
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি যে রোগের প্রাদুর্ভাব ও দেশের আলোচিত স্বাস্থ্য সমস্যা তা এই চিকুনগুনিয়া রোগ৷ এটি এখনও মহামারীর পর্যায়ে না গেলেও তার কাছাকাছি বিরাজ করছে৷ অাসুন জেনে নেই এই রোগ সম্পর্কে-
চিকুনগুনিয়াঃ
চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা মানুষের শরীরে উচ্চ মাত্রায় জ্বর ও তীব্র শরীর ব্যাথা সহ প্রকাশ পায়। চিকুনগুনিয়া ভাইরাস টোগাভাইরিডি পরিবারের আলফাভাইরাস গণের অন্তর্ভুক্ত একটি RNA ভাইরাস।
এটি একটি বাহক দ্বারা বিস্তারিত রোগ। এর বাহক হলো মশা। এডিস অ্যালবোপিকটাস ও এডিস এজিপটি নামক ভাইরাসবাহী স্ত্রী মশার কামড়ে মানুষের মধ্যে এই রোগটি হয়। ডেঙ্গুর জীবাণু বহনের জন্যও এই মশাকে দায়ী করা হয়।
লক্ষণসমূহঃ
সংক্রামক মশা কামড়ানোর চার থেকে সাত দিনের মধ্যে দেহে চিকুনগুনিয়ার উপসর্গ দেখা যায়।
§ আকস্মিকভাবে তীব্র জ্বর (১০৪° ফারেনহাইট) ।
§ মাথা ব্যথা।
§ মাংস পেশিতে ব্যথা।
§ শরীরের অস্থি সন্ধিতে ব্যথা যা অনেক তীব্র ও কয়েকদিন স্থায়ী হয়৷ এমনকি জ্বর সেরে যাওয়ার পরও বেদনা থাকতে পারে। বেদনার স্থিতিকাল কয়েকমাসও হতে পারে।
§ দুর্বলতা ও ক্লান্তি।
§ বমি বমি ভাব, খাবারে অরুচি।
§ ত্বকে র্যাস। এই র্যাস দেখতে কিছুটা হামের মত। জ্বরের পূর্বে, জ্বর থাকাকালীন দিনে কিংবা জ্বরের পরেও ত্বকে র্যাস হতে পারে ।
ডেঙ্গুর সাথে চিকুনগুনিয়ার উপসর্গে মিল থাকায় এটিকে ডেঙ্গু বলে ভুল হতে পারে।
ভাবিফল
§ অধিকাংশ চিকুনগুনিয়া রোগীই পুরোপুরি সেরে উঠেন। সাধারণত দুই থেকে তিন দিনেই রোগী সুস্থ হতে শুরু করে।
§ অস্থি সন্ধির ব্যথা কয়েক মাস এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
§ কিছু ক্ষেত্রে চোখ, হৃদপিণ্ড, স্নায়ুতন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রের সমস্যার ঘটনাও ঘটতে পারে।
§ খুব কম ক্ষেত্রেই চিকুনগুনিয়া মৃত্যুর কারণ হয়৷
§ আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে পাঁচ থেকে সাত দিন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস থাকে। এ সময়ের মধ্যে রোগীকে মশা কামড়ালে সেটিও ভাইরাসে আক্রান্ত হয় ও ভাইরাসটি ছড়ায়।
রোগ নির্ণয়ঃ
লক্ষণ ও ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয়। ল্চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ পাওয়া গেলে চিকুনগুনিয়া নির্ণয় ও পার্থক্যকরণ পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। চিকুনগুনিয়া নির্ণয়ের বেশ কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। রক্তের সিরামে ইমিউনোগ্লোবিউলিন এম এবং ইমিউনোগ্লোবিউলিন এম অ্যান্টি-চিকুনগুনিয়া অ্যান্টিবডির উপস্থিতিই চিকুনগুনিয়ার প্রমাণ।
চিকিৎসাঃ
এ সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার পাশাপাশি লেবুর শরবত, গ্লুকোজ, স্যালাইন ইত্যাদি পান করতে হবে। পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
চিকুনগুনিয়ার কোন সুনির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। এই রোগের বিশেষ কোনো ওষুধ বা টিকা নেই। একটানা তিন দিন জ্বর ও জয়েন্টে প্রচণ্ড ব্যথা থাকলে এমবিবিএস চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে । ঔষধ হিসেবে সাধারণত লক্ষণ অনুযায়ী জ্বর ও বেদনা নাশক ঔষধ এবং অন্যান্য লক্ষণ ভিত্তিক ঔষধ প্রদান করা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য চিকুনগুনিয়া জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে কোনো উপকার নেই।
জ্বর পরবর্তী জয়েন্টে বেদনা থাকলে একজন এমবিবিএস চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে। কখনোই নিজে নিজে বা পল্লী চিকিৎসকের/ঔষধ বিক্রেতার নিকট থেকে ব্যাথার ঔষধ সেবন করা যাবে না।
প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে যা করনীয়ঃ
* চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে এর বাহক মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে।
* কনটেইনারে জমে থাকা পানিতে মশা বংশ বিস্তার করে। তাই খোলা কনটেইনারে যেন পানি না জমে থাকে সে ব্যাপারে নজর রাখতে হবে।
এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডাঃ আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম