রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস হলো রমজান। মুসলিম উম্মাহ্র সামনে আবারও হাজির পবিত্র রমজান। সেই খুশির বারতায় নেচে উঠেছে মুমিনের হৃদয়। কেননা রমজান হচ্ছে আল্লাহর মাস। সর্বত্র শান্তির আবহে তাই রমজানকে স্বাগত জানিয়ে উচ্চারিত হচ্ছে আহ্লান ওয়া সাহ্লান শাহরু রামাদান। রমজানকে স্বাগত জানাতে আল্লাহর রাসূল যে বিশেষ আয়োজন করতেন তা হলো-সাধারণত জনতাকে এই বরকতময় মাস আগমনের বিষয়ে সতর্ক করতেন।
রমজান বিশ্ব মানবের জন্য আল্লাহ তা’লার অনন্ত করুণার এক অন্যতম নিদর্শন। ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের তৃতীয়টি হলো রমজান মাসে রোজা রাখা। মানবকে মানবতার উচ্চাসনে আরোহন করাবার এক মহতি কর্মসূচির উদ্বোধনের জন্য রমজান মাসকে নির্ধারণ করা হয়েছে। মানুষের চরিত্রে যেসব মহৎগুণের সমন্বয় ঘটলে প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় এবং যে প্রক্রিয়ায় সিদ্ধিলাভ করতে সমর্থ হলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য লাভ করা যায় তারই প্রকৃষ্ট পদ্ধতি রমজানের সিয়াম সাধনা।
এই রমজান মাসেই রোজা তথা সিয়াম পালনের নির্ধারিত সময়। তাই বিশ্বজাহানের মুসলমানরা এই মাসেই একই নিয়ম-পদ্ধতিতে এবং একই নীতি অনুসারে টানা একমাস রোজাব্রত পালনে সচেষ্ট হন। সুবহে সাদিক অর্থাৎ সূর্যোদয়ের আগ থেকে
সূর্যাস্ত পর্যন্ত সর্বপ্রকার পানাহার, ইন্দ্রিয় তৃপ্তিমূলক কাজ এবং যাবতীয় অনাচার থেকে বিরত থাকার নামই রোজা ।
সিয়াম বা রোজা পালন ইসলামী জগতের রাজা-প্রজা, ধনী-দরিদ্র, ফকির-মিসকিন সর্বশ্রেণীর বয়ঃপ্রাপ্ত নর-নারীর ওপরই ফরজ (বাধতামূলক)। টানা একমাস সিয়াম পালন মানবকূলকে ত্যাগ, সংযম, তিতিক্ষা, সাম্য, মৈত্রী, পরষ্পর ভ্রাতৃত্ববন্ধন ও সহনশীলতার শিক্ষা দেয়। বিশেষত ইসলামী দুনিয়ার বিত্তবান ধনী সম্প্রদায় এই ব্রত পালনের মাধ্যমে সমাজের নিঃস্ব, গরিব-দুঃখীর ক্ষুধা-তৃষ্ণার জঠর জ্বালা-যন্ত্রণা কীরূপ তা আপন অভিজ্ঞতা দ্বারা হৃদয়ঙ্গম করতে সমর্থ হন। যেহেতু তারা চিরদিন সুখের অঙ্কে লালিত-পালিত, অভাব-অনটন এবং অনশনের দহনে কখনও পোড়েনি তারা ক্ষুর্ধাতের অন্তরের দুঃখ এবং অনশনক্লিষ্ট মানুষের দুঃখ-বেদনা কিরূপ তা বুঝতে পারেনি। তাই এই রমজানের সিয়াম পালনের মাধ্যমেই তা অবগত হন।
রমজান মাস সম্পর্কে একটি হাদিস এপর্যায়ে হাজির করা যেতে পারে। জনতার উদ্দেশে দেওয়া এটি রাসূলের একটি ভাষণ। হজরত সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত তিনি বলেন একদা আল্লাহ্র রাসূল (সা.) শাবান মাসের শেষ তারিখে এক বক্তৃতায় আমাদেরকে বললেন, হে লোক সকল! তোমাদের প্রতি ছায়া বিস্তার করেছে একটি মহান
মাস- মোবারক মাস, এমন মাস যাতে একটি রাত আছে যা হাজার মাস অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ এই মাসের রোজাসমূহকে করেছেন ( তোমাদের জন্য) ফরজ। যে ব্যক্তি এই মাসে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে একটি নফল কাজ করল, সে
ওই ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। এটা ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত। এটি সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। এটা সেই মাস যাতে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়। যে এই মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, এটা তার জন্য তার পাপরাশির ক্ষমাস্বরূপ হবে এবং দোজখের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। এছাড়া তার সওয়াব হবে সে রোজাদার ব্যক্তির সমান অথচ
রোজাদারের সওয়াবও কম হবে না। উপস্থিত সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি তো এমন সামর্থ্য রাখে না, যাদ্বারা রোজাদারকে ইফতার করাতে পারে ? রাসূলে কারীম (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা এই সওয়াব দান করবেন ওই ব্যক্তিকে যে রোজাদারকে ইফতার করায় এক চুমুক দুধ দ্বারা অথবা একটি খেজুর দ্বারা অথবা এক চুমুক পানি দ্বারা। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তিসহ খাওয়ায়, আল্লাহ তায়ালা তাকে হাওয (কাওসার) থেকে পানীয় পান করাবেন যার পর পুনরায় সে তৃষ্ণার্ত হবে না জান্নাতে প্রবেশ পর্যন্ত। এটা এমন মাস প্রথম ১০ দিন রহমত, মধ্যম ১০ি দন মাগফিরাত আর শেষ ১০ দিন হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি। আর যে এই মাসে নিজ দাস-দাসীদের (অধীনদের) প্রতি কার্যভার কমাবে আল্লাহ্ তায়ালা তাকে মাফ করে দেবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন। (মিশকাত) । হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আদম সন্তানের বিভিন্ন নেক কাজের সওয়াব ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ বৃদ্ধি
করা হয়, তবে রোজা ব্যতিক্রম, রোজা আমার জন্য রাখা হয়, আমি নিজে এর প্রতিদান দিবো। (বুখারি, মুসলিম) ।
তাকিয়ে থাকেন। আল্লাহর কোনও বান্দাই আল্লাহর রহমতের বাইরে নয়। তিনি সকলের জন্য সমান দয়াশীল ও মেহেরবান।
আদায় করুন। এবং বিশ রাকাত খতম তারাবিতে শরিক হোন। তারাবিহ বিশ রাকাত না আট রাকাত সেই বিতর্কে না জড়িয়ে বিশ রাকাত আদায় করার চেষ্টা করুন। ইবাদত যত বেশি করা যাবে, নেকির পাল্লা ততই ভারি হবে কোনও সন্দেহ নেই। রমজানের রোজা এবং অন্যান্য ফরজসমূহ আদায় করার পর নফলের প্রতিও যত্মবান হওয়া উচিত।
শাহরিয়ার মিল্টন , সম্পাদক : শেরপুর টাইমস