শেরপুরের নকলা উপজেলা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে উরফা গ্রামের কালা (ভোগাই) নদীর পাড়ে কোদাল ধোয়া নামক স্থানে ৭ একর ৬৮ শতাংশ ভূমির উপর গড়ে উঠছে একটি অত্যাধুনিক ইকোপার্ক। শেরপুর টাইমস ডটকম’র বিশেষ আয়োজন উন্নয়নে শেরপুরের চতুর্থ পর্বে আজ থাকছে ‘ভোগাই নদীর পাড়ে গড়ে উঠছে ইকোপার্ক’ এ নিয়ে শেরপুর টাইমস’র নকলা প্রতিনিধি জিয়াউল হক জুয়েলের বিশেষ প্রতিবেদন।
নকলা-নালিতাবাড়ীর এমপি, আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ২০০৯ সালে ভোগাই নদীর নাব্যতা রোধ, কৃষি সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে ভোগাই নদীর উপর একটি রাবার ড্রাম স্থাপনের কাজ করেন। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না থাকায় নদী খননের বালু ভোগাই ও কালা গাঙ্গের মোহনার তীরে কোদাল ধোয়া নামক স্থানে স্তুপাকারে রাখা হয়। পরবর্তীতে এ বালুর স্তুপের উপর ৭ একর ৬৮ শতাংশ জমিতে ফলদ ও বনজ বৃক্ষ রোপন করে জীব বৈচিত্র তৈরির জন্য ইকোপার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা করেন মতিয়া চৌধুরী। ২০১৪ সাল থেকে ইকোপার্কটির কাজ চলছে। বর্তমানে এ পার্কে নানা কৌশলে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, বরই, ছফেদা, তাল, আতা, খেজুরসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, ওষুধী ও বনজ প্রায় শতাধিক প্রজাতির আড়াই লক্ষ গাছে সু-সজ্জিত হয়েছে এ পার্কটি।
প্রথমঅবস্থায় ধু-ধু বালিতে কোন গাছ রোপনের পর জীবন ফিরে পেত না। দীর্ঘ ৪-৫ বছর বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে কৃষিবিভাগ এ পার্কে বৃক্ষ জন্মানোর পরিবেশ তৈরি করেছে। এতে কৃষিবিভাগের সদর দপ্তর, জামালপুর হর্টিকালচার বিভাগ ও নকলা এবং শেরপুরের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা রাতদিন গবেষনা করে এ পার্কটিকে বৃক্ষে সজীবিত করে তোলেছেন। বর্তমানে এ পার্কের সার্বক্ষণিক দেখা শুনা করার জন্যে ২জন শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে। শুধু গাছ গাছালিই নয় এখন পাখ পাখালির কলকাকলিতেও মুখরিত হয় এ পার্কটি। শেরপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এ ইকোপার্কটি পরিদর্শনের জন্য আসছেন হর-দম। নকলা শহর থেকে সিএনজি, অটো রিক্সা বা রিক্সা যোগে সরাসরি কোদাল ধোয়া বাজারে (পিছলাকুড়ি ব্রীজের কাছে) যাওয়া যায়। কিন্তু কোদাল ধোয়া বাজার থেকে এ পার্কে যেতে হয় নৌকা যোগে, চার দিকে নদী দ্বারা বেষ্টিত থাকায় পার্কটিতে কোন গাড়ী, ঘোড়া নিয়ে প্রবেশ করার সুযোগ নেই। যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণের দাবী থাকলেও এ পার্কের প্রতিষ্ঠাতা মতিয়া চৌধুরীর ইচ্ছানুযায়ী কোন যাতায়াতের রাস্তা বা বানিজ্যিক পরিবেশ তৈরির বিপক্ষে রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ হিসেবে বলা হয় প্রাকৃতিক পরিবেশেই এ পার্কটিকে সুন্দর ও মনোরম করে তোলতে কাজ করছেন তারা। ভবিষ্যতে এখানে একটি ন্যাচারাল ইকো পার্ক গড়ে তোলার প্রত্যয় এবং জীববৈচিত্র ও পাখির অবয়াস্রমের কোন সমস্যা যাতে না হয় সেজন্যে একটি ফুটব্রীজ নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন তারা। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ ইকো পার্কটিকে দেশে একটি উল্লেখ্য যোগ্য পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে মতিয়া চৌধুরীর।