শেরপুরে সড়ক যোগাযোগ ও সেতু খাতে বৈপ্লবিক ও নজরকাড়া উন্নয়ন হয়েছে। নজরকাড়া ওইসব উন্নয়নে জেলায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অধিকতর সহজ, নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও উন্নততর হয়ে উঠেছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে এলাকার জমি-জমার মূল্যসহ অধিবাসীদের কর্মসংস্থান। কৃষিসহ আর্থ-সামাজিক অবস্থার হয়েছে পরিবর্তন। পাল্টে গেছে মানুষের জীবনমান। অন্যদিকে সহজতর যোগাযোগ ব্যবস্থায় সীমান্তের গারো পাহাড়সহ শেরপুর অঞ্চলের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় এলাকায় বেড়েছে পর্যটকদের যাতায়াত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের উন্নয়ন অভিযাত্রার এক দশকে সড়ক ও জনপথ (সওজ), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি), জেলা পরিষদ ও শেরপুর পৌরসভাসহ চারটি পৌরসভার অধীনে উন্নয়নের চিত্র পর্যালোচনায় পাওয়া গেছে ওই তথ্য।
জানা যায়, জেলায় সওজ, এলজিইডি, জেলা পরিষদ ও চারটি পৌরসভার অধীনে গত ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এক দশকের সময়কালে সরকারের সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় সড়ক যোগাযোগ ও সেতু খাতেই ব্যয় হয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল সওজ বিভাগের অধীনে প্রায় ৮২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৮ শ’ মিটারের সর্বমোট ২২০টি বড় ও মাঝারি ব্রিজ নির্মাণ এবং নকলা-নালিতাবাড়ী নাকুগাঁও স্থলবন্দর সড়ক উন্নয়নের মেগা প্রকল্পসহ প্রায় ১১৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহমেদ ওই তথ্য জানিয়ে বলেন, ওইসব প্রকল্পের মধ্যে ২৩৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৮.৯০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নকলা-নালিতাবাড়ী-নাকুগাও স্থলবন্দর সড়ক ২ লেনে প্রশস্ত করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় সড়কের দুপাশের ভূমি অধিগ্রহণ ও সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি বড় ও মাঝারি ব্রিজ-কালভার্ট। একই সময়ে ৮১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সীমান্ত সড়কের শেরপুর অংশে প্রশস্ত করা হয়েছে। ৬৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৪.৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বনগাঁও-নন্নী সড়ক প্রশস্ত ও মজবুতিকরণ হয়েছে। ১১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০.১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে শেরপুর-নকলা-ফুলপুর-ময়মনসিংহ সড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার দুটি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২.৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে শেরপুর-শ্রীবরদী-বকশীগঞ্জ সড়ক প্রশস্তকরণ, ৬৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩.৮২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বনগাঁও-নন্নী-হাতিপাগার সড়ক উন্নয়ন করা হয়েছে। প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নালিতাবাড়ী-পাপিয়াঝুড়ি সড়ক উন্নয়ন, ৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নকলা-শিববাড়ী সড়ক উন্নয়ন, নকলা-সীমান্ত সড়কের ভোগাই নদীর ওপর ১৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৮৬ মিটার দৈর্ঘ্যরে ভোগাই সেতু ও ৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৭ মিটার দৈর্ঘ্যরে বগাডুবি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। অন্যদিকে ১৩৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৪.৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে জামালপুর-শেরপুর-বনগাঁও সড়ক প্রশস্ত ও মজবুতিকরণ এবং ৪৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১১.৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নকলা বাইপাস সড়ক প্রশস্ত ও মজবুতিকরণসহ ৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৩ মিটার দৈর্ঘ্যরে দুগধা সেতু নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। তাছাড়া ৮২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৪.৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে শেরপুর (আখেরমামুদের বাজার)-লঙ্গরপাড়া-শ্রীবরদী-মামদামারী জেলা সড়ক, ৪৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২.৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে কানাশাখোলা-অষ্টমীতলা সংযোগ সড়ক, ৪১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নালিতাবাড়ী-বড়–য়াজানি-বাঘাইতলা-হালুয়াঘাট সড়ক, ৪৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৯.৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে শ্রীবরদী-ভায়াডাঙ্গা-ঝিনাইগাতী সড়ক, ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২.৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে জুলগাও-ঝিনাইগাতী-সন্ধ্যাকুড়া সড়ক, ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১.৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বনগাঁও-নালিতাবাড়ী সড়ক এবং ২৫৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহ (রঘুরামপুর)-ফুলপুর-নকলা-শেরপুর (আর-৩৩১) আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়নে পৃথক ও বৃহৎ সাতটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ওইসব প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে শেরপুরে সড়ক বিভাগের আওতায় উন্নয়ন ক্ষেত্রে আরও বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে।
এদিকে, স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) সূত্র জানায়, এলজিইডির অধীনে এক দশকে প্রায় ৭ শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ৩২ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন, ৩ হাজার ৪১০ মিটার সেতু নির্মাণ, ২৬৭ কমপ্লেক্স/একাডেমিক ভবন নির্মাণ এবং ৬ হাজার হেক্টর জমির পানিসম্পদ উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। একইসঙ্গে জেলায় বর্তমানে ২ শ‘ ৪২ কিলোমিটার সড়ক, ৪১০ মিটার সেতু/কালভার্টসহ ২২ কমপ্লেক্স/একাডেমিক ভবন ও ১০ হাটবাজার নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণাধীন রয়েছে।