জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে চিকাজানি ইউনিয়নের চর-ডাকাতিয়াপাড়া এলাকায় দীর্ঘ দিন থেকে পারাপারে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে দুই পাড়ের মানুষ। চিকাজানি ইউনিয়নের মণ্ডলবাজার থেকে চর ডাকাতিয়াপাড়া যাওয়ার মাত্র একটি রাস্তা। রাস্তার মাঝে যমুনা নদী থাকায় ২০০৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর একটি সংযোগ ব্রিজ নির্মাণ করে দেয়। এতে দুই পাড়ের মানুষের পারাপার যাতায়াতের সময় অনেকটায় কমে আছে সাধারণ মানুষের। নির্মাণের কিছু দিন পরেই ব্রিজের দুই পাশের রাস্তা বিকল হয়ে পড়ে। প্রায় ১২ বছর ধরে জনসাধারণের কোনো কাজে আসছে না বিকল হয়ে পড়া ব্রিজটি। ব্রিজটি সংস্কার না করায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষ মানুষ নৌকায় অথবা অন্যত্র ঘুরে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে। সবথেকে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীদের। সমস্যা দীর্ঘ দিন অব্যাহত থাকায় বাধ্য হয়ে নিজেদের বসতভিটা পরিবর্তন করছেন অনেকে। অন্যত্র চলে যাওয়ার পরেও বর্তমানে এখানে বসবাস করছেন প্রায় ৮ হাজার মানুষ।
অসহায়দের জন্য সরকারের আবাস্থল গুচ্ছু গ্রামের মানুষদেরও একই পথে যাতায়াত করতে হচ্ছে। খানিকটা বাধ্য হয়েই পারাপার করছেন তারা। ব্রিজ নির্মাণের পর ব্রিজের দু’পাশে ২০০ মিটার করে মাটি ভরাট করার কথা থাকলেও মাটি ভরাট করা হয়নি। চলাচলের বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় ব্রিজের নিচ দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় চলাচল করছে এলাকাবাসী।
এতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বিভিন্ন বয়সি মানুষ। মৌসুমি ফসল ঘরে আনতে হিমশিম ক্ষেতে হয়। পারাপারের অসুবিধার জন্য ফসল স্বল্পমূল্যে অন্যত্র বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। বর্তমানে শীতের সবজি বাজারে বেশি দামে বিক্রি হলেও এখানে অল্প দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিবহনের কারণে এখানে কোনো ক্রেতার দেখা পাওয়া যায় না। কৃষক অন্য বাজারে নিয়ে যে বিক্রি করবে সেই সুযোগও নেই।
উপজেলা প্রকৌশলী অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের খালের ওপর ২০০৮ সালে সেতুটি নির্মিত হয়। নির্মাণের দুই বছর পর সেতুর উইং ওয়াল ও এর পাশের মাটি বন্যায় ভেঙে গেলেও এ পর্যন্ত সংস্কার করা হয়নি। ফলে এ রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। এই ব্রিজটি মূলত জামালপুরের প্রকল্পের একটি ব্রিজ।
স্কুলগামী আডিয়া শিশু অ্যাকাডেমি ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী শারমিন জানান, আমি ছোট থেকেই ব্রিজটি এমন দেখেই আসছি। অনেক বার শুনেছি ব্রিজটি সস্কার করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটি করা হয়নি। আমিসহ আমার বান্ধবীরা এই পথ দিয়ে চলাচল করি। প্রতিদিন আমাদের এই যায়গাটিতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। নৌকা দিয়ে আমরা পারাপার হই। যদি আমাদের নৌকা দিয়েই পারাপার হতে হয় তাহলে এই ব্রিজের কি প্রয়োজন।
আডিয়াল শিশু অ্যাকাডেমি দশম শ্রেণীর ছাত্র মো. আনার আলী বলেন, ব্রিজটির দুই পাশের রাস্তা বিকল থাকায় আমাদের প্রতিদিন নৌকায় পারাপার হতে হয়। বর্তমানে নৌকা ভাড়া ৫ টাকা দিতে হচ্ছে আমার বন্যার সময় এই ভাড়া বৃদ্ধি হয়ে ১০ টাকায় চলে যায়।
ভুক্তভুগি পশ্চিম কাজলা পাড়ার বাশিন্দা মোছা. শহিতন, গুচ্ছু গ্রামের বাশিন্দা উমর ফারুক ও হাসমত বলেন, নদী ভাঙ্গনের পর আমরা এখানে বসবাস শুরু করি। কিন্তু চলাচলের রাস্তা না থাকায় আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। আমাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হয়। যার কারণে আমাদের কম দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। তাই আমরা ব্রিজটির পাশের রাস্তার দ্রুত মেরামত চাই।
চিকাজানী ইউপি চেয়ারম্যান মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার আগ থেকেই ব্রিজটি বিকল অবস্থায় পড়ে আছে। ব্রিজটির কারণে পশ্চিম কাজলাপাড়াসহ গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছে প্রায় ৮ শত পরিবার।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ জানান, ব্রিজটি মূলত আমাদের এলজিইডি করেনি। এলজিইডি নির্মিত ব্রিজ কোনো সমস্যা হলে আমরা দ্রুত সেটি মেরামতের চেষ্টা করি। মূলত এই ব্রিজটি একটি প্রকল্পের আওতায় তৈরি হয়েছিল। তাই আমাদের দফতরের এই ব্রিজের মেরামতের সুযোগ নেই। তবুও কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ব্রিজটি মেরামতের চেষ্টা করব।
#অধিকার