জীবিকার তাগিদে পাঁচ বছর আগে রাজধানী ঢাকার বনশ্রীতে গৃহকর্মীর কাজ করা অবস্থায় নিখোঁজ ইমনাকে খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। ঢাকায় কাজে যোগদানের ১১ মাস পর নিখোঁজ হয় ইমনা।
দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তের গজনী অবকাশ থেকে তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইগাতী থানা পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের কাছে ইমনাকে হস্তান্তর করে পুলিশ।
এসময় পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের পরিদর্শক হারুন উর রশিদ, ইমনার বাবা মো. নুরু মিয়া, তার কাজ করা ওই বাড়ির মালিক কাজী সাইদুর রহমান চয়ন ও পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আশুগঞ্জের দরিদ্র রিকশা চালক নুরু মিয়ার পাঁচ সন্তানের তৃতীয় ইমনা। পাঁচ বছর আগে বনশ্রীর উত্তরা ব্যাংকে কর্মরত কাজী সাইদুর রহমান চয়নের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে যোগ দেয় সে। সেখানে এগারো মাস কাজ করার পর পালিয়ে যায় ইমনা। এই ঘটনায় কাজী সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় ইমনার মা শেফালী বাদী হয়ে একটি মানব পাচার মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে থানা থেকে সে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পিবিআইকে। এসময় ওই বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যায় ইমনা একাই একটি রিকশায় উঠে কোথাও যাচ্ছিলো।
ঝিনাইগাতী থাসার ওসি ফায়েজুর রহমান বলেন, ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী অবকাশ কেন্দ্রে তাকে ঘুরতে দেখে স্থানীয়রা আমাকে জানায়। এরপর বিকেলে তাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করি। প্রথমে সে তার নাম পাখি বলে পরিচয় দেয় এবং অসংলগ্ন উত্তর দেয়। পরে সন্ধ্যায় সে তার নাম ইমনা ও বাড়ি আশুগঞ্জের কথা জানায়।
আশুগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে তার সহযোগিতায় তার বাবা মাকে খুঁজে পাই। সেখান থেকে তথ্য নিয়ে চলমান মামলার কথাও জানতে পারি। রাতে পিবিআইকেও বিষয়টি জানানো হয় এবং মামলার আসামি বাড়ির মালিকের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। আজ দুপুরে ইমনার বাবা মা, ওই বাড়ির মালিক ব্যাংক কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা এসেছেন। পিবিআইয়ের কাছেই আমরা ইমনাকে হস্তান্তর করেছি।
ইমনার মা শেফালী বেগম বলেন, আমরা অনেক খুঁজেও মেয়েকে না পেয়ে মামলা করেছি। এখন মেয়েকে পেয়ে খুব খুশি। আমার বুকটা শান্তি হইছে। তিনি পুলিশকে ধন্যবাদ জানান।
এদিকে ওই বাড়ির কর্তা কাজী সাইদুর রহমান চয়ন বলেন, মেয়েটি কাউকে না বলেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। আমরাও অনেক খুঁজেছি। পরে মেয়ের বাবা মা আমার নামে মামলা দায়ের করে। দীর্ঘদিনের মামলায় আমিও সর্বশান্ত। মেয়েটি পালিয়ে যাওয়ার পেছনে যদি কারো ইন্ধন থেকে থাকে তাহলে এই বিষয়ের তদন্ত ও জড়িতদের বিচার চাই।
পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানজিনা আক্তার বলেন, বনশ্রীতে গৃহকর্মীর কাজ করা অবস্থায় নিখোঁজ হয় ইমনা। আমরা তদন্ত করছিলাম। সোমবার ঝিনাইগাতী থানা থেকে আমাদের জানানো হয়, তাকে পাওয়া গেছে। আজ দুপুরে আমাদের কাছে ইমনাকে হস্তান্তর করা হয়। আদালতের নির্দেশনা পেলে আইনী প্রক্রিয়া শেষে তাকে তার পরিবারের কাছে দেয়া হবে।