চলতি মাসে আত্মহত্যা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া মেহজাবিন স্বর্ণা। গত ২০ অক্টোবর সকালে সাতক্ষীরা জেলার পলাশপোল মধুমোল্লার ডাঙ্গী গ্রামের বাড়ি থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিকভাবে স্বর্ণার আত্মহত্যার পেছনে কোনো কারণ জানতে পারেনি পুলিশ। তবে মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর ছড়ানো হয়, অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে চাপ এবং অ্যাসাইনমেন্টে নম্বর কম দেওয়ায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে স্বর্ণা আত্মহত্যা করেছেন। এক্ষেত্রে ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আয়েশা সালেহকে অভিযুক্ত করা হয়।
তবে সেই শিক্ষিকা এ ঘটনায় তাকে জড়ানোকে ‘সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত ও ভুল’ বলে দাবি করেছেন। বিভাগের শিক্ষার্থীদেরও বক্তব্য, আয়েশা সালেহ শিক্ষক হিসেবে ‘বন্ধুসুলভ’। স্বর্ণার মরদেহ উদ্ধারের পর কারণ খুঁজতে গিয়ে অতিরঞ্জিত করে আয়েশা সালেহকে ভুক্তভোগী বানানো হয়েছে।
স্বর্ণার আত্মহত্যার পর তার বোন সাদিয়া মেহজাবিন সাথী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘আর কত? আর কত? সবচেয়ে পরিশ্রমী, মেধাবী বাচ্চাটা সবচেয়ে কম নম্বর কী করে পায়? দুই মাস আগে জমাকৃত অ্যাসাইনমেন্ট কীভাবে হারিয়ে ফেলে? আর সেটা জমা দেওয়ার জন্য কীভাবে ৩০ মিনিট সময়কে যথার্থ মনে করা হয়? আমার বাইকার, স্পিকার, স্বতঃস্ফূর্ত বাবুটা কীভাবে নিশ্চুপ হয়ে গেলো? জবাব চাই।’
এই পোস্টের পাশাপাশি আরও কিছু স্ট্যাটাসে দাবি করা হয়, স্বর্ণা মানসিক চাপে আত্মহত্যা করেছে। কিছু পোস্টে কোনো সূত্র ছাড়াই ঢালাওভাবে আয়েশা সালেহকে সরাসরি বা ইঙ্গিত করে অভিযুক্ত করা হয়। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ওই শিক্ষিকা।
এ নিয়ে আলোচনা শুরু হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরেকটি পোস্ট দেন সাদিয়া মেহজাবিন সাথী। তিনি লেখেন, ‘আমার ও আমার পরিবারের কারও প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই। আমরা বাবুসোনার (স্বর্ণা) পরিণতির জন্য কাউকে দায়ী করছি না। আমরা সরাসরি কোনো ম্যামের নাম বলিনি, তাও আয়েশা সালেহ ম্যামের নাম ছড়িয়েছে। আমি ও আমার বাবা-মা এ কারণে আয়েশা সালেহ ম্যামের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’
এদিকে স্বর্ণার আত্মহত্যার ঘটনায় সহকারী অধ্যাপক আয়েশা সালেহের নাম জড়ানোর পর থেকেই ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে পোস্ট দিতে থাকেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বর্ণার একাধিক সতীর্থ বলেন, খাতা জমা দেওয়া নিয়ে ম্যাম স্বর্ণাকে কোনো চাপ দেননি। বরং পুনরায় খাতা জমা দেওয়ার জন্য সময় দিয়েছিলেন। সবাই সময় অনুযায়ী পুনরায় খাতার ফাইল পাঠিয়েছিল। চাপ প্রয়োগের বিষয়টি সত্য নয়। স্বর্ণা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হবে, এমন কিছু ম্যাম করেননি।
এ বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক আয়েশা সালেহ বলেন, ‘সুমাইয়া মেহজাবিন স্বর্ণার আত্মহত্যার ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে কিছু অনলাইন পোর্টালে ভিত্তিহীনভাবে রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর আমি নিজেই এক প্রকার মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি৷ রিপোর্টে দুই মাস আগে যে অ্যাসাইনমেন্টের কথা বলা হয়েছে, সেটি কোনো অ্যাসাইনমেন্ট ছিল না। সেটি ছিল ২০ মার্কের মিডটার্ম পরীক্ষার খাতা। পরীক্ষার খাতা জমা দেওয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় সব শিক্ষার্থীই ওই খাতা ক্যামস্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করে অথবা ছবি তুলে ফাইল অ্যাটাচ করে ইমেইলে পাঠিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘স্বর্ণাসহ কিছু শিক্ষার্থী শুধু ক্যামস্ক্যানার লিংক মেইল করে পাঠিয়েছিল, যা অনেকবার চেষ্টা করেও ওপেন করা সম্ভব হয়নি। খাতা হারানোর বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। যেহেতু মেইলের লিংক ওপেন হয়নি, তাই সিআরের (শ্রেণি প্রতিনিধি) মাধ্যমে সেসব শিক্ষার্থীকে পুনরায় খাতা ফাইল করে ৩ অক্টোবর রাতের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছিল। স্বর্ণাসহ সব শিক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ই পুনরায় ফাইল পাঠিয়েছিল। সেখানে স্বর্ণা ১০ নম্বরের একটিমাত্র প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ৮ নম্বর পেয়েছে, যা স্বাভাবিকভাবেই ভালো নম্বর হিসেবে ধরা হয়। ওই ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ৪ অক্টোবর। আর স্বর্ণা আত্মহত্যা করেছে ২০ অক্টোবর। সুতরাং অ্যাসাইনমেন্টের সঙ্গে আত্মহত্যার ঘটনাটিকে জড়ানো অমূলক।’
শিক্ষক হিসেবে স্বর্ণার আত্মহত্যার পেছনের মূল কারণ খুঁজে বের করতে তদন্তেরও দাবি জানান আয়েশা সালেহ।
#জাগো নিউজ