শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বিশ্বদেব দে নিহতের জেরে বিক্ষুদ্ধ জনতা কর্তৃক এএসপি নালিতাবাড়ী সার্কেল অফিসে হামলা ভাংচুরের ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ভোর রাতে এক আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ২৮ জনকে নামীয় আসামী করে অজ্ঞাতনামা আরও প্রায় আড়াই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ মামলাটি দায়ের করেন এএসপি অফিসের ভবন ‘হাবিব কমপ্লেক্স’ এর তত্ত্বাবধায়ক তোফাজ্জল হোসেন।
গত ১ অক্টোবর রোববার সন্ধ্যায় শহরের কাচারিপাড়া মহল্লার বিশ্বদেব দে কে গাঁজা সেবনের অভিযোগে শহরের উত্তর বাজার মেইন সড়ক হতে আটক করে পুলিশ। পরে মুচলেকার মাধ্যমে রাত সাড়ে দশটার দিকে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর রাস্তায়ই বিশ্বদেব বমি করে ও মল ত্যাগ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাড়ি নেওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে মধ্যরাতে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। সেখানে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিশ্বকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পরদিন সোমবার ভোরে বিশ্বকে পুলিশ নির্যাতন করে হত্যা করেছে অভিযোগ এনে পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী বিশ্বকে নিয়ে শহরের উত্তর বাজার শহীদ মিনার মোড়ে অবস্থান নেয় এবং ভাংচুর করে ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এমতাবস্থায় বিক্ষোভে অংশ নিয়ে একটি বিশেষ মহল বিক্ষোভস্থলের পাশে থাকা হাবিব কমপ্লেক্স এর তৃতীয় তলায় এএসপি নালিতাবাড়ী সার্কেলের অফিস লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে ভাংচুর চালায়। দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ চলার পর উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতায় বিচারের আশ্বাসে দুপুর বারোটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পরে শেরপুর সদর হাসপাতাল মর্গে বিশ্বদেবের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয় এবং ওইদিন সন্ধ্যায় নালিতাবাড়ী পৌর মহাশ্মশানে পুলিশ-র্যাবের উপস্থিতিতে মরদেহ সৎকার করা হয়।
বিশ্বদেবের মা জবা রাণী দে, বোন শিউলী রানী সূত্রধর, ভগ্নিপতি বিপুল সূত্রধরসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করে বলেন, বিশ্বকে আটকের সময় পুলিশ রাস্তায় ফেলে প্রকাশ্যে মারধর করে এবং পকেটে কোন গাঁজা না পাওয়া সত্বেও তাকে মিথ্যা ফাঁসিয়ে দেয়। তারা আরও বলেন, পুলিশ থানায় নিয়ে একটি কক্ষে আটকে নির্যাতন করেই বিশ্বকে হত্যা করেছে। তবে সামর্থ নেই বিধায় তারা সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার দিয়েছেন বলেও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এদিকে মঙ্গলবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পুলিশি নির্যাতনে বিশ্বদেবের মৃত্যু হয়েছে মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হলে ওইদিন দুপুরে শেরপুর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে থানা হাজতের সিসি টিভি ফুটেজ দেখিয়ে বিশ্বকে কোন নির্যাতন করা হয়নি বলে প্রমাণ উপস্থাপন করেন পুলিশ সুপার রফিকুল হাসান গণি। পাশাপাশি এ ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেরপুর সদর সার্কেল মোঃ আমিনুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
এদিকে এএসপি নালিতাবাড়ী সার্কেলের অফিস লক্ষ্য করে হাবিব কমপ্লেক্সে হামলার ঘটনায় ওই কমপ্লেক্সের তত্ত্বাবধায়ক তোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে ৩ অক্টোবর দ্রুতবিচার আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম রাজিব, বঙ্গবন্ধু যুবঐক্য পরিষদের সভাপতি আসাদুজ্জামান সোহেল, উপজেলা আ’লীগের প্রচার সম্পাদক সুরুজ্জামান এর ছেলে মারুফসহ ২৮জনকে নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আরও প্রায় আড়াই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে নালিতাবাড়ী থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই নজরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার ভোর রাতে উপজেলার গোবিন্দ নগর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে তৌহিদুল ইসলামকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
শেরপুর টাইমস/ বা.স