এক কোটির বেশি জনসংখ্যার নগরী ঢাকা। মানুষের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ি, কিন্ত রাস্তা বাড়ানোর সুযোগ তো নেই। ফলে নগরবাসীর নিত্য সঙ্গী যানজট।
রাজধানীর যানজট এড়ানোর বিকল্প হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। কোন সিগন্যাল বা বাঁধা ছাড়াই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বিমানবন্দর থেকে যাওয়া যাবে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে। আগামী ২ সেপ্টেম্বর এক্সপ্রেসওয়েটির বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের দিন থেকে টোল দিয়ে চলবে যানবাহন। এটি চালু হলে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট যাওয়া আসা করতে সময় লাগবে মাত্র ১০ মিনিট।
সরকারের আশা, পুরো প্রকল্পটি চালু হলে রাজধানীর যানজট অনেকটাই কমে আসবে। পাশাপাশি কমবে ভ্রমণ খরচ, বাঁচবে সময়।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ শামসুল হক বলেন, ‘তেজগাঁও হয়ে হলিক্রসের পাশ দিয়ে খামারবাড়িতে নামবে। তারা যদি ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর যাওয়অ আসা করেন তারা কিন্তু বেনিফিটেড হতে পারেন। আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটা যদি হয়ে যায় তাহলে কিন্তু ঢাকাকে বাইপাস করার জন্য এটা একটা চমৎকার ব্যাকবোন হতে পারে।’
সেতু বিভাগের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি নির্মাণের চুক্তি সই হয়েছিল ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারী। পরে ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর চুক্তি সংশোধন করা হয়। প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি। পুরো প্রকল্পটির নির্মান শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালের ৩০ জুন।
দেশে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) যে অবকাঠামো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে তার মধ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সবচেয়ে বড়। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এরমধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা বা প্রাক্কলিত ব্যয়ের ২৭ শতাংশ। বাকি টাকা দেবে নির্মাতা কনসোর্টিয়াম।
প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে কাজপ্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে কাজ
যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে, থাইল্যান্ডের ইটালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড, চীনের শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ (সিএসআই) এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড।
এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গঠন করা হয়েছে ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) নামের একটি বেসরকারি কোম্পানি। প্রকল্প বাস্তবায়ন পরবর্তী ২১ বছর টোল আদায় করবে এ কোম্পানি।
মূল এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছে ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। ওঠানামার জন্য এতে থাকছে ৩১ টি র্যাম্প। এগুলোর দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার। সে হিসেবে এক্সপ্রেসওয়েটির মোট দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। উড়াল এই এক্সপ্রেসওয়ে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে যুক্ত করবে। এছাড়াও এটি বনানী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ীকে সংযুক্ত করবে।
এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার জন্য থাকছে ১৫ টি র্যাম্প। এই র্যাম্পগুলো ব্যবহার করে বিমানবন্দর, কুড়িল ইন্টারচেঞ্জ, আর্মি স্টেডিয়াম, সৈনিক ক্লাব, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ অ্যাভিনিউ, বিজয় সরণি, সোনারগাঁও মোড়, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, শনির আখড়া এবং পলাশী মোড় থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা যাবে।
অন্যদিকে, এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামার জন্য থাকছে ১৬ টি র্যাম্প। এগুলো ব্যবহার করে বিমানবন্দর, কুড়িল ইন্টারচেঞ্জ, সেনানিবাস, আর্মি স্টেডিয়াম, সৈনিক ক্লাব, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ অ্যাভিনিউ, সোনারগাঁও মোড়, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, শনির আখড়া, ইন্দিরা রোড ও পলাশী মোড় দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামা যাবে।
মোট তিন ধাপে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এরমধ্যে প্রথম ধাপে শেষ হওয়ার কথা শাহজালাল বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা হতে বনানি রেল স্টেশন পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার সড়ক। দ্বিতীয় ধাপে বনানি রেল স্টেশন হতে মগবাজার রেল ক্রসিং পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার এবং ৩য় ধাপে শেষ হবে মগবাজার রেল ক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত অবশিষ্ট অংশ।
সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, ‘যে র্যাম্পগুলো নেমে আসবে সেখানে আমরা যদি একেবারে ট্রাফিক আইন ও শৃঙ্খলাটা যদি মেনে চলি, ওঠা ও নামার বিষয়গুলো যদি আমরা তদারক করতে পারি তাহলে হয়তো এটার সুফলটা আমরা আরও ভালো ভাবে পেতে পারি।’
এবার কি কমবে যানজট?এবার কি কমবে যানজট?
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল সর্বোচ্চ ৪০০, সর্বনিম্ন ৮০ টাকা: কাদেরএলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল সর্বোচ্চ ৪০০, সর্বনিম্ন ৮০ টাকা: কাদের
এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টোল আদায়ের জন্য থাকবে ১১টি টোল প্লাজা। এরমধ্যে ৫টিই থাকবে এক্সপ্রেসওয়ের উপরে। ধারনা করা হচ্ছে এটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলবে।
এতে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি হবে ধরা হয়েছে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েটিতে তিন চাকার যান, মোটরসাইকেল, সাইকেল ও পথচারীরা উঠতে পারবেন না।
এক্সপ্রেসওয়ের সর্বনিম্ন টোল নিধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। ব্যক্তিগত কার, জিপ, মাইক্রোবাসের মতো হালাকা যানবাহনকে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার এই হারে টোল দিতে হবে। সর্বোচ্চ ৬২৫ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ চাকার বেশি বড় ট্রাকের জন্য।
এক্সপ্রেসওয়েটির টোল নির্ধারণের ক্ষেত্রে হালকা শ্রেণীর যানবাহনকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে। সে অনুযায়ী এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করা বাসের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০ টাকা। আর ছয় চাকা পর্যন্ত ট্রাকের জন্য টোল ধরা হয়েছে ৪০০ টাকা।