রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ। প্রথম দিনে সফরকারীদের স্কোর ৮০ ওভারে ৭ উইকেটে ২২৫।
চাপের মধ্যে চমৎকার এক ইনিংস খেললেন মোহাম্মদ মিঠুন। টপ অর্ডারের ব্যর্থতার পর মিডল অর্ডারও সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। সেই জায়গায় সময় উপযোগী ব্যাটিংয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মিঠুন।
পাকিস্তানে যাওয়ার আগে মধ্যাঞ্চলের হয়ে ৮৩ রানের ইনিংস খেলে প্রস্তুতি সেরেছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। রাওয়ালপিন্ডিতে পারফরম্যান্সের ধারা সচল রেখে আরেকটি ৫০ ছাড়ানো ইনিংস খেললেন।
তাইজুলকে নিয়ে মিঠুনের লড়াই
প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদের আর কেউ নেই। মোহাম্মদ মিঠুনই শেষ ভরসা। লড়াই চালিয়ে যাওয়া এই ব্যাটসম্যানকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছেন তাইজুল ইসলাম। মূলত স্পিনার হলেও লোয়ার অর্ডারে ব্যাটটা ভালোই করতে পারেন তাইজুল। পাকিস্তানি বোলারদের বেশ ভালোভাবেই সামলাচ্ছেন তিনি।
মিঠুন-তাইজুলের ব্যাটে চা বিরতির পর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় সেশন ভালো কাটেনি বাংলাদেশের
প্রথম সেশনে হারিয়েছিল ৩ উইকেট। দ্বিতীয় সেশনেও তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাতে প্রথম দিনের চা বিরতিতে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের নেই ৬ উইকেট। লিটন দাস ও মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিলেও হতাশায় কেটেছে আরেকটি সেশন। চা বিরতিতে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের স্কোর ৬৩ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭২। অপরাজিত আছেন মিঠুন (৩০*) ও তাইজুল ইসলাম (১*)।
মিঠুনের ক্যাচ ছাড়লেও লিটনকে ফেরালেন হারিস
লাঞ্চের পর মাঠে নেমে দুটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ১০৭ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে মাহমুদউল্লাহ ফেরার পর ৫০ ছাড়ানো জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন লিটন দাস ও মোহাম্মদ মিঠুন। আগের ওভারেই ইয়াসির শাহের বলে ২২ রানে মিঠুনের সহজ ক্যাচ ছাড়া হারিস সোহেল বল হাতে নেন ৫৫তম ওভারে। ওই আক্ষেপ তিনি মেটালেন প্রথম ওভারেই উইকেট নিয়ে।
খণ্ডকালীন বাঁহাতি স্পিনারের প্রথম ওভারেই ভাঙে প্রতিরোধ গড়া জুটি। লিটন পড়েন এলবিডাব্লিউর ফাঁদে। আম্পায়ার হারিসের আবেদনে সাড়া না দিলেও ম্যাচের দ্বিতীয় রিভিউ নিয়ে সফল হয় স্বাগতিকরা, ভাঙে ৫৪ রানের জুটি। ৪৬ বলে ৭ চারে ৩৩ রান করেন বাংলাদেশের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান।
আসাদের দুর্দান্ত ক্যাচে মাঠছাড়া মাহমুদউল্লাহ
দ্বিতীয় সেশনের শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। নাজমুল হোসেনের পর আরেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ ফেরেন প্যাভিলিয়নে। দলীয় স্কোর একশ’র ঘরে নেওয়ার পর আউট তিনি। শাহীনের বলে থার্ড স্লিপে থাকা আসাদ শফিক ডানদিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন। ৪৮ বলে চারটি চারে ২৫ রানে থামেন মাহমুদউল্লাহ।
লাঞ্চের পর নেমেই আউট নাজমুল
নাজমুল হোসেন প্রথম ফিফটি থেকে আর ৬ রান দূরে ছিলেন। ৪৪ রান করে প্রথম সেশন শেষ করেন তিনি। লাঞ্চ বিরতির পর ক্রিজে নেমে আর কোনও রান যোগ করতে পারেননি। দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ওভারের শেষ বলে মোহাম্মদ আব্বাসের শিকার নাজমুল। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ইনিংসটি ছিল ১১০ বলের। উইকেটকিপার মোহাম্মদ রিজওয়ানের গ্লাভসে ধরা পড়েন তিনি।
প্রথম সেশনের শুরুটা পাকিস্তানের, শেষটা বাংলাদেশের
সাইফ হাসান ও তামিম ইকবাল বিদায় নেন প্রথম ১০ বলেই। ৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন মুমিনুল হক। তাকে উপযুক্ত সঙ্গ দেন নাজমুল হোসেন। মুমিনুল ফিরে গেলেও নাজমুল দাঁত কামড়ে পড়ে ছিলেন ক্রিজে। প্রথম হাফসেঞ্চুরি থেকে ৬ রান দূরে থাকতে লাঞ্চে যান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, ১০৪ বলে ৬ চারে ৪৪ রান ছিল তার। অন্য প্রান্তে ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ।
প্রথম সেশনের শুরুটা ছিল পাকিস্তানের। শাহীন শাহ আফ্রিদি বলে আসাদ শফিককে ক্যাচ দেন সাইফ হাসান। মাত্র ২ বল খেলে ‘ডাক’ মারেন তিনি। অথচ ম্যাচটা তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ছিল। পরের ওভারে তামিমও আউট হন। মোহাম্মদ আব্বাসের এলবিডাব্লিউর আবেদনে আম্পায়ার নাইজেল ডি লং সাড়া না দিলে পাকিস্তান রিভিউ নেয়। গত সপ্তাহে পূর্বাঞ্চলের হয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে অপরাজিত ৩৩৪ রান করা তামিম মাত্র ৩ রানে বিদায় নেন।
দুই ওপেনারকে হারিয়ে বিপদে পড়া বাংলাদেশকে উদ্ধার করেন মুমিনুল ও নাজমুল। ৫০ ছাড়ানো জুটিতে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল সফরকারীরা। কিন্তু শাহীন তাদের বিচ্ছিন্ন করেন। ৫৯ রানের জুটি গড়ে উইকেটকিপার মোহাম্মদ রিজওয়ানের গ্লাভসবন্দী হন মুমিনুল। ৫৯ বলে ৫ চারে ৩০ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এরপর নাজমুলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। ৩ উইকেটে ৯৫ রানে লাঞ্চে যায় সফরকারীরা।
বাংলাদেশ একাদশ: মুমিনুল হক (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ, লিটন দাস (উইকেটকিপার), তাইজুল ইসলাম, রুবেল হোসেন, আবু জায়েদ, ইবাদত হোসেন।
পাকিস্তান একাদশ: আজহার আলী (অধিনায়ক), শান মাসুদ, আবিদ আলী, বাবর আজম, হারিস সোহেল, আসাদ শফিক, মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেটকিপার), ইয়াসির শাহ, মোহাম্মদ আব্বাস, নাসিম শাহ, শাহীন আফ্রিদি।