শেরপুরের নকলায় মুন্নি হিজড়াসহ কয়েজন কথিত হিজড়ার বেপরোয়া চাঁদাবাজি বন্ধসহ সহজ সরল অসহায় নিরীহ হিজড়াদের নানাভাবে নির্যাচন বন্ধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছে জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য হিজড়ারা। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে নকলা প্রেসক্লাবের সামনে শেরপুর হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নিশি সরকারের নেতৃত্বে ঘন্টাব্যাপি এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে শেরপুর হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নিশি সরকারসহ সংস্থার সহ-সভাপতি মুর্শেদা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক মায়া রানী, সদস্য নির্যাতিত সোনালী, রূপালী, নির্যাতিত রিয়াজ উদ্দিন ও নির্যাতিত জামেলাসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।
সহ-সভাপতি মুর্শেদা আক্তার তার বক্তব্যে জানান, সম্প্রতি সে ময়মনসিংহ থেকে ফিরার পথে কুর্শা বাইপাস মোড়ে তাকে একা পেয়ে মুন্নি ও তার ৩/৪ জন অনুসারী মিলে গাড়ির গতিরোধ করে এবং গাড়ি থেকে নামিয়ে তার হাত-পা বেধে ময়মনসিংহ শহরের নিয়ে বেদম মারপিট করে। মুর্শেদা হিজড়াকে ছাড়িয়ে নিতে তার বাবা-মায়ের কাছে ফোনে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপন দাবী করা হয়। এছাড়া নিশি সরকারের কাছেও মুর্শেদা আক্তারের মুক্তির জন্য ৩০ হাজার টাকা দাবী করে। পরে শেরপুর হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নিশি সরকার বিষয়টি নকলা থানায় অবহিত করলে নকলা থানা পুলিশের সহায়তায় ফুলপুর থানার ও ময়মনসিংহ থানার পুলিশের তৎপরতায় তাকে উদ্ধার করে নকলা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নির্যাতিত মধ্য বয়সী জামেলা বলেন, আমি গরীব মানুষ। আমার থাকার ঘরের জন্য ৩ শতাংশ জমি ছিলো। মুন্নি হিজড়ার দাবী পূরণের জন্য শেষ সম্বল ৩ শতাংশ জমিটুকু বিক্রি করে তাকে দিতে হয়েছে। তা না হলে অমানবিকভাবে মারধর করতো। জমি বিক্রির টাকা শেষ হয়ে গেলে অবশেষে তাকেও মারধর করে দল থেকে বেড় করে দেওয়া হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। মুন্নি হিজড়ার এমন বেপরোয়া কর্মকান্ডের দ্রæত বিচার কামনা করেন তিনি।
মুন্নি কর্তৃক নির্যাতিত মধ্য বয়সী রিয়াজ উদ্দিন জানান, যে কোন উপায়ে মুন্নিকে প্রতি মাসে ৮ হাজার করে টাকা দিতে হতো। কোন মাসে টাকা সংগ্রহ করতে একটু দেড়ী হলেই মুন্নিসহ তার অনুসারীরা মিলে তাকে মারধর করতো। কোন এক পর্যায়ে রিয়াজ উদ্দিনের মোবাইলসহ টাকা পয়সা রেখে মারধর করে দলথেকে বেড় করে দেওয়া হয়। এর পরে রিয়াজ খোঁজখবর নিয়ে নিশি সরকারের কাছে আশ্রয় নেয়। রিয়াজ উদ্দিন মুন্নি হিজড়ার এমন জগন্য কাজের জন্য বিচার দাবী করেন।
শেরপুর হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নিশি সরকার বলেন, সরকার আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে আবাসনসহ যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দিচ্ছে। সম্প্রতি শেরপুর উপজেলায়র আন্ধাড়িয়া সুতিরপাড় এলাকায় আমাদের শেরপুরের হিজড়াদের জন্য আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন আবাসন তৈরী করে দিয়েছেন। তাছাড়া পেটের দায়ে আমাদের যেন বাহিরে গিয়ে চাঁদাবাজি করতে হয়। এরজন্য আমাদের কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল কিনে দেওয়া হয়েছে। আমাদের জন্য খনন করে দেওয়া হয়েছে পুকুর, আয়ের উৎস্য তৈরির জন্য হস্তশিল্পসহ আমাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এরপরেও আমরা যদি ভিক্ষা ভিত্তি বা চাঁদাবাজি করি। এতে সরকারের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নিশি সরকার আরো বলেন, আমি নকলার মুন্নি হিজড়াকে ভিক্ষা ভিত্তি বা চাঁদাবাজি ছেড়ে সরকারের কর্মকান্ডের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আমাদের জন্য দেওয়া সরকারি আবাসনে বসবাসের আমন্ত্রণ জানাই। তাতে রাজি না হওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলায়, মুন্নি হিজড়া উল্টা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। সে বরিশাল ও রংপুর থেকে ৩/৪ জন ছেলে এনে নকল হিজড়া সাজিয়ে নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলাসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে, পথচারী, দোকানে ও গাড়িতে নিয়মিত চাঁদাবাজি শুরু করে। কেউ যদি তাদেরকে চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তাকে সামাজিকভাবে হেয় করাসহ লজ্জাজনক পরিবেশে ফেলার বহু নজির রয়েছে বলে নিশি সরকার জানান। নিশি সরকারের দাবী সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা ও আমাদের নিজের অবস্থান স্বাভাবিক ও সুদৃঢ় করতে আমাদেরকে রাস্তাঘাটে চাঁদাবজি বন্ধসহ সামাজিকভাবে মানসম্মান রক্ষা করে চলতে হবে। তবেই সমাজের সবাই আমাদেরকে অন্যান্য স্বাভাবিক মানষদের মতো আমাদের সাথেও ভালো ব্যবহার করবেন এবং সমাজ আমাদেরকে সহজে স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে মেনে নিবেন। নতুবা সারা জীবন সমাজে হেয় হয়েই থাকতে হবে। তাতে সরকারের একটি মহান উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। চাঁদাবাজ মুন্নি হিজড়াসহ অন্য জেলা-উপজেলা থেকে আগত কথিত বা নকল চাঁদাবাজ হিজড়াদের আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠ বিচার দাবী জানান বক্তারা।
মানববন্ধন শেষে নকলা প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দসহ উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন শেরপুর হিজড়া কল্যাণ সংস্থার নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, আমরা মেডিকেল পরীক্ষিত হিজড়া ও সরকার কর্তৃক প্রদেয় আইডি কার্ড প্রাপ্ত। শেরপুর হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নিশি সরকার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, মুন্নি হিজড়া অন্য জেলার ৩/৪ জন পুরুষকে নকল হিজড়া বানিয়ে তাদেরকে দিয়ে নিয়মিত চাঁদাবাজি করছে এবং সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করছে। উপহার হিসেবে হিজড়াদের জন্য নির্মান করা সরকারি আবাসনকে অগ্রাহ্য করে মুন্নি হিজড়াসহ ৪/৫ জন মিয়ে গড়ের গাঁও মোড়ে বাসা ভাড়া নিয়ে নিয়মিত চাঁদাবাজি ও সহজ সরল হিজড়াদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছে। এমতাবস্থায় জনস্বার্থে ও সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় মুন্নি হিজড়া ও তার অনুসারী কথিত হিজড়াদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও মানুষের সাথে লজ্জাজনক আচরন বন্ধের দাবী জানান বক্তারা।