সীমান্তঘেঁষা জেলা শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুবের দায়িত্ব পালনের এক বছর পূর্তি হয়েছে আজ। শেরপুরের পাঠকপ্রিয় অনলাইন গণমাধ্যম শেরপুর টাইমস পরিবারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের প্রতি উষ্ণ অভিনন্দন। প্রাক্তন জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেনের প্রস্থানের পর গত ৩১জুলাই শেরপুরের নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে আনারকলি মাহবুবের নামে অফিস আদেশ হয়। এরপর গত ৯আগস্ট ২০১৮ তিনি শেরপুরের জেলা প্রশাসকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুবের জন্ম রংপুর জেলায়। তিনি ২০তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসনে যোগদান করেন। শেরপুরে যোগদানের আগে তিনি অর্থমন্ত্রণালয়ের আইএনইডি বিভাগের উপসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং এক সন্তানের জননী।
শেরপুরে যোগদানের পরই তিনি গত ১৩আগস্ট শেরপুর জেলায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মতবিনিময় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রথম মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, “আমি রংপুরের মেয়ে হলেও এখন নিজেকে শেরপুরের বাসিন্দা মনে করি আর আমি প্রতিটি কার্য ঘন্টা শেরপুরের উন্নয়নে কাজ করবো।” পরবর্তী সময়ে প্রাক্তন জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেনের অসমাপ্ত সকল কাজ তিনি সম্পন্ন করেন।
শেরপুর শহরবাসীর জন্য চিত্ত বিনোদনের জন্য নির্মিত ডিসি উদ্যানের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বাহারি রঙের বাতির ব্যবস্থা করেন তিনি। যা দ্রুত সময়ের মধ্যে শেরপুরের প্রতিটি মানুষের নজর কাড়ে। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার বিষয়ে নজর দেন। প্রতিটি উপজেলাতে সে অনুযায়ী নির্দেশনার ফলে মাত্র এক বছরেই ৫০শতাংশ ভিক্ষুকমুক্ত করা সম্ভব হয়।
জেলা ব্র্যান্ডিং ও ইনোভেশনেও তিনি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যার ফলে বিভাগীয় পর্যায়ে ইনোভেশন প্রতিযোগিতায় প্রথম ও ৪র্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলায় শ্রেষ্ঠ ব্র্যান্ডিং জেলার গৌরব অর্জন করে শেরপুর। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত শুদ্ধভাবে জাতীয় সঙ্গীত চর্চা এবং মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী এবং বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং বন্ধে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে কলেজ পর্যায়ে এসেম্বলী চালুরও উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি।
পর্যটন সমৃদ্ধ শেরপুর জেলার অন্যতম পর্যটন স্পট গজনী অবকাশের লেকটি দীর্ঘদিন ধরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ায় মূল আকর্ষণ নষ্ট হয়ে স্থবির হয়ে পড়েছিলো। তিনি গজনী অবকাশের লেকটি পুনঃ খননের উদ্যোগ গ্রহণ করায় দ্রুত সময়ের মধ্যে গজনী তার মূল আকর্ষণ ফিরে পাবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
শেরপুরের তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) জনগোষ্ঠীদের জন্য স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করেছেন জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুব। তার সহযোগিতায় ও প্রচেষ্টায় শেরপুর শহরে হিজড়াদের উৎপাত লাঘব হয়েছে। হিজড়ারাও এখন জনশক্তিতে রুপান্তরিত হতে বিভিন্ন আত্মকর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।
জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুবের নির্দেশনায় এখন ভূমির রেকর্ডরুমসহ জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের প্রতিটি দপ্তরেই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। জমির পর্চা ও রেকর্ড জানতে যেখানে দীর্ঘ সময় লাগতো, সেখানে ই-পর্চার মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যেই সকল সেবা পায় সেবা প্রত্যাশী জনগণ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কোন ম্যুরাল না থাকায় শেরপুর জেলায় অস্থায়ী বেদীতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করতে হতো। জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুবের উদ্যোগে শেরপুর জেলা প্রশাসন চত্ত্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরাল স্থাপিত হয়েছে। যা শেরপুরবাসীর দীর্ঘদিনের একটি দাবী ছিলো।
শেরপুর জেলাবাসীর জন্য শেরপুরে রেল লাইন স্থাপন, মেডিকেল কলেজ ও একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য তিনি ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকদের কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ করেছেন। সর্বোপরি গেলো এক বছরে তিনি শেরপুরবাসীর উন্নয়নে একাধিক বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করায় শেরপুরের সর্বস্তরের মানুষের কাছে তিনি একজন প্রিয় অভিভাবক হয়ে উঠেছেন।