বর্তমান প্রতিনিধি মহিউদ্দিন সোহেল সহ জেলার সাংবাদিক মহল, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা গভীর শোক জানিয়েছেন।
ভাষাসংগ্রামী ও প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ হিসেবে সৈয়দ আব্দুল হান্নান ছিলেন শেরপুরের একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। ১৯৫২ সালে বগুড়ার আজিজুল হক কলেজে পড়ার সময় তিনি একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। সেসময় শেরপুরে সকল কর্মকান্ডের নেতৃত্বে যে ক’জন তরুন ছিলেন তাদের অন্যতম একজন তিনি । তার বড় ভাই ছাত্রনেতা সৈয়দ আব্দুস সোবহান ভাষা আন্দোলনে অংশ নেয়ার অপরাধে শেরপুর থেকে গ্রেফতার হন ।
ভাষা আন্দোলন ছাড়াও তিনি ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুথান এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাক হানাদার ও তাদের দেশিয় দোসরদের হাতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। ২০০৫ সালে ভাষাসংগ্রামী হিসেবে তিনি রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত হন ।
সৈয়দ আব্দুল হান্নান ১৯৩২ সালের ২৫ ডিসেম্বর শেরপুরে জন্ম গ্রহন করেন । বাবা সৈয়দ আব্দুল হালিম , মা রাবেয়া খাতুন । তিন মেয়ে ও দুই ছেলের জনক তিনি । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৫৬ সালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে এম.এ এবং ১৯৬৪ সালে এল.এল.বি পাশ করেন । ১৯৬৪ সালের ১৬ জুলাই তিনি শেরপুর কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৯৯ সালের ৩০ জানুয়ারি ওই কলেজ থেকেই অবসর নেন ।