শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ব্যক্তি মালিকানায় ভোগদখলে থাকা একটি বিরোধপূর্ন জমিকে দেখানো হলো তা পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শেরপুর এর কার্যালয়ে দাখিলকৃত প্রতিবেদনে এমনটি উল্লেখ করেছে উপজেলা ভূমি অফিস। ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তার প্রতিবেদনের আলোকে ওই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হলেও প্রকৃতপক্ষে পুলিশ নিজেই জানিয়েছে নালিশি ভূমিটি মালিকের ভোগদখলে রয়েছে। তবে শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
কাগজপত্র পর্যালোচনা ও সরেজমিনে যাচাই করে দেখা গেছে, নালিতাবাড়ী শহরের আড়াইআনী মহল্লার নালিতাবাড়ী মৌজায় বিআরএস ২৪৭৭ দাগে ৫৭ শতক জমির মধ্যে ১৯৯৩ সালের ১১ মার্চ বাবুল দত্তের কাছ থেকে সাড়ে ৫৩ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে নেন ইদ্রিস আলী মাস্টার। তখন থেকে ইদ্রিস আলী মাস্টার জমিটির ভোগদখলে রয়েছেন।
এদিকে, ১৯৯১ সালে আরএস ও আরওআর রেকর্ডমূলে গোপাল চন্দ্রের কাছ থেকে রেজিস্ট্রি করে ৪১ শতক জমি কিনেন মুন্সীগঞ্জের নার্গিস আক্তার নামে এক নারী। গত বছর ইদ্রিস মাস্টার মারা গেলে মৃত নার্গিসের স্বামী আবু সাইদের পক্ষে তাদেরই ম্যানেজার সৈকত ভাড়াটে লোক নিয়ে গত ১৪ জুলাই রাতের আঁধারে জমিটি দখল করেন। ভোরে ওই জমি এলাকাবাসীর সহায়তায় দখলমুক্ত করে পুনরায় দখলে নেন ইদ্রিস মাস্টারের বর্তমান উত্তরাধিকারীগণ।
পারস্পরিক দখলকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম মোস্তফা কামাল, পৌর মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হকসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে একটি শালিশ বৈঠক হয়। তবে জমিটি আদালতে বিচারাধীন থাকায় চূড়ান্ত কোন ফায়সালায় না গিয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশি তৎপরতার মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে নানা ধরণের হুমকী আসায় ইদ্রিস মাস্টারের উত্তরাধীকারীদের পক্ষে আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ১৪৪ ধারা জারি করেন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে নালিশি ভূমির প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। এমতাবস্থায় উপজেলা ভূমি অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট নালিতাবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
পরে ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ নুরুল হক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত শেরপুর এর ৪২৬/২০২৩ নং পিটিশন মামলার অনুকূলে একটি প্রতিবেদন উপজেলা ভূমি অফিসে দাখিল করেন। দাখিলকৃত ওই প্রতিবেদনে শুধুমাত্র বিবাদীপক্ষ আবু সাইদের অনুকূলে ভূমির দখল উল্লেখ করেন। শুধু তাই নয়, নালিশি ভূমিটি পুলিশ হেফাজতে আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ প্রতিবেদনের আলোকে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তবে সরেজমিনে উল্লেখিত জমি ইদ্রিস আলী মাস্টারের উত্তরাধিকারীদের দখলে পাওয়া যায়। ফলে প্রতিবেদনের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।
ভুক্তভোগী ইদ্রিস আলী মাস্টারের উত্তরাধিকারী আতিকুল ইসলাম জানান, ত্রিশ বছর ধরে জমিটি আমাদের ভোগদখলে। এখনও আমাদের ভোগদখলেই রয়েছে। এরপরও ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কিভাবে অসত্য প্রতিবেদন দাখিল করলেন?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে শালিশি বৈঠকে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার হেফাজতে বা পুলিশি তৎপরতায় জমিটি থাকার মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে এর কোন লিখিত নেই। তাছাড়াও জমিটিও বর্তমানে ইদ্রিস আলী মাস্টারের উত্তরাধিকারীদের ভোগদখলে রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
প্রতিবেদনে ভুল তথ্য উল্লেখের বিষয়ে তিনি বলেন, মৌখিক সিদ্ধান্তের বিষয়টি পুলিশি তৎপরতার ক্ষেত্রে ভুলবশত টাইপিং মিসটেক হয়ে হেফাজতে হয়ে গেছে। এটি ভাষাগত ভুল।
এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক জানান, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় আমাদের তৎপরতা ও খোঁজখবর রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু জমি আমাদের হেফাজতে থাকবে এমন কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।