বাল্যবিবাহ ও মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে সচেতনেতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সাইকেলে সারাদেশ ভ্রমণে বের হয়েছে লালমনিরহাটের ১৫ বছর বয়সী কিশোর নাহিদ হাসান।সে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারি উপজেলার ভেলাবাড়ী গ্রামের আব্দুল লতিফ ও লাইলী বেগম দম্পতির ছেলে। তিন ভাই বোনের মধ্যে নাহিদ বড়। ভেলাবাড়ী স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০১৭ এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ফলাফলের অপেক্ষায় সে।
গত ১২ এপ্রিল লালমনিরহাট থেকে সাইকেলে দেশ ভ্রমণের লক্ষ্যে ৬ বন্ধু মিলে রওয়ানা করেন রংপুর অভিমুখে। বৈরী পরিবেশ ও বিভিন্ন প্রতিকূলতায় ৩ দিন পর ৫ বন্ধু পিছু হটেন। ফিরে যান লালমনিরহাট। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী কিশোর নাহিদ হাসান লক্ষ্য পূরণে সামনে চলতে থাকেন।
ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলা ভ্রমণ শেষে ২০তম জেলা হিসেবে গেল ২৪ তারিখ রাতে তিনি পৌঁছেন শেরপুর জেলায়। শেরপুরে পৌঁছতে সন্ধ্যা হওয়ায় জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করতে পারেননি তিনি। রাত্রি যাপন নিয়ে পড়েন বিড়ম্বনায় । বাধ্য হয়ে যোগাযোগ করেন শেরপুর সদর থানায় । সেখানে জনৈক ভদ্রলোকের মাধ্যমে শেরপুর টাইমস টিভির বিভাগীয় সম্পাদক ইমরান হাসান রাব্বীর সাথে পরিচিত হন। রাত্রীযাপন করেন সাংবাদিক ইমরানের বাসায়। ২৫ তারিখ শেরপুর জেলা প্রশাসক ডা. মল্লিক আনোয়ার হোসেন ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমানের সাথে দেখা করে নেত্রকোনা জেলা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন।
রাত্রি যাপনের প্রাক্কালে কথা হলে তিনি জানান, শিশুরা স্বাধীনভাবে কিছু করতে পারবে, অনুকূল পরিবেশে তাদের দাবিগুলো পূরণ হবে এবং আগামী এ প্রজন্মকে বাঁচানোর জন্য তাঁর এ উদ্যোগ। তিনি ভ্রমণকালীন বাল্যবিবাহ ও মাদকের ক্ষতিকারক দিক স্থানীয় জনগনের মাঝে তুলে ধরে এর প্রতিকার করার আহ্বান জানান এবং সাইকেল চালানোর উপকারিতা সম্পর্কেও জনগণকে সচেতন করেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, সাইকেলের গতি ধীরসম্পন্ন হওয়ায় মানুষের কাছে তাঁর প্রচারিত বার্তাগুলো দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে বলেই আমি সাইকেলে পুরো দেশ ঘুরতে চাই। জানান দিতে চাই মাদকের কুফল ও বাল্যবিবাহের খারাপ দিক গুলো ।
এত অল্প বয়সে হঠাৎ দেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা কেন সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যখন ৫ম শ্রেণি থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তির্ণ হয় তখন আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। আমি বিভিন্ন কাজ শুরু করি। হঠাৎ আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক,টিভি ও জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত সাইক্লিষ্ট ডা. ক্ষিতিশ চন্দ্র বর্মণ আমাকে ডেকে বলেন, সাইকেল দিয়ে বিভিন্ন খেলা শিখে এর মাধ্যমে টাকা রোজগার করে লেখাপড়া ও পরিবারের খরচ চালাতে। আমার কাছে কথাটা ভালো লাগে। আমি স্যারের কাছে তালিম নেয়া শুরু করি । বিভিন্ন স্কুল, কলেজ বা প্রতিষ্ঠানে সাইকেল দিয়ে খেলা দেখিয়ে যে টাকা রোজগাড় হতো তা দিয়ে লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি পরিবারের প্রয়োজনে টাকা দিতে পারি। এখন আমি সাইকেল দিয়ে ২২৫ ধরনের খেলা পারি এবং প্রায় ৩ হাজার ধরনের ম্যাজিক পারি।
২০ জেলা ভ্রমণকালীন মজার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিটি জেলা থেকে আমি আসার সময় অনেকেই সাইকেল চালিয়ে আমার সাথে অনেক দূর পথ এসেছেন। সবাই একসাথে ভ্রমণ করতে ভালো লেগেছে। যমুনা সেতু পার হবার সময় আইনী জটিলতায় পরতে হয়েছে। অনেক অনুরোধ করার পরেও আমাকে সাইকেল চালিয়ে পার হতে দেয়নি। অবশেষে আমাকে ও আমার সাইকেল পুলিশের পিকাপ ভ্যান দিয়ে পার করে দিয়েছে।
নিজ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, হেডস্যার (ডা. ক্ষিতিশ চন্দ্র বর্মণ) ১৯৯৫ সালে সাইকেলে দেশ ভ্রমণ করেছেন, তিনি আমাকে এসএসসির পর দেশ ভ্রমণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দিয়েছেন। উনার উদ্যেগে দেশ ও দশের কল্যাণে বাল্য বিবাহ ও মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে আমি এখন দেশ ভ্রমণ করছি। যদিও নিজ খরচে দেশ ভ্রমণ কষ্টসাধ্য তবুও পুরো দেশ ভ্রমণ শেষেই ঘরে ফিরবো ইনশাআল্লাহ। সুযোগ হলে বিশ্বভ্রমণেও বের হবো।