শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের বেশির ভাগ পানি নেমে গেছে। তবে নি¤œাঞ্চলের কয়েকটি গ্রামে এখনো পানি জমে রয়েছে। এদিকে ঢলের পানি নেমে গেলেও বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। পানি নেমে যাওয়ায় ভেসে উঠেছে এসব এলাকার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটের ক্ষতচিহ্ন। এবারের স্মরণকালের পাহাড়ি ঢলের বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধ্বসে পড়েছে শতশত মাটির কাঁচা দালান, টিনসেড ও আধাপাকা ঘর, ভেসে গেছে শতশত পুকুরের মাছ, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আমন আবাদের উঠতি ফসল ও বিনষ্ট হয়েছে সবজি ক্ষেত। এসব ক্ষতিগ্রস্থ বানভাসীরা সাময়িক ত্রাণের চেয়ে স্থায়ী পুর্নবাসনের দাবী জানেিয়ছেন।
বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ি ঢলের পানি ভাটির দিকে নেমে গেছে। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। ইতিমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরেছেন অনেকেই। তবে অধিকাংশ ভুক্তভোগীর বাড়ির ঘরই বন্যার পানিতে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মাটির দালান, আমন ফসলের মাঠ ও মাছের ঘের। এদিকে পানি কমার সাথে সাথেই দেখা দিয়েছে গো খাদ্য সংকট। ঢলের পানিতে খড়ের গাদা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় গবাদিপশু খাদ্য সংকটে পড়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ৪ হাজার ৬৮টি ঘর সম্পুর্ণ, ১ হাজার ২০০টি ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাস্তুহারা এসব পরিবারের সদস্যরা। ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় রাত কাটছে তাদের অন্যের বাড়িতে কিংবা অস্থায়ী ছাউনিতে। ১৫ হাজার ১০০ হেক্টর জমির আমন ধানক্ষেত, ১০৮ হেক্টর জমির শাকসবজি ক্ষেত ও ৮.৮৪ হেক্টর জমির বস্তায় লাগানো আদা চাষ নষ্ট হয়েছে। এছাড়া উপজেলার ২ হাজার ৮৭৫টি পুকুরের মাছ ঢলের পানিতে ভেসে গেছে।
উপজেলার আন্ধারুপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম (৪০) বলেন, আমার বাড়িতে ৩টি মাটির দালান ঘর ছিল। ঢলের পানি এসে ৩টি ঘরই ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। এখন আমি অন্যের বাড়িতে অনেক কষ্ট করে থাকতেছি। এখন আমার মাথা গুজার ঠাঁই নেই।
ফকিরপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগী আছিয়া বেগম (৭০) বলেন, গাঙ্গে (নদী) আমার ঘরবাড়ি ভাইঙ্গা নিছে গা। অনেক কষ্ট কইরা থাকতাছি। একটা ঘর পাইলে কষ্টডা একটু কমতো।
বেনীর গোপ গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান ও মুনছুর আলী বলেন, কষ্ট করে যা ধান আবাদ করেছিলাম সব নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি আবাদই আমাদের উপার্জনের উৎস। ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়ে যাওয়া এখন আমাদের দিন চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তথ্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের পুর্নবাসনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।