শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বোনারপাড়ায় হোসেন আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পুরণ বাবদ ৬ হাজার করে টাকা আদায় করার অভিযোগ ওঠেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জিম্মি করে অতিরিক্ত কাস তথা কোচিংয়ের নামে প্রায় ২ লাখ টাকার এ বাণিজ্য করেছে প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, এ বছর বিদ্যালয়টিতে নিয়মিত এসএসসি পরীক্ষর্থী সংখ্যা ৪৭ জন ও অনিয়মিত ১৪ জন মিলে মোট ৬১ জন। এরমধ্যে নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ৪০ জন। বাকী ২১ জন এক বা একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। ফলে অকৃতকার্যদের প্রথমে পরীক্ষা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনুরোধে সম্মতি দিলেও বোর্ড নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত কাস তথা কোচিংয়ের নাম করে বিনা রশিদে বাধ্যতামূলকভাবে সর্বমোট ৬ হাজার করে মোট প্রায় ৯০ হাজারের অধিক অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। পরীক্ষার্থী শাহিনূর আক্তার মৌসুমীর অভিভাবক শাহাব উদ্দিন ও ছাবিনা ইয়াসমিনের অভিভাবক নূর ইসলামসহ অন্যরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শুধু তাই নয়, নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৪০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বোর্ড নির্ধারিত সাধারণ বিভাগে ১ হাজার ৩৭০ টাকার ক্ষেত্রে ১ হাজার ৮০০ এবং বিজ্ঞান বিভাগে ১ হাজার ৫৫০ টাকার ক্ষেত্রে ১ হাজার ৯০০ টাকা আদায় করা হয়। এর সাথে আবার বিনা রশিদে একই অতিরিক্ত কোচিংয়ের নামে পরীক্ষার্থী প্রতি ২ হাজার ১শ এবং ২ হাজার ২শ করে সর্বমোট ৪ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। এতে প্রায় ৯৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হয়। সবমিলে প্রায় ২ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করে সংশ্লিষ্টরা।
ভোক্তভোগী অভিভাবকরা জানান, ঋণ-ধার করে অনেকে আবার সুদে টাকা এনে সন্তানের ফরম পুরণের টাকা যোগাড় করেছেন। অথচ বোর্ড নির্ধারিত মূল্যে ফরম পুরণ করলে তাদের এ সমস্যায় পড়তে হতো না। অতিরিক্ত টাকা দিতে আপত্তি জানালে শিক্ষার্থীদের অন্যত্র পড়াশোনা করানোর হুমকী দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আলিয়া, শাবনূর ও সুমী আক্তারসহ অন্য শিক্ষার্থীরা জানায়, সকাল ৯টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে তাদের কাস নেওয়া হচ্ছে। ফরম পুরণের পর ক্লাস নেওয়ার নিয়ম নেই জানিয়ে এসব ক্লাসের জন্যই তাদের কাছ থেকে ‘অতিরিক্ত ক্লাস ফি’ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে ১৮ নভেম্বর শনিবার সকালে বিদ্যালয়ে পরীক্ষাথীদের অভিভাবকদের নিয়ে সভা আহবান করা হয়। সভায় অভিভাবকদের কাছ থেকে কৌশলে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়েছে মর্মে জানিয়ে দেওয়া হয়। অন্যথায় আবারও তাদের সন্তানদের অন্যত্র নিয়ে পড়ানোর হুমকী দেওয়া হয়।
এর আগে জেএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকেও অতিরিক্ত ১শ করে টাকা আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
এসব বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে পাওয়া না গেলেও তারই শ্যালক ও বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মমতাজ আলী ৬ হাজার করে টাকা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে অতিরিক্ত ক্লাসসহ ফরম পুরণে ৪ হাজার করে টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাওলানা জামাল উদ্দিন জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। প্রধান শিক্ষক সম্পূর্ণ মনগড়াভাবে কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই এসব অনিয়ম করে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর কবীর জানান, বোর্ড নির্ধারিত ফি’র বাইরে অতিরিক্ত নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। এছাড়াও নির্বাচনী পরীক্ষার পরও বিদ্যালয়ের পাঠদান অব্যাহত রাখতে হয়। এসময় অতিরিক্ত ক্লাসের সুযোগ নেই। এসব সম্পূর্ণ বেআইনী।
শেরপুর টাইমস/ বা.স