শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ও বাঘবেড় ইউনিয়ন থেকে কালোবাজারে বিক্রিত ১২৭ বস্তা ভিজিএফ এর চাল জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন।
এরমধ্যে আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দুপুরে উপজেলার বাঘবের ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে কালোবাজারে ক্রয়-বিক্রয় চলাকালে ১২ বস্তা ও বুধবার মাঝরাতে পোড়াগাঁও ইউনিয়নের আশপাশের দুটি দোকান, একটি বাড়ি ও একটি ক্লাবে মজুত করে রাখা ১১৫ বস্তুা চাল জব্দ করা হয়। এসব ঘটনায় জড়িত কাউকে ঘটনাস্থলে না পাওয়ায় আটক করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে গরীব, দুখী ও দুঃস্থদের জন্য সরকারিভাবে বিতরণের জন্য ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তারই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী বাঘবেড় ইউনিয়ন পরিষদের চাল বিতরণ চলছিল। এসময় বাঘবেড় ইউনিয়ন পরিষদের সামনে কতিপয় চাল ব্যবসায়ী ভিজিএফ এর চাল অবৈধভাবে কালোবাজারে ক্রয় করছিল। এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় চাল ব্যবসায়ী কর্তৃক ক্রয়কৃত অটোরিকশা ভর্তি ১২ বস্তা ভিজিএফের চাল জব্দ করা হয়।
অপরদিকে, উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে বিতরণের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফ এর ১১৫ বস্তা চাল জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন।
বুধবার (২৮ মে) মধ্যরাতে উপজেলার ১নং পোড়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন বিতরণকৃত এসব চাল জব্দ করা হয়।
সূত্র জানায়, পোড়াগাঁও ইউনিয়নের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ২ হাজার ৫৫৫ জন উপকারভোগীর জন্য ২৫ হাজার ৫৫০ কেজি ভিজিএফ এর চাল বরাদ্দ করা হয়। বরাদ্দ অনুযায়ী বুধবার দিনব্যাপী পরিষদ কার্যালয় থেকে চাল বিতরণ কার্যক্রম চলে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, হতদরিদ্র অনেকে স্থানীয় ইউপি সদস্যদের কাছে চালের স্লিপ চেয়েও পাননি। অথচ দিনব্যাপী কিশোর বয়সী ছেলেরা দল বেধে একাধিক স্লিপ হাতে নিয়ে ১০ কেজি করে চাল উত্তোলন করেছে। টাকার বিনিময়ে চাল উত্তোলনের পর ওইসব চাল ফড়িয়াদের কাছে বিক্রির করা হয়েছে। পরবর্তীতে পরিষদের আশপাশের দুটি দোকান, একটি বাড়ি ও একটি ক্লাবে মজুত করে রাখা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকজন ইউপি সদস্য বেশিরভাগ স্লিপ বিতরণ না করে তা গোপনে বিক্রি করে দিয়েছেন। পরবর্তীতে ১০ টাকার বিনিময়ে কিশোর বয়সী ছেলেরা স্লিপের অনুকূলে ১০ কেজি করে চাল উত্তোলন করে ফড়িয়ার কাছে পৌছে দিয়েছে। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আমির হোসেনকে ট্যাগ অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা থাকলেও দিনভর প্রকাশ্যে চলে এই কার্যক্রম।
এদিকে, বিষয়টি টের পেয়ে বিকেলে এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মককর্তার কার্যালয়ের প্রতিনিধি ও পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হয়। পরে মধ্যরাত পর্যন্ত চারটি স্থানে লুকিয়ে মজুত করে রাখা ওইসব চাল জব্দ করা হয়।
জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট পোড়াগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন বলেন, সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ করে বরাদ্দ অনুযায়ী স্লিপ ইউপি সদস্য ও উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এতে কোন কোন উপকারভোগী একাধিক স্লিপ পেতে পারে। পরবর্তীতে কে বা কারা এসব স্লিপের চাল গোপনে উত্তোলন করে বেচাকেনা করেছে তা আমার জানা নেই।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি জানান, ভিজিএফ এর চাল কালোবাজারে বিক্রির বিষয়টি তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জব্দকৃত চাল পুলিশ হেফাজতে দিয়ে নিয়মিত মামলা করার প্রক্রীয়া চলছে।
