এ এম আব্দুল ওয়াদুদ:
পৃথিবীতে মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী,প্রত্যেক প্রাণিকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।সবাইকে পারি জমাতে হবে পরপারে যেখানে সবকিছু নির্ধারিত হবে ইহকালিন আমলের মাধ্যমে।কেয়ামতের মতো কঠিন দিনে তাঁরাই সফল হবে যাদের নেক আমলের পাল্লা ভারি হবে।
সদকায়ে জারিয়া হচ্ছে এমন একটি আমল যার মাধ্যমে নেক আমলের পাল্লা ভারি করা সম্ভব এবং কি মৃত্যুর পর যখন সব আমল বন্ধ হয়ে যায় তখনো এর আমলকারির আমল নামায় এর সওয়ার পৌঁছাতে থাকে।
হাদিসে বর্ণিত আছে, মানুষের মৃত্যুর পর সব আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়,শুধু তিনটি আমলের দরজা সবসময় খোলা থাকে।
১ সদকায়ে জারিয়া, ২ ইলম, যার দ্বারা মানুষের উপকার হয় ও ৩ সুসন্তান, যে পিতামাতার জন্য দোয়া করে। (সহিহ মুসলিম শরিফ)
সদকায়ে জারিয়া বা ‘সাদাকাতুন জারিয়াহ্’ একটি আরবি শব্দ।সদকা অর্থ দান করা আর জারিয়া শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রবাহমান, সাদকায়ে জারিয়া’ হচ্ছে এমন একটি আমল; যার প্রাপ্তি ততদিন থাকে; যতদিন ওই আমলের অস্তিত্ব থাকে এবং মানুষ সে আমল বা কাজ দ্বারা উপকার পেয়ে থাকে। যেমন- মসজিদ, মক্তব, মাদরাসা, ইয়াতিমখানা, হাসপাতাল, রাস্তা-ঘাট,বৃক্ষ রোপণ করা,জ্ঞান বিতরণ করা, ব্রিজ-কালভার্ট, গভীর নলকুপসহ সাধারণ মানুষের উপকারী ইত্যাদি জনকল্যাণকর স্থাপনা নির্মাণ করা।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন মুসলিমের ইলম শিক্ষা করা, অতঃপর তা তার মুসলিম ভাইকে শিক্ষা দেয়া সর্বোত্তম সদকা।
সদকায়ে জারিয়া সম্পর্কে সুনানে ইবনে মাজাহতে বর্ণিত হয়েছে,
نَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ وَهْبِ بْنِ عَطِيَّةَ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، حَدَّثَنَا مَرْزُوقُ بْنُ أَبِي الْهُذَيْلِ، حَدَّثَنِي الزُّهْرِيُّ، حَدَّثَنِي أَبُو عَبْدِ اللَّهِ الأَغَرُّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ “ إِنَّ مِمَّا يَلْحَقُ الْمُؤْمِنَ مِنْ عَمَلِهِ وَحَسَنَاتِهِ بَعْدَ مَوْتِهِ عِلْمًا عَلَّمَهُ وَنَشَرَهُ وَوَلَدًا صَالِحًا تَرَكَهُ وَمُصْحَفًا وَرَّثَهُ أَوْ مَسْجِدًا بَنَاهُ أَوْ بَيْتًا لاِبْنِ السَّبِيلِ بَنَاهُ أَوْ نَهْرًا أَجْرَاهُ أَوْ صَدَقَةً أَخْرَجَهَا مِنْ مَالِهِ فِي صِحَّتِهِ وَحَيَاتِهِ يَلْحَقُهُ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِ ”
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈমানদার ব্যাক্তির মৃত্যুর পর তার যেসব কাজ ও তার যেসব পুণ্য তার সাথে যুক্ত হয় তা হলঃ যে জ্ঞান সে অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং তার প্রচার করেছে, তার রেখে যাওয়া সৎকর্মপরায়ণ সন্তান, কুরআন যা সে ওয়ারিসী সূত্রে রেখে গেছে অথবা মাসজিদ যা সে নির্মাণ করিয়েছে অথবা পথিক-মূসা ফিরদের জন্য যে সরাইখানা নির্মাণ করেছে অথবা পানির নহর যা সে খনন করেছে অথবা তার জীবদ্দশায় ও সুস্থাবস্থায় তার মাল থেকে যে দান-খয়রাত করেছে তা তার মৃত্যুর পরও তার সাথে (তার আমলনামায়) যুক্ত হবে।
সদকায়ে জারিয়ার কাজগুলো হতে পারেঃ
১.এতিম বা কোন বিধবা নারীর প্রতিপালনের দায়িত্ব গ্রহণ করা।
২.বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা।
৩.বিনামূল্যে কাউকে রক্ত দানকরা।
৪.মসজিদ/মাদরাসা নির্মাণ করা বা মসজিদের প্রয়োজনীয় আসবারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা।
৫.বৃক্ষ রোপণ করা।
৬.জনকল্যাণমূলক কোন কাজ করা।
৭.দাতব্য চিকিৎসালয়/হাসপাতাল নির্মাণ করা বা তার কোন কিছুতে অংশিধার হওয়া কিংবা চিকিৎসা সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দেওয়া।
৮.অসহায় মানুষের বাসস্থান বা কর্মের ব্যবস্থা করা।
৯.কোরআন শিক্ষা দেওয়া বা কোরআন শিক্ষা ব্যবস্থাপ করে দেওয়া।
১০.কবরস্থানের জন্য জমি দান করা কিংবা জমি ক্রয়ে আর্থিক সহায়তা করা। মৃতদের সৎকারের খরচ জোগানো।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নিঃস্বার্থভাবে জনকল্যাণে কাজ করার তাওফিক দান করুন। মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য নেক আমল তথা সাদকায়ে জারিয়ার কাজ করে যাওয়ার তাওফিক দান করুন।
আমিন।
লেখক: শিক্ষার্থী ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা।