গত ফেব্রুয়ারির স্মৃতি আবারও ফিরে আসলো ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে। ফেব্রুয়ারিতে কারাবাও কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল চেলসি-লিভারপুল। ওই ম্যাচেও টাইব্রেকার হয়েছিল এবং ১১টি করে শট নিতে হয়েছিল দুই দলকে। শেষ পর্যন্ত জয়ী দলটি ছিল লিভারপুল।
এবার একই মাঠে এফএ কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হলো এই দুটি দলই এবং একই ঘটনার পূনরাবৃত্তি। টাইব্রেকারে ৬-৫ গোলের ব্যবধানে চেলসিকে হারিয়ে এফএ কাপের চ্যাম্পিয়ন হলো লিভারপুল। সে সঙ্গে কোয়াড্রাপল (চার শিরোপা) জয়ের সম্ভাবনাও টিকিয়ে রাখলো অল রেডরা।
নির্ধারিত সময় অমিমাংসিত থাকলো গোলশূন্যভাবে। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও কেউ গোল করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে বাজিমাত করেছে লিভারপুলই। এবার ১১টি করে নয়, শট নিতে হয়েছে ৭টি করে।
সপ্তম শটে গিয়ে সাডেন ডেথে গোল করলেন কনস্টান্টিনোস সিমিকাস। তার গোলের পরই শিরোপা জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে। একই সঙ্গে এই মৌসুমেই দুই ফাইনালে লিভারপুলের কাছে টাইব্রেকারে হারের হতাশায় নিমজ্জিত হয় চেলসি।
শুধু তাই নয়, এ নিয়ে টানা তিনটি এফএ কাপের ফাইনালে হারের হ্যাটট্রিক করলো চেলসি। ২০২০ সালে আর্সেনালের কাছে, ২০২১ সালে লেস্টার সিটির কাছে হারের পর এবার তারা হারলো লিভারপুলের কাছে। ২০০৬ সালে সর্বশেষ এফএ কাপ জিতেছিল লিভারপুল, ওয়েস্টহ্যামকে হারিয়ে। এরপর ২০১২ সালে ফাইনালে উঠলেও হেরেছিল চেলসির কাছে। এবার চেলসিকে হারিয়েই ৮ম বারের মত এফএ কাপ জিতলো অল রেডরা।
টাইব্র্রেকারে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, দুই দলেরই সেরা দুই ফুটবলার শট মিস করেছেন। লিভারপুলের সাদিও মানে এবং চেলসির ম্যাসন মাউন্ট। চেলসির সিজার আজপিলিকুয়েতাও মিস করেছিলেন। ৭ শটের মধ্যে দুটি মিস করে চেলসি, একটি মিস করে লিভারপুল। শেষ পর্যন্ত জয় হলো ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যদেরই।
ম্যাচের অষ্টম মিনিটেই গোলের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল লিভারপুল। ট্রেন্ট আলেকজান্ডার আর্নল্ডের কাছ থেকে বল পেয়ে লুইজ ডিয়াজ বলটি জড়িয়েই দিচ্ছিল চেলসির জালে। কিন্তু এডুয়ার্ডো মেন্ডি শেষ মুহূর্তে গোলটি বাঁচিয়ে দেন।
লিভারপুলের একের পর এক চাপের মুখে ২৩ মিনিটে চেলসিও কাউন্টার অ্যাটাকে সুযোগ পেয়েছিল গোল করার। ডান পাশ ধরে ম্যাসন মাউন্ট এবং রিস জেমস মিলে দারুণ ওয়ান টু ওয়ান খেলে বল নিয়ে এগিয়ে যান। শেষ মুহূর্তে ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিক বল পেয়ে গোলের দারুণ সুযোগ তৈরি করে নিয়েছিলেন। কিন্তু গোল করতে পারেননি।
এর একটু পর আবারও গোলের সুযোগ তৈরি করে চেলসি। পুলিসিকের পাস থেকে বল পেয়ে যান মার্কোস আলোনসো। কিন্তু তার শট শেষ মুহূর্তে সেভ করেন লিভারপুল গোলরক্ষক অ্যালিসন।
৩৩ মিনিটে লিভারপুল সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি খেলো। ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল দলটির সেরা তারকা মোহাম্মদ সালাহকে। এ সময় তার পরিবর্তে মাঠে নামানো হয় দিয়েগো জোতাকে।
প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার খানিক আগে দিয়েগো জোতা গোলের দারুণ এক সুযোগ মিস করেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে দুর্দান্ত গতির ফুটবল খেলতে থাকে চেলসি। এরই মধ্যে পুলসিকের একটি শট ঠেকান অ্যালিসন। মার্কোস আলোনসোর একটি ফ্রি-কিক ফিরে আসে ক্রসবারে লেগে।
দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই কিছু হাফ-চান্স তৈরি করে। কিন্তু গোলের পূর্ণ সুযোগ কেউ কাজে লাগাতে পারেনি। শেষ দিকে লিভারপুল গোল করার দারুণ একটি সুযোগ হাতছাড়া হয়। পরিবর্তিত খেলোয়াড় জেমস মিলনার ক্রস পেয়ে যান অ্যান্ডি রবার্টসন। তার শট চেলসির ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে।
অতিরিক্ত সময়ের খেলায় লিভারপুল আরও একটি বড় ধাক্কা খায়। ডিফেন্ডার ভিরজিল ফন ডাইক সালাহর মত ইনজুরির শিকার হয়ে মাঠ ছেড়ে যান। তার পরিবর্তে মাঠে নামেন হোয়েল মাতিপ। কিন্তু তাতেও কোনো সমস্যা হয়নি। ১২০ মিনিট পর্যন্ত কেউ কারো জালে বল জড়াতে পারেননি।