আমন ও বোরো আবাদের মাঝে দেশে প্রায় আবাদযোগ্য ২২ লাখ হেক্টর জমি পতিত থাকে। এসব পতিত জমিতে বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত স্বল্প জীবনকালীণ বিনা সরিষা-৪ ও বিনা সরিষা-৯ আবাদ করা গেলে ভোজ্যতেলের ওপর আমদানি নির্ভরতা যেমন কমবে, তেমনি বছরে প্রায় ১৭ হজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। এজন্য সারাদেশে তেলজাতীয় ফসলের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)। এরই ধারাবাহিকতায় শেরপুর জেলায় বিনা উদ্ভাবিত তেলজাতীয় ফসল সরিষা, তিল, চীনাবাদামের জাত পরিচিতি, চাষাবাদ পদ্ধতি এবং বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ বিষয়ক এক কৃষক প্রশিক্ষন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নালিতাবাড়ী বিনা উপকেন্দ্রের প্রশিক্ষণ হলে বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে অনুষ্ঠিত কৃষক প্রশিক্ষণে ভার্চূয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি বিনা মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম ও বিশেষ অতিথি উপ-প্রকল্প পরিচালক উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড, রেজা মোহাম্মদ ইমন বক্তব্য রাখেন। বিনা নালিতাবাড়ী উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড, মাহবুবুল আমল তরফদার-এর সভাপতিত্বে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলমগীর কবির, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফয়সলা আহম্মেদ, ফার্ম ম্যানেজার শফিকুজ্জামান প্রমুখ প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এতে নালিতাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৭৫ জন কৃষক-কৃষানী অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষন পেয়ে কৃষক-কৃষনীরা উপকৃত হওয়ার কথা জানান।
বিনা মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, কৃষকদেরকে এখন আধুনিক প্রযুক্তি ও কর্মকৌশল প্রয়োগ করতে হবে। নিজের বীজ নিজেকেই উৎপাদন ও সংরক্ষণ করতে হবে। তবেই কৃষকরা ফসল আবাদ করে লাবজনক হতে পারবেন। তিনি বলেন, বিনা সরিষা ৪ ও ৯ খুব ভালো জাত। আমন ও বোরোর মাঝে মাত্র ৮৫ দিনে এসব সরিষা ঘরে তোলা যায়। সবাইকে সরিষার তেল খাওয়ার আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, এখন বাজারে যেসব সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে, তার বেশীরভাগই ভেজাল। এজন্য ক্যান্সার, কিডনি, লিভার, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ সহ মানুষের নানা জটিলতা বাড়ছে। পক্ষান্তরে সরিষার তেল শরীরের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ, চর্মরোগ প্রতিরোধ সহ আরো অনেক কাজে প্রয়োজনীয়। প্রায় ৩০০ বছর ধরে আমাদের দেশের মানুষ সরিষার তেল ব্যবহার করে আসছে। সয়াবিন এসেছে মাত্র ২৫/৩০ বছর ধরে। প্রতিদিন ৪/৫ জনের একটি পরিবারে প্রায় ১০০ গ্রাম তেল লাগে। মাসে প্রয়োজন হয় ৪/৫ লিটার। এই তেল নিজেরাই সরিষার আবাদ করে খাঁটি তেল খেতে পারি।
বিনা নালিতাবাড়ী উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহবুবুল আলম তরফদার জানান, বিনা উদ্ভাবিত সরিষার জাতগুলো মাত্র ৮৫ দিনে ফলন ঘরে তোলা যায়। ফলনও হেক্টর প্রতি প্রায় আড়াই টন হয়ে থাকে। এতে তেলের পরিমাণ শতকরা ৪২ ভাগ হয়ে থাকে। আমন ও বোরো মৌসুমে বিনা উদ্ভাবিত স্বল্প জীবনকালীণ জাতের ধান আবাদ করে স্বল্পজীবনকালের বিনা সরিষা আবাদ করলে দুই ফসলি জমি তিন ফসলি এবং তিন ফসলি জমি চার ফসলিতে পরিণত করা যায়। এতে ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণের সাথে সাথে কৃষকরা আর্থিকভাবেও লাভবান হবেন।
‘
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর ভোজ্য তেলের মোট চাহিদার পরিমাণ ২৪ লক্ষ মেট্রিক টন। তন্ম্রধ্যে দেশে উৎপাদিন সরিষা থেকে মেলে ৫ লাখ মে.টন। এজন্য ভোজ্য তেলের ঘাটতি মেটাতে প্রতিবছর ৩ লাখ মে.টন সয়াবিন ও ১২ লাখ .েটন পামঅয়েল আমদানি করতে হয়। যাতে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়।