ভাঙা ঢেউটিন আর পুরনো কাপড় দিয়ে মোড়ানো নড়বড়ে এ ঝুপড়ি ঘরটিতে মানবেতর দিন কাটছে বৃদ্ধা ফুলেছা বানুর। রোগে শোকে ক্লান্ত তিনি। কানে শোনেন না, সানি পড়ায় চোখেও কম দেখেন। চলেন লাঠিতে ভর করে। বয়স হয়েছে প্রায় ৭৫ বছর।
ফুলেছা বানু শেরপুর পৌর শহরের মোবারকপুর মহল্লার মৃত আফছর আলীর স্ত্রী। প্রায় ৩০ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন। আগে অন্যের বাড়িতে কাজ করলেও বয়সের ভারে এখন আর পারেননা। হতদরিদ্র এই বিধবা শেষ জীবনে একটু স্বচ্ছলতার আশায় ধরনা দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে। চেয়েছেন একটি সরকারি ভাতার কার্ড। আশ্বাস অনেকবার মিললেও, ভাগ্যে জোটেনি ভাতার কোন কার্ড বা মাথা গোঁজার মতো একটা ঘর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঝুপড়ি ঘরটির সামনে বস্তার চটের উপর শুয়ে আছেন ফুলেছা বানু। ঝুপড়ির একদিকে রান্নার জন্য কিছু লাকড়ি আর অন্যদিকে থাকার বিছানা। বৃষ্টি আসা মাত্রই সবকিছু ভিজে যায়। ফুলেছা বানুর শরীরের চামড়া কুঁচ ধরে গেছে। পড়ে গেছে মাথার চুল। ছানি পড়ায় বাম চোখ দিয়ে অবিরত পানি ঝরছে। বর্তমানে মানবেতরদিন কাটছে তার।
কান্না জড়িত কণ্ঠে ফুলেছা বানু বলেন, আমার খোঁজখবর নিয়ে কি অইবো বাপু। সবকিছু আরাই ফেলাইছি। মাও, বাপ, ভাই, বোন, স্বামী সবাই মইরা গেছেগা। পুলাডা ছোডবেলা ঢাহা গেছেগা এখন আর দেশে আহেনা। আমার কিছুই নাই, তাই পুরিডারেও জামাই ছাইড়া দিছে। আগে কামকাজ করে খাইতাম, এহন আর চোহে দেহিনা। পাওডাও ভাইঙা গেছেগা। মাইনষে দিলে খাই না দিলে অমনিই থাহি। এডা ঘরও নাই, মেঘ আইলে সব ভিইজ্জা যা। সরকারের কাছে আমি এডা ঘর আরেডা টাহার কাট চাই।
প্রতিবেশী ফজল আলি বলেন, ফুলেছা বানু আমাদের এখানে সবচেয়ে বয়স্ক মহিলা। কয়েক বছর আগে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে গেছে। খুব অভাবে দিন কাটছে তার। একমাত্র মেয়েটিও স্বামীর ঘর থেকে ফিরে এসেছে। মেয়েটি বিভিন্ন বাড়ি থেকে কাজ করে চেয়ে খাবার এন দেয় তার মাকে। তারমধ্যে তাদের থাকার কোন ঘর নেই। যে ছাপড়াটি আছে তাতে বৃষ্টি আসার আগেই ভিতরে পানি পড়ে।
মেয়ে মুমিনা আক্তার বলেন ক্ষোভের সাথে বলেন, আর কত কষ্ট হলে সরকারি সুবিধা পাবেন আমার মা। বয়স তো কম হয়নি। এখন ঠিকমত চলতেও পারেন না। অথচ একটা বয়স্ক ভাতা কার্ড, বিধবা ভাতা কার্ড বা সরকারি যে কোনো সুবিধা আজও পাইনি আমরা। এলাকার কাউন্সিলর-মহিলা কাউন্সিলরদের কাছে গেলেও কোনো লাভ হয়নি। দেখবো, শুধু এটুকু বলেই কাজ শেষ তাদের।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক আরিফুর রহমান আকিব বলেন, ফুলেছা বানু মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। যে ঝুপরি ঘরটিতে তিনি বাস করছেন যে কোনো সময় ঝড়-তুফানে সেটি উড়ে যেতে পারে। আর বাইরে বৃষ্টি পড়ার আগে তার ঘরে পানি পড়ে। এ অসহায় বৃদ্ধা কোনো সরকারি ত্রাণ বা কোনো বয়স্ক ভাতা বা বিধবা ভাতার আওতায়ও আসেননি। আমরা সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করছি, তাকে দ্রুত সরকারি ভাতার একটি কার্ড এবং নিরাপদভাবে থাকার মতো সরকারি একটি ঘর করে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেন।
এ বিষয়ে শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন বলেন, শতভাগ ভাতার আওতায় শেরপুর। যারা সরকারি ভাতা থেকে বাদ পরেছে, আবেদন করলে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।