মানব সৃষ্টির বহু আগে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা পবিত্র ‘কাবাঘর’ সৃষ্টি করেন। পবিত্র এ ঘরটিকে আরবিতে বলা হয় বায়তুল্লাহ। যার অর্থ আল্লাহর ঘর।
অর্থ: ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়’।
হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.) এর পৃথিবীতে মিলন হলে তারা উভয়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ইবাদতের জন্য একটি মসজিদ হজরত আদম (আ.) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন এবং বাইতুল মামুরের আকৃতিতে পবিত্র কাবাঘর স্থাপন করেন। এখানে হজরত আদম (আ.) সন্তুষ্টচিত্তে আল্লাহর ইবাদত করতে থাকেন।
মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে হজরত আবু যর গিফারী হতে বর্ণনা হয়েছে, রাসূল (সা.) তার একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ হলো মসজিদে হারাম। এর পরের মসজিদ হলো মসজিদে আকসা। মসজিদে হারাম নির্মাণের ৪০ বছর পর মসজিদে আকসা নির্মিত হয়’।
হজরত আদম (আ.) কাবাঘর আল্লাহর আদেশে পুনঃনির্মাণ করেন। এরপর বহুদিন অতিক্রম হলো। শত শত বছর অতিবাহিত হলো। আল্লাহর বান্দারা কাবাঘর জিয়ারত করতো, আল্লাহর কাছে হাজিরা দিতো এ কাবাঘরে সমবেত হয়ে। কাবাঘরে এসে মহান আল্লাহর পবিত্রতা ও অংশীদারহীনতা ঘোষণা দিত। ‘লাববাইক আল্লাহুম্মা, লাববাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নেয়ামাতা, লাকাওয়াল মুলক, লাশারীকা, লাকা লাববাইক।’ এভাবে চলতে চলতে দিন গত হতে থাকলো। এরপর হজরত শীষ (আ.) কাবাঘর পুনঃনির্মাণ করলেন। দিন দিন একত্ববাদীর সংখ্যা বাড়তে থাকলো।এরপর কাবা শরিফ নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ করেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। হজরত ইব্রাহিম (আ.) হজরত ইসমাঈল (আ.)-কে সঙ্গে নিয়ে কাবাঘর নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ করেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) কাবাঘর সংস্কার করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন। ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে আজ্ঞাবহ কর। আমাদের বংশ থেকে একটি অনুগত দল সৃষ্টি কর। নিশ্চয়ই তুমি দয়ালু। হে প্রতিপালক! তাদের মধ্য থেকেই তাদের কাছে একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুন। যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াত তেলাওয়াত করবেন। তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন এবং পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই তুমি মহাপরাক্রমশালী।’ আল্লাহ রাববুল ইজ্জত হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাঈল (আ.) এর বংশ হতে হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে শেষ নবী ও রাসূল হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন।
কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সৌদি রাজপরিবারের। সৌদী সরকারের প্রধান (বাদশাহ) কাবা শরিফের মোতাওয়াল্লির দায়িত্বে থাকেন। পবিত্র হজ পালন করতে লাখ লাখ মুসলমান মক্কা শরিফে গমন করেন। জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে হজ অনুষ্ঠিত হয়। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ঈদুল আজহার দিন। এদিন কোরবানি দিতে হয়, যা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাঈল (আ.) এর স্মৃতি বহন করে চলেছে হাজার হাজার বছর ধরে।
হজ ও ওমরাহ আদায়কারীর জন্য বিশেষভাবে এবং পৃথিবীর সব মুসলমানের জন্য সাধারণভাবে জমজমের পানি পান করা মুস্তাহাব। সহিহ হাদিসে বিধৃত হয়েছে যে নবীজি (সা.) নিজে জমজম থেকে পানি পান করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫৫৬) হজরত আবু জর (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘জমজমের পানি বরকতময়, স্বাদ অন্বেষণকারীর খাদ্য’। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৭৩)
মুসনাদে তায়ালুসিতে এই হাদিসের একটি বর্ধিত অংশ উদ্ধৃত হয়েছে, ‘এবং রোগীর ওষুধ’। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের সঙ্গে পাত্রে ও মশকে করে জমজমের পানি বহন করতেন। তা অসুস্থদের ওপর ছিটিয়ে দিতেন এবং তাদের পান করাতেন। (সুনানে তিরমিজি) এ বর্ণনা থেকে এ কথাও জানা যায় যে জমজমের পানি বহন করা জায়েজ। আর যারা জমজম কূপের কাছে নয়, তাদের পান করানো নববী সুন্নত।