ভাষা আন্দোলনের ৬৭ বছর অতিবাহিত হতে চলছে। ভাষা আন্দোলনের প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রায় সবাই পরপারে চলেগেছেন। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের বাংলা ভাষার ইতিহাস জানতে হলে বই পড়া এবং শহীদ মিনার সম্পর্কে জানা আবশ্যক হয়ে পড়েছে; অথচ দেশে শতকরা গড়ে ৩০ ভাগ থেকে ৩৫ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। গ্রামে এর হার ৭ ভাগ থেকে ১২ ভাগ বা কিছু কম বেশি হতে পারে। যেমন শেরপুরের নকলা উপজেলায় শতকরা প্রায় ১০ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে (২২৭ টির মধ্যে ২৪টিতে শহীদ মিনার আছে)।
দেশে নতুন একটি জেলা নিয়ে ছোট-বড় ৬৫টি জেলা রয়েছে। এই ৬৫টি জেলাকে পাইলট প্রকল্পের আওতায় এনে পর্যায়ক্রমে প্রতিবছর একটি করে জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরী করার উদ্যোগ নেওয়া হতো, তাহলে ভাষা আন্দোলনের ৬৫ বছর পর হলেও আজ সব কয়টি জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ শেষ হতো। শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষার্থীরা মহান ভাষা আন্দোলনের চেতনা ও আন্তার্জাতিক মাতৃভাষার তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহি হচ্ছে না, এমনকি সঙ্গত কারনে সঠিক ধারণা নিতে পারছেনা। ফলে মাতৃভাষার ইতিহাস জানতে বর্তমান প্রজন্মকে বেগ পেতে হচ্ছে বা অনেকেই জানতে পারছেন না। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মরা মহান ভাষা আন্দোলনের চেতনা ও আন্তার্জাতিক মাতৃভাষার তাৎপর্য সম্পর্কে কতটুকু জানতে পারবে তা ভবিষ্যৎ বলে দিবে।
ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতিকে শহীদ মিনাররের মাধ্যমেই নতুন প্রজন্মদের মাঝে বর্ণনা করা সহজ হয়। পাশাপাশি শহীদ মিনার দেখে নতুনরা নানা প্রশ্নের মাধ্যমে বড়দের কাছথেকে জেনেনিতে আগ্রহী হয়। ২১ ফেব্রুয়ারির তাৎপর্যকে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সহজে তুলে ধরতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা জরুরি। তাছাড়া হাট-বাজারের প্রবেশ পথ ও বিভিন্ন চত্ত্বরে শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হলে ওইসব শহীদ মিনাররের মাধ্যমেই নতুন প্রজন্মরা মহান ভাষা আন্দোলনের চেতনা ও আন্তার্জাতিক মাতৃভাষার তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে সহজে জানতে পারবে বা জানার আগ্রহী হবে। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার নির্মাণ করার জন্য সরকারি ভাবে প্রয়োজনে পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়া যায় কিনা; এ বিষয়ে ভেবে দেখার জন্য সরকারের নীতি নির্ধারক ও সংশ্লিষ্টদের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
মো. মোশারফ হোসেন
শিক্ষক ও সাংবাদিক