নাঈম ইসলাম, শেরপুর: শহরের অলি-গলি, রাস্তার মোড়, গ্রাম্যহাট-বাজার কিংবা বাড়ির উঠান; অপরিছন্ন সাজ-পোশাক, এলামেলো চুল আর অগোছালো অলংকার পরিহিত কিছু ছেলেমেয়েকে দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের বাক্স ও পোঁটলা-পুঁটলি থেকে সাপ বের করে খেলা দেখাতে, গাছের ছাল-বাকল, লতা, পাতা তাবিজ, কবজ, মাদুলী বিক্রি করতে।
বেদে মানে ভবঘুরে। দেশে দেশে যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়ায় এখানে-ওখানে তারা। বেঁচে থাকার জন্য বিচিত্রসব পেশা, বৈচিত্রময় জীবনশৈলী তাদের।
দেশ এখন উন্নয়নের মহাযাত্রায়। বদলে গেছে দেশ, বদল ঘটেছে আমাদের চিন্তা-চেতনায়। কিন্তু তাদের হাল-হকিকত ঠিক তেমনই আছে। বেদেদের ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগই পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত।
সম্প্রতি, চরশেরপুর মৃগী নদীর তীরে ১৫-২০ টি তাঁবু গেড়েছে একদল বেদে। কথা হয় বেদে কন্যা নূর-জাহানের সাথে। নূর-জাহান বলেন, সারাদিন ফেরি করে দেড়শ টাকা, ২কেজি চাল আর ১টি মুরগি পেয়েছি। এ চাল আর মুরগি দিয়েই হবে তিন বোন আর মা’কে নিয়ে রাতের খাবার। আমাদের আসলে ভবিষৎ বলতে কোন চিন্তাভাবনা নেই, “দিন আনি দিন খায়”। বিভিন্ন ইস্কুলে ছাত্রছাত্রীদের দেখে আমাদের মনে খুব কষ্ট লাগে যে, আমরাও যদি পড়ালেখা করতে পারতাম। কিন্তু আমাদের এই যাযাবর জীবনে পড়ালেখার সুযোগ-সুবিধা নেই।
অন্য আরেক ডেরাতে বেদে নারী পারুল বলেন, শিংঙা ( ব্যাথার চিকিৎসায় ব্যবহত হয়) লাগিয়ে আর দাঁতের পূক (পোকা) আগে যে টাকা পেতাম তা দিয়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে ভালই দিন কাটত। কিন্তু এখন আর মানুষ এগুলো বিশ্বাস করতে চায়না।
বেদে দলের আব্বাস মিয়া শেরপুর টাইমসকে বলেন, “বাপু, মাইনষে এহন আর সাপের খেলা দেহে না। আমাদের তাবিজ-কবজও এহন আর তেমন বেঁচা হয়না। খুব কষ্টে আছি।”
বেদে দলের সর্দার সেকান্দার আলি শেরপুর টাইমসকে বলেন, আসলে আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত অবহেলিত। আমাদের ছেলে মেয়েরা না পারে স্কুলে যেতে, না পারে চাকুরী-বাকুরী করতে। আবার অনেকের ভোটার আইডি কার্ড না থাকায় তাদের দায়িত্বও কেউ নিতে চায়না। এখন খুব কষ্টে দিন কাটে বেদেদের। তাই সরকারের কাছে চাওয়া, ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার সু-ব্যবস্থা করে দেওয়া এবং আমাদের স্থায়ী বসবাসের সুযোগ করে দিতে।