শেরপুরের নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রের চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থ্া ভেঙ্গে পড়েছে। শয্যা বাড়লেও ৫২টি পদ শূণ্য থাকায় কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। দুই লক্ষাধিক জনসংখ্যার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি ২০১১ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। নির্মান করা হয় নতুন নতুন ভবন। কিন্তু শয্যা ও অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও জনবল ও যন্ত্রাংশের অভাবে কমেছে স্বাস্থ্য সেবার মান।
৩১ শয্যা হাসপাতালের মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ১৫৭ টি হলেও ২৫ টি পদ দীর্ঘদিন যাবৎ শূণ্য রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম শ্রেণির তথা ডাক্তারের পদ ১৪ টি শূণ্য। শূণ্য পদ গুলো হলো, জুনিয়র কনসালট্যান্ট মেডিসিন, ভান্ডার রক্ষক, সহকারী সেবক, জুনিয়র মেকানিক্্র, ওয়ার্ড বয়, ২ টি করে স্বাস্থ্য সহকারী, নিরাপত্তা প্রহরী ও ঝাড়–দার এবং মালির পদটি দীর্ঘ দিন যাবৎ শূণ্য রয়েছে।
অন্যদিকে পুরনকৃত পদ গুলোর মধ্যে জুনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারী ডাঃ মোঃ মুক্তি মাহমুদ শেরপুর সদর হাসপাতালে, সহকারী সার্জন ডাঃ মেহনাজ আশফি হিমেল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও ডাঃ হেমায়েত হোসেন সরকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে প্রেষণে আছেন। অন্য এক সহকারী সার্জন ডাঃ শাহানাজ পারভীন শাহীন ৩০ অক্টোবর ২০১৪ সাল থেকে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থল ত্যাগ করে বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন কারও জানা নেই।
৫০ শয্যায় উন্নীত করায় নতুন ৩১টি পদ সৃষ্ট হলেও ২৭টি পদ ২০১১ সাল থেকেই শূণ্য রয়েছে। শূণ্য পদ গুলো হলো, প্রথম শ্রেণির কনসালট্যান্ট ৬টি (চক্ষু, শিশু, ইএসটি, অর্থোসার্জারী, চর্ম ও যৌন, কার্ডিও), প্যাথলজিষ্ট, ইএমও, এমও সহ ৯ টি। দ্বিতীয় শ্রেণির এসএসএন-এর ৪ টি। তৃতীয় শ্রেণির প্রধান সহকারী, হিসাব রক্ষক, এমটি ল্যাব, এমটি ফিজিও, কার্ডিওগ্রাফি, কম্পাউন্টার, কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রন সহকারীর পদ। চতুর্থ শ্রেণির এটেনডেন্ট (ইমারজেন্সী, ল্যাবরেটরী, ওটি ) ৩টি পদ এবং টিকেট ক্লার্ক, এমএলএসএস, মসালচি, সিকিউরিটি গার্ড পদগুলো শুরু থেকেই শূন্য রয়েছে।
খোজ নিয়ে দেখাযায়, পুরুষ-মহিলা দুইটি ওয়ার্ডেই ৪-৫ জন করে কাটা ছেড়ার রোগী শুয়ে আছেন। তারা বলেন, নকলা হাসপাতালে ডাক্তার না থাকায় সব রোগী শেরপুর বা ময়মনসিংহ হাসপাতালে চলে যান। জানা গেছে, নকলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের নেই আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন, সিজারিয়ান সাধারন একটি ওটি ছাড়া নেই ভালো মানের ওটি। ১০, ৩০ ও ১০০ এমএ তিনটি এক্্ররে মেশিন থাকলেও ১০ এমএ মেশিনটি ব্যবহার অনুপযোগী, ৩০ এমএ টির প্রতি রোগীদের আস্থা নেই। ১০০ এমএ মেশিনটি এক সেকেন্টের জন্যও সচল হয়নি। একমাত্র ইসিজি মেশিনটিও দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। এমতাবস্থায় গ্রামীন হতদরিদ্র মানুষের সরলতার সুযোগে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ক্লিনিক/প্যাথলজির মালিকরা।
যদিও নকলা হাসপাতালের উন্নয়ন চিত্রের চার্ট অনুযায়ী গত আট বছরে বহি বিভাগে সেবা দেওয়া হয় ৭৯ হাজার ১২৭ জনকে, অন্তঃবিভাগে ৫ হাজার ১১২ জনকে, জরুরী ডেলিভারী হয় ১১ হাজার ৬৯০ টি, নরমাল ডেলিভারী হয় ২১৯ টি, গর্ভকালীন সেবা নেয় ২ হাজার ৬৭০ জন, প্রসবোত্তর সেবা নেয় ১ হাজার ৭৭৬ জন, আইএমসিআই ও পুষ্টি সেবা নেয় ১৫ হাজার ২০৯ জন, কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নেয় ১৯ হাজার ৫শ’ জন, রক্ত ও মলমূত্র পরীক্ষা করানো হয় ৩ হাজার ৪৪৭ জনের, এক্স-েরে সেবা নেয় ১ হাজার ৩৮৯ জন এবং ইসিজি করানো হয় ২১২ জনের। যা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন জেগেছে।
যে হাসপাতালের জেনারেটর চালু অবস্থায় কেউ দেখেনি। ৩১ শয্যার ভবনটি পরিত্যক্ত হওয়ায় সব অফিসকক্ষ নতুন ভবনে স্থানান্তর করায় জায়গা সংকটেও আছে হাসপাতালটি। কমিউনিটি ক্লিনিক ও হাসপাতালের ঔষধ বা যন্ত্রাংশ প্রায়ই বারান্দায় বা খোলা স্থানে পড়ে থাকতে দেখাযায়।
তবে নবনিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, পূর্বের চেয়ে বর্তমানের অবস্থা অনেক ভালো হয়েছে। দায়িত্বে আসার পর তিনি জনস্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সাধ্য মতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করেন। তিনি জানান, সব শূণ্য পদ পূরণ করা না গেলেও অন্তত শূণ্য থাকা ২৩টি ডাক্তারের পদ পূরণ করা অতি জরুরি। তিনি নকলা হাসপাতালের সকল শূণ্য পদ পূরনে যথাযথ কতৃপক্ষ সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে বিষয় গুলো জানিয়েছেন।
জনস্বার্থে সমস্যা গুলোর অতিদ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী নিজের নির্বাচণী এলাকা বিবেচনায় এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিলে দ্রুত সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে মনে করছেন সাধারণ জনগন।