ঈদ মানে স্বজন বন্ধু আর কাছের মানুষ নিয়ে আনন্দঘন এক উদ্যাপন। ঈদ মানে নতুন জামা পড়ে, সেজে ঘুরে বেড়ানো। ঈদ মানে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা। তবে কোথাও কোথাও দায়িত্বের কাছে এসে থমকে দাঁড়ায় উদ্যাপনের অনাবিল স্রোত। উৎসবের এই দিনটিতেও মাথাগুঁজে কাজ করে যেতে হয় কাউকে কাউকে।
উৎসবে প্রিয় মানুষকে কাছে পেয়ে সবাই আনন্দে মেতে উঠলেও ছুটি মেলে না হাজারো মানুষের। পেশাগত দায়িত্ব পালনে তাদের তৎপর থাকতে হয়। দায়িত্বের বোঝা নিয়ে উৎসব আনন্দের ঊর্ধ্বে থেকে চলে তাদের ঈদ আনন্দ।
পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে সবাই যখন ঈদের খুশি ভাগাভাগিতে ব্যস্ত তখন শেরপুরের বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মীদের ঈদ আনন্দ চলে পেশাগত দায়িত্বের মধ্যে দিয়ে। ঈদে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সব সময় তৎপর থাকতে হয় হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সদের ও পরিচ্ছনা কর্মীদের। শুধু তারাই নয় একইভাবে তৎপর থাকতে হয় এ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার, ফায়ার সার্ভিস ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেশি কিছু পেশার মানুষদের।
৪২ বছর বয়সি ইলিয়াস মিয়ার বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে। শেরপুরে একটি বেসরকারি ব্যাংকে প্রহরীর কাজ করেন। গত বছর মিললেও এবার ঈদে মিলেনি ছুটি। তাই পরিবার পরিজন ছেড়ে ঈদ করছেন কর্মস্থলেই। তিনি বলেন, ‘ছেলে সন্তান মা বাবা স্বজন রেখে বাইরে ঈদ করা সত্যিই কষ্টের। তবুও জীবিকার তাগিদে করতে থাকতে হয়।’
শেরপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সেও ছুটি পায়নি অনেকেই। কথা হয় ফায়ার সার্ভিসের শেরপুরের উপসহকারী পরিচালক জাবেদ মোহাম্মদ তারেকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেকের ছুটি হয়নি ঈদে। দেশ ও জনগণের কাজে আমরা সবসময় নিজেদের মেলে ধরতে চাই। আমাদের কর্মীরা কর্মস্থলে তাদের দায়িত্বের মাঝেই ঈদের আনন্দ খুঁজে নেয়। যদিও পরিবার পরিজন ছেড়ে বহুদূর একা ঈদ মানে কষ্টের হয়।’
শেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের সেবা করছে মারুফা আক্তার নামের এক নার্স। পরিবার ছেড়ে বাইরে ঈদ উদযাপনের অনূভুতি জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মা বাবা ভাই বোন ছাড়া ঈদ কাটানো, কতটা খারাপ লাগছে; যারা এভাবে ঈদ কাটায় কেবল তারাই বলতে পারবে। সবাইকে ছেড়ে রোগীদের সেবা দেওয়ার মাঝেই ঈদের আনন্দ খুঁজে নিচ্ছি। যদি স্টাফরা সবাই ছুটিতে যায়, তাহলে রোগীদের পাশে থাকবে কে।’
হাসপাতালের গেইটে সারিবদ্ধ অ্যাম্বুলেন্স। ড্রাইভার মিসকিন মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, কখন কোন রোগীকে ময়মনসিংহ বা ঢাকায় এখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠায়; সে কারণে আমরা নিজেকে প্রস্তুত রেখেছি। এসব রোগীদের ময়মনসিংহ বা ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য।
একইভাবে কথা হয় বেশকয়েকজন পরিচ্ছন্ন কর্মীর সঙ্গে। তারা ঈদের দিন সকালে কাজ করছেন। তারাও জানান, দায়িত্ব আগে; পরে ছুটি। তাই ঈদের দিন সকালেও ডিউটি করছেন।
খোয়ারপাড় শাপলা চত্বরে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য। কলেজ মোড় ও নিউমার্কেট মোড়েও দারিত্বে আছেন অন্য সদস্যরা। তারা বলেন, জনসাধারণের সেবার মধ্য দিয়েই নিজেদের ঈদ আনন্দ খুঁজে পাচ্ছি। যদিও মা বাবা পরিবার পরিজন ছেড়ে থাকাটা খারাপ লাগছে।
শেরপুর-জামালপুর সেতুতে কথা হয় সময় টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম হিরার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তিতাস গ্যাস সংযোগ শেরপুরে হঠাৎ করেই বন্ধ। তাই অফিস থেকে লাইভ ছিল। আমি প্রস্তুতি নিয়ে লাইভের জন্য এখানে এসেছি। আসলে আমরা যারা মফস্বলে কাজ করি, তাদের ছুটি তেমন একটা নেওয়া হয় না। তবে সবসময় নিজেকে অফিসিয়ালি যে কোনো নির্দেশ পালনে প্রস্তুত রাখি।’
শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘দায়িত্বের মাঝেই আমরা ঈদ আনন্দ খুঁজে নেই। ঈদেও শহরের মানুষের নিরাপত্তায় আমাদের সদস্যরা কাজ করছে। তবে পরিবার স্বজন এলাকাবাসী থেকে দূরে ঈদ করাটা একটু বেদনাদায়ক হয়। তবুও জনসাধারণের সেবা দেওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা তৃপ্তি পাই।’