“আমি কারো কাছে হাত পাতি নাই কোন দিনই; নিজের কষ্টে কামাই কইরে খাই। হোটেলে হোটেলে পানি বেচি; সেই ট্যাকা দিয়াই সংসার চালাই। লকডাউনে হোটেল বন্ধ; পানি না বেচতে পারলে চুলায় রান্না হয় না; দিনে এক বেলা খাইয়াই কাটাই”- কথা গুলো বলছিলেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার বন্দভাটপাড়া গ্রামের আছিয়া বেগম। স্বামীর মৃত্যুর পর চার সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম আছিয়া ঝিনাইগাতী সদর বাজারের হোটেলে হোটেলে পানি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন।
আছিয়া বেগমের একটি ভ্যান রয়েছে। সেই ভ্যানে করেই ড্রাম ভর্তি পানি নিয়ে বিভিন্ন চা ষ্টল ও হোটেলে সরবরাহ করে দিনে দুইশো থেকে তিনশো টাকা আয় করেন তিনি। বাজারে নিজে হেঁটে হেঁটে ভ্যান চালিয়ে দোকানে দোকানে পানি বিক্রি করেন আছিয়া বেগম। চলমান লকডাউনে চা ষ্টল বন্ধ থাকায় তার প্রয়োজনীয় অর্থ উপার্জন সম্ভব হচ্ছে না। এতে দুর্বিষহ দিন কাটছে আছিয়া বেগমের।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মাসুদ হাসান নামেরর এক স্থানীয় স্কুল শিক্ষক আছিয়া বেগমকে নিয়ে একটি পোষ্ট করেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই তিনি হোটেলে হোটেলে পানি বিক্রি করেই সংসারের হাল ধরেছেন। এখনো পাননি বিধবা ভাতা। তাই তার পরিবারের স্বামীহারা মেয়ে ও দুই নাতনীসহ চারজনের সংসার চলছে দুর্বিষহ কষ্টে। আছিয়া বেগম বলেন, “আগে দিনে ২শ/৩শ টাকার পানি বেচতাম। এখন তো সব বন্ধ। দোকানে কাষ্টমার নাই, তাই কেউ পানি কিনে না। কোন আয় রোজগার নাই। কোনমতো একবেলা খাইয়াই দিন চলতাছে। কবে যে এই করোনা ভালা হবো?”
হোটেল মালিক মিল্লাত মিয়া বলেন, “আছিয়া বেগম নিজে ভ্যানে করে ড্রাম ভরে বাজারের চা ষ্টল গুলাতে সাপ্লাই দেয়। প্রতি কলস পানি ৪/৫ টাকা করে বিক্রি করে। এখন তো সব চা ষ্টল বন্ধ। তাই তার দিন চালানো খুব কঠিন হয়ে পড়ছে। ওরে সরকারি ভাবে সহযোগিতা করা দরকার। ”
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম শেরপুর ৩৬০ ডিগ্রির এডমিন মেহেদী হাসান সাব্বির বলেন, “এই সমাজে শতশত পুরুষের মাঝে আছিয়া বেগম একাই সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। নিজে ভ্যানে করে বাজারে পানি বিক্রি করা এই সংগ্রামী নারী সমাজের জন্য একটি বার্তা বহন করে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তার জন্য বিধবা ভাতা ও বয়ষ্ক ভাতার ব্যবস্থা করা জরুরী।”
ভয়েস অব ঝিনাইগাতীর মুখপাত্র ও মানবাধিকারকর্মী জাহিদুল হক মনির বলেন, “এই সমাজে অনেক নারীই এখনো আত্মকর্মসংস্থান সম্পর্কে সচেতন নয়। স্বামীর মৃত্যুর পর সংসার চালাতে আছিয়া বেগমের এই প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার। তার এই দুঃসময়ে তার জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকারি খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি তার বিধবাভাতার ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ বলেন, “আমি দ্রুত সময়ের মধ্যে তার সাথে যোগাযোগ করে আর্থিক সহযোগিতা করবো এবং লকডাউন পরবর্তী সময়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তার বিধবা ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করে দেবো।”