শেরপুরে মধু চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যুক্ত প্রশিক্ষণ, দৃঢ় সংকল্প এবং প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে মৌমাছি পালন ও মধু চাষের মাধ্যমে অনেক পরিবার ফিরিয়েছে ভাগ্যের চাকা। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এ মধু।
জানা যায়, শেরপুরের নকলা উপজেলার মো. ফয়েজুর রহমান মাষ্টার ২০০০ সালে শেরপুরের বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২টি মৌ বক্স ও প্রশিক্ষন লব্ধ জ্ঞানকে পুঁজি করে তার মৌমাছি পালনের যাত্রা শুরু করেন। আস্তে আস্তে তিনি মৌ বক্স বৃদ্ধি করতে থাকেন। বর্তমানে ফয়েজুরের ১২০টি মৌবক্স রয়েছে। শুধু ফয়েজুর মাষ্টার নয়, এমন অনেকেই আছে মধু চাষের মাধ্যমে ফিরিয়েছে তাদের ভাগ্যে। শুধু সরিষার মৌসুম নয়, সারা বছরই সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড় এলাকার গজারী বনে বাক্সে মৌমাছি পালন করে মধু চাষ করছে বহিরাগত ও স্থানীয় ২ শতাধিক মৌচাষী। বড় আকারে যারা মৌচাষ করছে তাদের একশ থেকে আড়াইশ বাক্স রয়েছে। আবার অনেকেই পারিবারিকভাবে ২/৪টি বাক্সের মাধ্যমে মৌচাষ করছেন। উন্নত জাতের মেলিফেরা ও সিরেনা এ দু’টি জাতের মৌমাছি দিয়ে এখানকার চাষীরা মধু সংগ্রহ করছেন। একশত বাক্সে বছরে ৪-৫ টন মধু সংগ্রহ করা যায়। খরচ বাদ দিয়ে ৬-৭ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। গারো পাহাড়ের গজারি বনের মধুর কদর বেশি থাকায় অন্য এলাকার মৌচাষীরাও এখানে আসেন বাক্স নিয়ে। কিন্তু স্থানীয় ভাবে এত মধু বিক্রি করা সম্ভব হয়না। তাই বাংলাদেশ মৌ চাষী সমিতির মহাসচিব সাতক্ষীরার আফজাল হোসেনের মাধ্যমে কম মূল্যে ভারতসহ পাশ্ববর্তী কয়েকটি দেশে ওই মধু রপ্তানি করা হচ্ছে।
মধুচাষী মো. ফয়েজুর রহমান মাষ্টার বলেন, বন্ধুদেশ গুলোতে মধু রপ্তানির ও মধুচাষীদের ব্যাংক ঋণ ব্যবস্থা যদি সরকার সহজ করে দিতো তাহলে মধু উৎপাদনে মানুষ ঝুঁকতো বেশি। ফলে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে নজির ঘটাতে পারতাম।
ঝিনাইগাতীর প্রথম মধুচাষী গুরুচরণ দুধনই গ্রামের মো. আব্দুল হালিম বলেন, ৩টি বাক্স দিয়ে এ অঞ্চলে প্রথম মধুচাষী হিসাবে তার যাত্রা শুরু হয়। ৭ বছরে এসে এখন তার বাক্সের সংখ্যা দাড়িয়েছে দুইশতে। বছরে একশত বাক্সের জন্য খরচ প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে তিনি বছরে ১০ থেকে ১১ লাখ টাকা আয় করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশে ৪ প্রজাতির মৌমাছি রয়েছে। এপিস মেলিফেরা, এপিস সিরেনা, এপিস ডটসাটা, এপিস ফ্লোরিয়া। এরমধ্যে এপিস মেলিফেরা ও এপিস সিরেনা জাতের মৌমাছি বাক্সে পালন করে তারা মধু আহরন করছে।
ঝিনাইগাতীর রাংটিয়া গ্রামের মোহন মিয়া জানান, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন থেকে প্রশিক্ষণ শেষে তাকে মৌমাছিসহ ৭টি বাক্স প্রদান করা হয়। এখন তাঁর একশরও বেশি বাক্স রয়েছে। পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি মধু চাষ শুরু করেন। তিনি মনে করেন শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি মধু চাষে এগিয়ে আসেন তাহলে তাঁদের আর চাকরির পিছনে দৌড়াতে হবে না। এটি দিয়েই স্বাবলম্বী হওয়া যাবে।
জেলা খামারবাড়ীর উপ-পরিচালক, মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, মৌ চাষিদের প্রশিক্ষণ এবং মধু উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রশিক্ষণসহ সবধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।